
ছবি: সংগৃহীত
মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনাপূর্ণ রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ইসরায়েল-ইরান সম্পর্ক আরও একবার সংঘাতের দ্বারপ্রান্তে। বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, ইসরায়েল ইরানের বিরুদ্ধে আরেকটি যুদ্ধ শুরু করার পাঁয়তারা করছে, যেখানে বিভিন্ন গোপন অভিযান এবং আন্তর্জাতিক কূটনীতিক তৎপরতা সেই প্রস্তুতির ইঙ্গিত বহন করছে।
গত মাসে ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের ১২ দিনের যুদ্ধে ইরানি সামরিক বাহিনীর কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা নিহত হন, এবং দেশটির প্রতিরক্ষা সক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যুক্তরাষ্ট্রকেও তারা এই যুদ্ধে যুক্ত করে ফোর্ডো পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়।
যুদ্ধশেষে ইসরায়েল বিজয়ের দাবি করলেও প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, তিনি ‘গ্যাসের প্যাডেল থেকে পা সরাবেন না’। তার মানে, আবার হামলার ইচ্ছা রয়েছে এবং সে জন্য উপযুক্ত সময় ও অজুহাতের অপেক্ষায় রয়েছেন।
তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, দ্বিতীয় দফা হামলা চালাতে ইসরায়েলকে যুক্তরাষ্ট্রের অনুমতির প্রয়োজন হবে, যা বর্তমান প্রেক্ষাপটে সহজ নয়। বিশেষত, সিরিয়ায় ইসরায়েলি হামলা নিয়ে মার্কিন উদ্বেগ রয়েছে।
ইসরায়েলের আগের হামলায় ১০০০ এরও বেশি ইরানি এবং ২৯ জন ইসরায়েলি নিহত হন। যুদ্ধ শুরুর কারণ হিসেবে ইসরায়েল দাবি করে, তারা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ধ্বংস করতে আত্মরক্ষামূলকভাবে আক্রমণ চালিয়েছে। অথচ ইরান বহুদিন ধরেই বলে আসছে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি কেবল বেসামরিক উদ্দেশ্যে।
ইরানি প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, যুদ্ধবিরতি বেশিদিন টিকবে না। তিনি জানান, তাদের বাহিনী সম্পূর্ণ প্রস্তুত এবং প্রয়োজন হলে ইসরায়েলের গভীরে আঘাত হানতে প্রস্তুত।
এদিকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও জুলাই মাসে জার্মানি, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যের সঙ্গে আলোচনা করেছেন যাতে ইরানের ওপর জাতিসংঘের পুরনো নিষেধাজ্ঞাগুলো আবার কার্যকর করা যায়। আগস্টের মধ্যে নতুন কোনো পারমাণবিক চুক্তি না হলে এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ হতে পারে, যা ইসরায়েলকে হামলার ‘রাজনৈতিক সুযোগ’ এনে দিতে পারে।
বিশ্লেষক ট্রিটা পার্সি বলেন, ইসরায়েলের উদ্দেশ্য হচ্ছে ইরানকে সিরিয়া বা লেবাননের মতো করে ফেলা,যেখানে যখন খুশি তারা হামলা চালাতে পারে। অপরদিকে, ইসরায়েলি গবেষক ওরি গোল্ডবার্গ জানান, ইরানে ইসরায়েলের গোপন নেটওয়ার্ক এখনো সক্রিয়। জুনের যুদ্ধেই তার প্রমাণ মিলেছে স্থানীয় এজেন্ট ও ড্রোন ব্যবহার করে ইসরায়েল ভেতর থেকে ইরানে বিস্ফোরণ ঘটায়।
নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ইরানে ঘনঘন অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণের পেছনে ইসরায়েলি গুপ্তচরবৃত্তি দায়ী, যার মধ্যে অ্যাপার্টমেন্ট, তেল শোধনাগার, কারখানা ও বিমানবন্দর এলাকা রয়েছে।
ইসরায়েলি রাজনৈতিক পরিস্থিতিও এই আগ্রাসী নীতিকে উৎসাহিত করছে। গাজায় চলমান যুদ্ধ নিয়ে অভ্যন্তরীণ সমালোচনা বাড়লেও ইরান নিয়ে জাতীয় ঐক্য রয়েছে, এবং নেতানিয়াহু এই ইস্যুতে জনসমর্থন আদায়ে আগ্রহী।
ইরানও আর কোনোভাবে অপ্রস্তুত থাকতে চায় না। তারা যেমন সম্ভাব্য কূটনৈতিক চুক্তির চেষ্টা করছে, তেমনি সামরিকভাবে সর্বদা প্রস্তুত রয়েছে। ইরান বিশ্লেষক নেগার মোর্তাজাভির মতে, “তারা জানে চুক্তি হলে ইসরায়েলি হামলার সম্ভাবনা কমবে।”
মুমু ২