ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২০ জুলাই ২০২৫, ৫ শ্রাবণ ১৪৩২

উপন্যাস: ফিরে আসা ছায়া, পর্ব ৫

মো আইয়ুব মন্ডল

প্রকাশিত: ১৪:৫০, ২০ জুলাই ২০২৫

উপন্যাস: ফিরে আসা ছায়া, পর্ব ৫

উপন্যাস: ফিরে আসা ছায়া

রায়হান আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
তার হাতে ধরা সেই সাদা মুখোশ, চোখে ফাঁকা দুইটি গহ্বর।
কী এক অদ্ভুত টান অনুভব করছে সে মুখোশটি পরে দেখার জন্য।

কিন্তু কেন?
কেন এতটা আকর্ষণ কাজ করছে এই মুখোশটির প্রতি?

সে ধীরে ধীরে মুখোশটি মুখে পরে।

আয়নায় নিজেকে দেখে চমকে ওঠে।
সে দেখে তার প্রতিবিম্ব কিন্তু সেই মানুষটা সে নয়।

মুখোশ পরে দাঁড়িয়ে থাকা সে-ই, তবে চোখের গভীরতায় অন্য এক অভিব্যক্তি।
চোখের পেছনে যেন কেউ তাকিয়ে আছে…
নীরব, ঠান্ডা, ছায়ার মতো।

আর আয়নার পেছনের দিকে হঠাৎ উদয় হয় ধোঁয়ার মতো অস্পষ্ট এক দৃশ্য।

একটি ঘর।

ঘরের ভেতর বসে আছে কয়েকজন মুখোশধারী।

সবার সামনে রাখা রয়েছে একটি বোর্ড, সেখানে লেখা

“নতুন শিকার – রায়হান আহমেদ”

তার নিজের নাম!

তার হৃদস্পন্দন বেড়ে গেল।
সে মুখোশ খুলে ফেলে।
সব দৃশ্য মিলিয়ে গেল।

তবু তার মনে হলো এই মুখোশ শুধু বস্তু নয়,
এটা একটা জানালার মতো, যেটা সত্যের এক অন্য মাত্রা দেখায়।

রাত তখন ৩টা।
রায়হান বিছানায় গা এলিয়ে দেয়, কিন্তু ঘুম তার কাছে আসে না।

সে বিছানার পাশ থেকে ডায়েরিটা আবার তুলে নেয়।
একেবারে পেছনের পাতায় অদ্ভুতভাবে লেখা 

“অয়না তাকালে যেমন মুখ দেখে মানুষ চিনে,
কখনো কখনো আয়নাও মানুষকে দেখে।
রাত ৩টা ১৫ মিনিট। ছায়া নড়বে।”

রায়হান সময় দেখে ৩:১৩।

সে উঠে দাঁড়াল।

ঘরের সমস্ত আলো নিভিয়ে দিয়ে আয়নার দিকে তাকিয়ে রইল।

৩:১৪...

৩:১৫...

আচমকা আয়নার মাঝখান থেকে ছায়ার মতো এক নারী দেখা দিল।

সে কিছু বলে না।
শুধু তাকিয়ে থাকে রায়হানের দিকে।

তার চোখ একইসঙ্গে অপরিচিত ও আপন।
সে যেন এক সময়ের আবেগের চেনা নাম।

রায়হান ধীরে ধীরে জিজ্ঞেস করল,
“সায়রা… তুমি কি?”

নারীটি এবার কথা বলল।

“তুমি জানো না আমি কে।
তুমি কেবল আমার একখণ্ড স্মৃতি বয়ে বেড়াও।
তুমি আমাকে ভালবেসেছিলে,
তবে আমি তোমার ছায়া হয়ে আছি।”

রায়হান ভয়ে নয়, আশ্চর্যতায় স্থির হয়ে যায়।

“তুমি এখনো বেঁচে আছো?”

“আমি আছি… তবে এই শহরের আলোয় নয়।
আমি বেঁচে আছি যেখান থেকে ফিরে আসা যায় না।”

আয়না ধীরে ধীরে অন্ধকার হয়ে আসে।

রায়হান ছুটে গিয়ে আয়নার ওপর হাত রাখে, কিন্তু শুধু ঠান্ডা কাচ।

সব মিলিয়ে গেছে।

শুধু নিচে পড়ে থাকে একটা ছোট চিরকুট।

“শেষ শুরু হয়ে গেছে।
স্মৃতির খাতায় যা নেই, তার মাঝেই আছে তোমার উত্তর।”

পরদিন সকালে, পত্রিকায় একটি খবর:

“অজানা মুখোশধারীর ছবি ছড়িয়ে পড়েছে
শহরের চারপাশে ছড়ানো রয়েছে কয়েকটি মুখোশ
আর প্রতিটি মুখোশের নিচে লেখা
‘স্মৃতি ফিরিয়ে আনো। নয়তো হারিয়ে যাও।’”

রায়হান জানে, এই শহর কিছু লুকোচ্ছে।
আর সেই লুকানো সত্যের মধ্যে আছে

সায়রা,
তাসনিম,
আর নিজেই,
এক এক করে জড়িয়ে পড়া এক বিশাল রহস্যে।

তাসমিম

×