ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২০ জুলাই ২০২৫, ৫ শ্রাবণ ১৪৩২

চলে গেলেন বরেণ্য ভাস্কর হামিদুজ্জামান খান

সংস্বৃতি প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৩:৪২, ২০ জুলাই ২০২৫

চলে গেলেন বরেণ্য ভাস্কর হামিদুজ্জামান খান

পৃথিবী ছেড়ে চিরবিদায় নিলেন একুশে পদকপ্রাপ্ত বরেণ্য ভাস্কর হামিদুজ্জামান খান।
রবিবার সকাল ১০টার দিকে রাজধানীর মাদানী এভিনিউয়ের ইউনাইটেড হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর পরিবারের ঘনিষ্ঠজনেরা এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

ভাস্কর অধ্যাপক হামিদুজ্জামান খান গুরুতর অসুস্থ হয়ে গত সপ্তাহে ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। তিনি নিউমোনিয়া ও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ছিলেন বলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন। অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে প্রথমে আইসিইউ ও পরে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। সেখানে আজ রবিবার সকালে তাঁর লাইফ সাপোর্ট খুলে নেওয়ার পর চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

আজ রবিবার বেলা আড়াইটায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে তাঁর মরদেহ সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য রাখা হবে। আসর নামাজের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।

হামিদুজ্জামান খান ১৯৪৬ সালের ১৬ মার্চ কিশোরগঞ্জের সহশ্রাম গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭০ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ভাস্কর্য বিভাগে অধ্যাপনা করেন। ফর্ম, বিষয়ভিত্তিক ও নিরীক্ষাধর্মী ভাস্কর্যের জন্য সুপরিচিত ছিলেন তিনি।

১৯৭৬ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের অনুপ্রেরণায় তিনি নির্মাণ করেন ‘একাত্তর স্মরণে’ ভাস্কর্য। ১৯৮৮ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলে অলিম্পিক ভাস্কর্য পার্কে তাঁর ‘স্টেপস’ ভাস্কর্য স্থাপিত হয়। এর পর থেকেই আন্তর্জাতিক পরিসরেও তাঁর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে।

ক্যানভাসে হামিদুজ্জামান খান জলরঙ ও অ্যাক্রেলিকে বিমূর্ত ধারায় নিসর্গ ও মানবশরীর ফুটিয়ে তুলেছেন। সিলেট ক্যান্টনমেন্টে ‘হামলা’, বঙ্গভবনে ‘পাখি পরিবার’, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘সংশপ্তক’, ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে ‘শান্তির পায়রা’—তাঁর উল্লেখযোগ্য ভাস্কর্য।

২০১৭ সালে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর ‘হামিদুজ্জামান খান ১৯৬৪–২০১৭’ শিরোনামে তাঁর রেট্রোস্পেকটিভ প্রদর্শনীর আয়োজন করে।
অধ্যাপক হামিদুজ্জামান খান ২০০৬ সালে একুশে পদক ও ২০২৩ সালে বাংলা একাডেমির ফেলোশিপ লাভ করেন।

দেশের বৃহত্তম বিদ্যুৎশক্তি উৎপাদক প্রতিষ্ঠান সামিট গ্রুপ তাঁর ভাস্কর্য সংগ্রহ করে গাজীপুরের কড্ডায় একটি বৃহৎ ভাস্কর্যবাগান নির্মাণ করেছে।
পাঁচ দশকেরও অধিক সময়ের কর্মজীবনে তাঁর শিল্পকর্ম বাংলাদেশ, ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া, বুলগেরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রে প্রদর্শিত বা স্থাপিত হয়েছে। 

সানজানা

×