
ছবি: জনকণ্ঠ
বগুড়ায় চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ২৪ জুলাই পর্যন্ত ছুরিকাঘাতে নিহত হয়েছেন ১১ জন, আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৪২ জন। ধারালো অস্ত্রের এমন অবাধ ব্যবহার ও প্রাণঘাতী সহিংসতায় উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছে জেলা পুলিশ প্রশাসন। ছুরি-চাকুর অপব্যবহার প্রতিরোধে জনসচেতনতা তৈরিতে বৃহস্পতিবার দুপুরে রাস্তায় নামেন পুলিশ সুপার জেদান আল মুসা। জনাকীর্ণ এলাকায় ঘুরে ঘুরে সাধারণ মানুষের হাতে সচেতনতামূলক লিফলেট তুলে দেন তিনি।
বগুড়া জিলা স্কুল, শহীদ খোকন পার্ক, সার্কিট হাউস মোড়, কোর্ট চত্বর, জলেশ্বরীতলা, কালীবাড়ি মোড়, জেলখানা মোড়, পৌরসভা মোড়, ডিসি অফিস মোড়, পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সামনে সড়কসহ শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্টপগুলোতে ঘণ্টাব্যাপী চলার পর এই কার্যক্রমের সমাপ্তি ঘটে। পুলিশ সুপারের সঙ্গে জেলা পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারাও অংশ নেন।
পুলিশের পক্ষ থেকে বিতরণ করা লিফলেটে লেখা রয়েছে— “ছুরি-চাকু সন্ত্রাস রুখতে হবে এখনই, নিরাপদ বগুড়া, আমাদের হাতেই”। লিফলেটের মাধ্যমে তরুণ সমাজকে ছুরি-চাকু বহন ও অপব্যবহার থেকে দূরে থাকতে আহ্বান জানানো হয়। পথচারীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নারী-পুরুষের হাতে লিফলেট তুলে দিয়ে পুলিশ সুপার সরাসরি কথা বলেন এবং সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান।
জেলা পুলিশের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত সাত মাসে জেলায় মোট খুন হয়েছে ২৮ জন। এর মধ্যে ১১ জন খুন হয়েছেন ছুরি-চাকুর আঘাতে। ছুরিকাঘাতে আহত হয়েছেন ৪২ জন। ছুরি-চাকু সংক্রান্ত ঘটনায় জেলার বিভিন্ন থানায় দায়ের করা হয়েছে ৬১টি মামলা। এসব ঘটনায় পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে ৯২ জনকে এবং উদ্ধার করেছে ১৯৩টি ধারালো অস্ত্র।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, গ্রেপ্তারকৃতদের অধিকাংশই স্কুল ও কলেজপড়ুয়া কিশোর। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে তারা একে অপরকে ছুরিকাঘাত করছে। পুলিশ বলছে, বগুড়া শহরের বিভিন্ন দোকানে ছুরি-চাকু সহজেই কেনা যাচ্ছে। এমনকি অনলাইনে অর্ডার করে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে ছুরি পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের হাতে।
সম্প্রতি এমনই এক হৃদয়বিদারক ঘটনার জন্ম দেয় এক কলেজশিক্ষার্থী। প্রেমে ব্যর্থ হয়ে সে ঢুকে পড়ে এক স্কুলপড়ুয়া বান্ধবীর বাড়িতে। ওই ছাত্রীকে পেটে ছুরিকাঘাত করে হত্যার চেষ্টা করে। মেয়েটির দাদি লাইলী বেওয়া (৭৫) ও ভাবি হাবিবা ইয়াসমিন (২১) এগিয়ে এলে তাদেরও গলায় ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থলেই দুই নারীর মৃত্যু হয়। ছুরিকাহত বন্যা এখনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। গত ১৬ জুলাই রাতে বগুড়া শহরের ইসলামপুর (হরিগাড়ি) পশ্চিমপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে অভিযুক্ত কলেজশিক্ষার্থীকে, যাকে আদালতের নির্দেশে কিশোর সংশোধনাগারে পাঠানো হয়েছে।
বগুড়ার পুলিশ সুপার জেদান আল মুসা বলেন, “বগুড়ায় ছুরি-চাকুর অপব্যবহার রীতিমতো উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। এসব সহিংসতা ঠেকাতে শুধু আইন প্রয়োগ যথেষ্ট নয়। পরিবারের পক্ষ থেকে সন্তানদের সচেতন করা জরুরি। এজন্যই আমরা সরাসরি রাস্তায় নেমে মানুষের সঙ্গে কথা বলছি, সচেতন করছি।”
তিনি আরও বলেন, শহরের বিভিন্ন দোকানে ও অনলাইনে যত্রতত্র ছুরি-চাকু বিক্রি বন্ধে পুলিশের অভিযান চলবে। অনলাইন বিক্রেতাদের নজরদারিতে আনা হচ্ছে।
পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে, সন্তানরা কোথায় যায়, কার সঙ্গে মেশে, কী ধরনের জিনিস ব্যবহার করছে সে বিষয়ে বাড়তি নজর দিতে। কারণ প্রতিরোধের প্রথম ও সবচেয়ে শক্তিশালী দুর্গ হচ্ছে পরিবার।
মুমু ২