
ছবি: সংগৃহীত
মস্তিষ্কের সুস্থতা দীর্ঘমেয়াদে রক্ষা করা খুবই জরুরি। অনেক সময় আমরা ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রংশতা নিয়ে ভাবি শুধু বার্ধক্যে কিংবা জিনগত কারণে হয়ে থাকে। কিন্তু সত্যি কথা হলো, আজকের ছোট ছোট অভ্যাসই আমাদের মস্তিষ্ককে রক্ষা করতে পারে অথবা ধীরে ধীরে ক্ষতি করতে পারে। ডিমেনশিয়া রাতারাতি আসে না, এটি ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে। আর অনেক দৈনন্দিন অভ্যাস আছে যেগুলো আমরা ভাবি না, কিন্তু এগুলোই ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। আসুন জেনে নিই ৭টি অভ্যাস যা গোপনে মস্তিষ্কের ক্ষতি করছে।
১। ঘুমের অভাবে
ঘুম আমাদের জীবনের প্রথম শিকড়। ব্যস্ত জীবনে ঘুমের ঘাটতি হয় সহজেই, কিন্তু মস্তিষ্ক তা মেনে নেয় না। পর্যাপ্ত ও গভীর ঘুম না হলে মস্তিষ্কে জমে থাকা বেয়া-অ্যামিলয়েড (Alzheimer’s রোগের কারণ) ময়লা পরিষ্কার হয় না। ঘুমের অভাবে স্মৃতিশক্তি কমে যায় এবং মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা পড়ে।
২। অলস জীবনযাপন
বিরতি ছাড়াই বসে বসে মোবাইল বা টিভি দেখার অভ্যাস মস্তিষ্কের ক্ষতির অন্যতম কারণ। শারীরিক কর্মব্যায়াম কম হলে রক্ত চলাচল মস্তিষ্কে কমে এবং উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়, যা ডিমেনশিয়ার কারণ। প্রতিদিন মাত্র ৩০ মিনিট দ্রুত হাঁটাও অনেক উপকারে আসতে পারে।
৩। অপরিপক্ব খাবারের অভ্যাস
ইনস্ট্যান্ট নুডলস, ফ্রাই ও চিনি বেশি খাওয়া মস্তিষ্কের জন্য ক্ষতিকর। এগুলো প্রদাহ ও ইনসুলিন রোধের কারণ, যা ডিমেনশিয়ার সূচক। মস্তিষ্ক ভালো রাখে ওমেগা-৩, শাকসবজি, বেরি, গোটা শস্য ও বাদাম। ভূমধ্যসাগরীয় ডায়েট অনেক বিজ্ঞানসম্মত ও উপকারী।
৪। মানসিক ব্যায়ামের অভাব
আপনার মস্তিষ্কও অন্য পেশীর মতো ব্যায়ামের দরকার। শুধু সোশ্যাল মিডিয়া স্ক্রোল করা বা সময় নষ্ট করা যথেষ্ট নয়। নতুন কিছু শেখা, পাজল খেলা বা শখ করা মস্তিষ্কের জন্য ভালো। নতুন চ্যালেঞ্জ মস্তিষ্ককে সতেজ রাখে।
৫। একাকিত্ব
অবসরের সময় দরকার হলেও খুব বেশি একাকিত্ব মস্তিষ্কের জন্য ক্ষতিকর। সামাজিক সংযোগ, হাসি-মজায় মস্তিষ্ক প্রাণবন্ত থাকে। দীর্ঘদিন একাকীত্ব ডিমেনশিয়া ও বিষণ্নতার ঝুঁকি বাড়ায়। বন্ধুদের সাথে কথা বলুন, পার্টিতে যোগ দিন, প্রতিবেশীর সঙ্গে কথা বলুন।
৬। শ্রবণশক্তির অবহেলা
শ্রবণশক্তি কমে গেলে মস্তিষ্ক অতিরিক্ত কাজ করে ফাঁক পূরণ করার জন্য, ফলে স্মৃতি ও চিন্তাশক্তি দুর্বল হয়। শ্রবণক্ষতির কারণে সামাজিক বিচ্ছিন্নতা হয়, যা আবার মস্তিষ্কের জন্য খারাপ। তাই কথাবার্তায় “কি?” শুনলে শুনানি পরীক্ষা করানো উচিত।
৭। চাপকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা
চাপ থাকা স্বাভাবিক, কিন্তু দীর্ঘস্থায়ী চাপ মস্তিষ্কের ক্ষতি করে। চাপের সময় শরীরে কর্টিসল নামে হরমোন বাড়ে, যা নিউরন ক্ষতি করে এবং মস্তিষ্কের নতুন সংযোগ গঠনে বিঘ্ন ঘটায়। চাপ কমাতে যোগব্যায়াম, ধ্যান, প্রকৃতির মাঝে হাঁটাহাটি বা হাসি-তামাশা খুব দরকার।
ছোট পরিবর্তন, বড় লাভ
ভালো খবর হলো, এই অভ্যাসগুলো বদলানো কঠিন নয়। সামান্য নিয়মিত পরিবর্তনেই ঝুঁকি কমানো যায় এবং মস্তিষ্ককে সুস্থ রাখা সম্ভব। আজ রাতে ভালো ঘুমান, আগামীকাল একটু হাঁটুন, বন্ধুর সাথে কথা বলুন, আর মিষ্টির বদলে বাদাম খান। ভবিষ্যতের আপনার মস্তিষ্ক আপনাকে ধন্যবাদ জানাবে।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া।
রাকিব