
ছবি: সংগৃহীত
মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমেরিকায় আলঝাইমার্স রোগে কোটি কোটি মানুষ আক্রান্ত এবং প্রতিবছর বহু মানুষের মৃত্যুর কারণ এটি। তবে রোগের দ্রুত শনাক্তকরণ চিকিৎসার সফলতা বাড়ায়। ডা. জোশুয়া নাস ১০টি স্নায়ুবিষয়ক লক্ষণ তুলে ধরেছেন, যা দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া জরুরি। তীব্র মাথাব্যথা হলে তা অবিলম্বে দেখা দরকার। একপাশ দুর্বল হওয়া বা কথায় হাটা জড়তা স্ট্রোকের ইঙ্গিত হতে পারে। চোখের দৃষ্টি বা স্মৃতিতে পরিবর্তন হলে পরীক্ষা করানো উচিত। ভারসাম্য হারানো, চোট বা আচমকা অজ্ঞান হওয়াও সতর্কতার কারণ। হাত-পায়ে অসাড় ভাব, অনুভূতিহীনতা বা কম্পন দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত।
মস্তিষ্ক আমাদের চিন্তা, শেখা, কাজ করা ও যোগাযোগের জন্য অপরিহার্য। তবে বর্তমানে প্রায় ৬.৯ মিলিয়ন আমেরিকান অ্যালঝাইমার্স ডিমেনশিয়ায় ভুগছেন এবং বছরে প্রায় এক লক্ষ মানুষ এ রোগে মারা যান। রোগ শুরুতে হালকা হলেও ধীরে ধীরে অবনতির দিকে চলে যায় এবং এর কার্যকর কোনো চিকিৎসা নেই। তবে লক্ষণ বুঝে সময়মতো চিকিৎসা নিলে ফল ভালো হতে পারে। মিশিগান ইনস্টিটিউট ফর নিউরোলজিক্যাল ডিজঅর্ডার্সের (MIND) ডা. নাস বলছেন, অনেকেই রোগের লক্ষণ অবহেলা করেন, তাই তিনি নিচের ১০টি লক্ষণ সম্পর্কে সবাইকে সতর্ক করছেন:
১। হঠাৎ তীব্র মাথাব্যথা
সাধারণ মাথাব্যথা না হলে এবং হঠাৎ এমন ব্যথা হয় যা জীবনের সবচেয়ে ভয়াবহ মনে হয়, এটি মস্তিষ্কে রক্তনালী ফেটে যাওয়ার বা রক্তক্ষরণের লক্ষণ হতে পারে। এ অবস্থায় দ্রুত জরুরি বিভাগের সাহায্য নেওয়া জরুরি। আমেরিকায় প্রায় ৬.৭ মিলিয়ন মানুষের মস্তিষ্কে ছিদ্রবিহীন রক্তনালী (অ্যানিউরিজম) রয়েছে বলে ধারণা করা হয়।
২। একপাশ দুর্বল বা অসাড় অনুভূতি
কয়েক মিনিটের মধ্যেই অনুভূতি ঠিক হলে হলেও এটি স্ট্রোকের পূর্বলক্ষণ হতে পারে। স্ট্রোক ঘটে যখন মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়, ফলে অক্সিজেন ও পুষ্টি সঞ্চালন বন্ধ হয়ে মস্তিষ্কের টিস্যু ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
৩। কথায় জড়তা
বক্তৃতায় হাটা বা ধ্বনি বিভ্রাট হলে সেটি ভাষা ও বক্তৃতা নিয়ন্ত্রণকারী মস্তিষ্কের অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার লক্ষণ এবং স্ট্রোকের সংকেত হতে পারে।
৪। হঠাৎ চোখের দৃষ্টিতে পরিবর্তন
দৃষ্টি হারানো বা দুই চোখে ছবি দ্বিগুণ দেখা ‘অপটিক নিউরাইটিস’, স্ট্রোক বা রেটিনা সমস্যার সংকেত হতে পারে, ডা. নাস জানান। অপটিক নিউরাইটিস হলো অপটিক নার্ভের প্রদাহ, যা চোখ থেকে মস্তিষ্কে তথ্য পৌঁছে দেয়।
৫। স্মৃতিভ্রংশ
স্মৃতিশক্তি হারানো ও বিভ্রান্তি বিভিন্ন কারণ যেমন সংক্রমণ, দেহের জৈব রাসায়নিক ভারসাম্যের অভাব বা ডিমেনশিয়া থেকে হতে পারে।
৬। ভারসাম্যহীনতা অনুভব
ঘুরাঘুরির মতো অনুভূতি যা ভারসাম্যহীনতা ও পড়ার কারণ হয়। এ সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হলে কেবল কানের সমস্যা নয়, মস্তিষ্কের কোনো সমস্যা থাকতে পারে; তখন মস্তিষ্কের ছবি তোলা প্রয়োজন।
৭। আকস্মিক মৃগীর মতো ঘটনা
হঠাৎ তাকিয়ে থাকা বা পেশী ঝাঁকুনি মৃগী আক্রমণের পূর্বলক্ষণ হতে পারে। প্রথমবার ঘটলে মস্তিষ্কের সমস্যা (যেমন টিউমার) থেকে রক্ষা পেতে সম্পূর্ণ পরীক্ষা করানো জরুরি।
৮। অজ্ঞান হয়ে পড়া
অধিকবার অজ্ঞান হওয়া হৃদরোগের লক্ষণ হতে পারে, তবে মস্তিষ্কের সমস্যা যেমন অস্থায়ী রক্তের ঘাটতি (টিআইএ) বা ছোট স্ট্রোকেও এমন ঘটনা ঘটতে পারে।
৯। হাত-পায়ে অসাড়তা
এটি সাধারণত ভিটামিনের ঘাটতি বা ডায়াবেটিসজনিত স্নায়ুর ক্ষতির লক্ষণ। তবে মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস বা মেরুদণ্ডের রোগ থাকার সম্ভাবনা থেকেও পরীক্ষা করতে হবে।
১০। কম্পন
অফিসে অনেক সময় দেখা যায় কম্পন যা ‘বিনাইন এসেনশিয়াল ট্রেমর’ হতে পারে এবং এটি পারিবারিক হতে পারে।
উপরোক্ত লক্ষণগুলো নজরে রাখুন এবং কোনো সমস্যা অনুভব করলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
দ্রষ্টব্য: এই প্রতিবেদন শুধুমাত্র তথ্যগত উদ্দেশ্যে প্রকাশিত। চিকিৎসা সংক্রান্ত কোনো সিদ্ধান্তের জন্য অবশ্যই প্রফেশনাল চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া।
রাকিব