
উপন্যাস: ফিরে আসা ছায়া
রায়হানের মাথায় এখন অসংখ্য প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।
আয়নার মধ্যে দেখা সায়রা কি বাস্তব, নাকি তার মনেই এক ভ্রান্তি?
সে জানে, সত্য খোঁজার পথে যেনো একটি বিশাল জাল বিছানো আছে স্মৃতির জাল, যা একবার আটকে গেলে ফিরে যাওয়া কঠিন।
সকালের আলো ফোটার আগেই রায়হান বেরিয়ে পড়ল।
তার উদ্দেশ্য ছিল পুরনো তাসনিম হোসেনের বাড়ি।
কেউ জানত না সে আজ সেখানে যাবে।
সেখানে হয়তো মিলবে অনেক খোঁজ, অনেক উত্তর।
ঢাকার পুরান পাড়া।
ঝুপড়ি ঘর, সংকীর্ণ রাস্তা, আর ঘন সবুজ পাতার আড়ালে গোপন কাহিনী।
রায়হান বাড়িটির দরজায় টোকা দিল।
দরজা খুলল এক বৃদ্ধা মহিলা।
তার চোখে ছিল সময়ের ছাপ, মুখে অজানা চিন্তার রেখা।
“আমি... তাসনিম হোসেনের সাথে পরিচিত ছিলেন?”
রায়হান জিজ্ঞেস করল।
বৃদ্ধা একটু নীরবতা বজায় রেখে বলল,
“তাসনিম? ও কি আর জীবিত? ওর কথা না কর, ছেলেটা সেই রায়হানের কথা বলছি তাই যেন আজও বেঁচে থাকে।”
রায়হানের চোখ বড় হয়ে গেল।
“তুমি কে?” বৃদ্ধা জিজ্ঞেস করল।
“আমি রায়হান। আমি জানতে চাই তাসনিমের সঙ্গে কী ঘটেছিল।”
বৃদ্ধা নিঃশ্বাস ফেলল, তারপর পুরনো কল্পনার মতো কথা বলতে লাগল
“তাসনিম ছিল একজন বিশেষ মেয়ে,
সে শুধু পড়াশোনা করত না,
সে শহরের গোপন সত্য গুলো খুঁজে বের করার চেষ্টা করত।
সে বলত, ‘এই শহর আমার ছায়া, আর ছায়ার পিছনে অন্ধকার।’”
“একদিন সে এক গোপন কাগজ পায়, যেখানে ছিল সেই ‘ডেভিল হাউজের’ সব রহস্য।
সে সেই কাগজ নিয়ে চলে যায়, কিন্তু... আর ফিরে আসে না।”
রায়হানের মনে হলো, সেদিন রাতেই তাসনিম হারিয়ে গিয়েছিলো এই রহস্যের গহ্বরে।
“আর ওই ছেলেটা?” রায়হান জিজ্ঞেস করল।
“সে কোথায়?”
বৃদ্ধা একটু কাঁপল, তারপর বলল
“সে... সে হয়তো আর মানুষ নয়।
সে তার নিজের ছায়ার মতো একাকী,
অন্ধকারের মাঝে হারিয়ে গেছে।”
রায়হানের হৃদয় দোলা দিল।
রাত হতেই রায়হান তার অফিসে ফিরে এল।
সে জানত, যেটা আজ সে শুনেছে, তার একটা গভীর অর্থ আছে।
কিন্তু সেই অর্থ খুঁজে পেতে হলে তাকে তার নিজের অতীতের মুখোমুখি হতে হবে।
তার মোবাইল বাজল। অজানা নাম্বার।
“তুমি সত্যের পথে আছো,” কণ্ঠটা ভীষণ গম্ভীর,
“কিন্তু সতর্ক থাকো, কারণ এই জালে একবার আটকে গেলে আর ফিরে যাওয়া কঠিন।”
রায়হান জানল, এই বার্তা এক সাধারন হুমকি নয়, বরং একটা প্রহরী।
রাত গভীর হচ্ছে,
রায়হান বুঝতে পারছে, সে এখন আর শুধু অতীতের ছায়ার পিছনে ছুটে নেই।
সে এখন সেই জালের অংশ, যার নাম স্মৃতি।
রাজু