
ছবি: প্রতীকী
সুস্থ থাকতে খুব জটিল কিছুর প্রয়োজন নেই—প্রতিদিন মাত্র এক মিনিট সময় দিলেই মিলতে পারে আশ্চর্যজনক উপকার। শরীরের ভারসাম্য ধরে রাখার ক্ষমতা বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কমে যেতে থাকে, যার ফলে পড়ে গিয়ে আঘাত পাওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। তবে এক মিনিটের একটি সহজ ব্যায়াম দীর্ঘজীবনের পথে সহায়ক হতে পারে বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
এই ব্যায়ামের নাম—চোখ বন্ধ রেখে এক পায়ে দাঁড়ানো। শুনতে সহজ মনে হলেও এর প্রভাব অত্যন্ত গভীর। এই অনুশীলন শুধু ভারসাম্যই বাড়ায় না, বরং শরীরের পেশি শক্ত করে, মনোযোগ ও মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ায় এবং আপনাকে আরও তরুণ ও সচল রাখে।
কীভাবে করবেন ব্যায়ামটি?
এই ব্যায়ামে আপনাকে একটি পা মাটি থেকে কিছুটা তুলতে হবে এবং অপর পায়ের ওপর ভর করে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। তারপর চোখ বন্ধ করতে হবে। চোখ বন্ধ করায় আপনি চাক্ষুষ নির্দেশনা হারিয়ে ফেলবেন, ফলে শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখতে বেশি সচেতনভাবে কাজ করতে হবে।
প্রথমবার এটি করতে গিয়ে কিছুটা কষ্ট হতে পারে, কিন্তু নিয়মিত অনুশীলনে সহজ হয়ে যাবে। দিনে কয়েক মিনিট করলেই শরীর-মন দুইয়ের জন্যই মিলবে দারুণ উপকার।
কেন ভারসাম্য গুরুত্বপূর্ণ?
বয়স বাড়ার সঙ্গে ভারসাম্য ধরে রাখার ক্ষমতা হ্রাস পায়, ফলে হঠাৎ পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এসব পড়ে যাওয়ার ঘটনা বৃদ্ধদের জন্য গুরুতর আকার ধারণ করতে পারে। ফলে হতে পারে দীর্ঘমেয়াদি অসুস্থতা ও স্বাধীনতার ক্ষতি।
এই ধরনের ব্যায়াম নিয়মিতভাবে করলে মস্তিষ্ক ও পেশির মধ্যে সমন্বয় উন্নত হয়, পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি কমে এবং বয়সজনিত দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করা সহজ হয়।
পেশি ও অস্থি শক্তিশালী করে
এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকার এই অনুশীলন ওজন বহনের মতো কাজ করে, কারণ এতে হাড় ও পেশির ওপর চাপ পড়ে। এটি হাড়কে মজবুত করে, হাড় ক্ষয় রোধে সাহায্য করে এবং অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধে কার্যকর। এতে পেট, পা ও নিতম্বের পেশিগুলো সক্রিয় হয়, যা হাঁটা, সিঁড়ি বাওয়া বা চেয়ারে বসা-উঠার মতো দৈনন্দিন কাজকে সহজ করে তোলে।
মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ায়
চোখ বন্ধ রেখে ভারসাম্য বজায় রাখতে হলে মস্তিষ্ককে সর্বোচ্চ সচেতনতায় কাজ করতে হয়। এতে একদিকে মনোযোগ ও একাগ্রতা বাড়ে, অন্যদিকে শরীর সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ে। গবেষণা বলছে, এই ব্যায়াম নিয়মিতভাবে করলে স্মৃতিভ্রংশ বা আলঝেইমারের মতো রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে।
দেহসচেতনতা ও ভঙ্গিমা উন্নত করে
চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে থাকার সময় আপনি নিজের শরীরের অবস্থা বেশি ভালোভাবে অনুভব করতে পারেন—এটিকে বলে প্রোপ্রিওসেপশন। এটি বাড়লে দেহের গতিবিধি উন্নত হয়, ভারসাম্য ও অবস্থান সঠিক থাকে। সেই সঙ্গে মেরুদণ্ডের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে এবং ঘাড় ও পিঠের ব্যথা কমে। ভালো ভঙ্গিমা শুধু স্বাস্থ্য নয়, আত্মবিশ্বাস ও তারুণ্য ধরে রাখতেও সহায়ক।
যেকোনো জায়গায়, যেকোনো সময় করা যায়
এই ব্যায়ামের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো—এটির জন্য বিশেষ কোনো যন্ত্রপাতি বা জায়গার প্রয়োজন নেই। আপনি এটি বাসা, অফিস বা বাইরে যেকোনো স্থানে করতে পারেন।
শুরুতে পাশে একটি দেয়াল বা চেয়ার রাখুন যাতে ভারসাম্য হারালে ধরে রাখা যায়। অভ্যাস হয়ে গেলে নরম জায়গায় দাঁড়িয়ে কিংবা বেশি সময় ধরে করতে পারবেন।
নিরাপদে অনুশীলনের উপায়
- ব্যায়ামের সময় পাশে মজবুত কিছু রাখুন যাতে পড়ে গেলে ধরে রাখা যায়।
- প্রথমে চোখ খোলা অবস্থায় ভারসাম্য তৈরি করে তারপর চোখ বন্ধ করুন।
- সমতল ও পা পিছলে যাওয়ার ঝুঁকিহীন জায়গায় অনুশীলন করুন।
- আরামদায়ক জুতা ব্যবহার করুন, অথবা নির্ভরযোগ্য স্থানে খালি পায়েও করতে পারেন।
- আগে থেকে ভারসাম্যজনিত সমস্যা বা স্বাস্থ্যগত জটিলতা থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
দ্রষ্টব্য: এই প্রতিবেদনটি শুধুমাত্র তথ্যের উদ্দেশ্যে প্রস্তুত। চিকিৎসা সংক্রান্ত পরামর্শের জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া।
রাকিব