ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৬ জুলাই ২০২৫, ১১ শ্রাবণ ১৪৩২

উপন্যাস: ফিরে আসা ছায়া, পর্ব ৭

মো: আইয়ুব মন্ডল

প্রকাশিত: ১৯:৫১, ২৫ জুলাই ২০২৫

উপন্যাস: ফিরে আসা ছায়া, পর্ব ৭

রাত তখন সাড়ে তিনটা।
ঢাকার শহর ঘুমিয়ে পড়লেও রায়হানের চোখে ঘুম নেই।
সে চুপচাপ বসে আছে ডায়েরি আর সেই মুখোশের সামনে,
যেন এই দুই বস্তুই তার জীবনের দুই প্রান্ত
একটা সত্য, আরেকটা ছায়া।

সে জানে, আজ তাকে যেতে হবে আরও গভীরে।
স্মৃতি নয়, এবার সত্যের মুখোমুখি হতে হবে।

রায়হান শুরু করল পুরনো নথি ঘাঁটা।
তাসনিমের মৃত্যুর কেস ফাইল,
খুন, নিখোঁজ, আত্মহত্যা এই তিনটি শব্দই পুলিশ রিপোর্টে একে অপরের বিকল্প হিসেবে লেখা ছিল।

কিন্তু একটি রিপোর্টে সে একটি অদ্ভুত নোট পেল
"একটি অসমাপ্ত চিঠি উদ্ধার করা হয়েছে, হাতে লেখা। তদন্তের জন্য সংরক্ষিত।"

রায়হানের চোখ চকচক করে উঠল।

সে জানে, এই চিঠি যদি খুঁজে পাওয়া যায়,
তবে অনেক অজানা রহস্যের জট খুলে যেতে পারে।

সে যোগাযোগ করল একজন পুরনো বন্ধু, নিলয়
একজন অপরাধ বিষয়ক রিপোর্টার, যার পুলিশের ইনসাইড সোর্স আছে।

নিলয় প্রথমে শুনে থমকে গেল।
“তুই তাসনিম হোসেন কেসে ঘাঁটাঘাঁটি করছিস?
ওটা কেবল কেস না রে ভাই, ওটা একটা শাপ।
সেই কেসের পেছনে বহু মানুষ নিখোঁজ,
কেউ চুপ, কেউ পাগল।”

রায়হান বলল, “আমাকে ওই চিঠিটা দেখতে হবে। তুই পারবি?”

নিলয় অনেকক্ষণ চুপ থেকে বলল,
“ঠিক রাত ১২টায় রেকর্ডরুম খালি থাকে।
একবার শুধু ঢুকে চিঠিটা তুলে নিয়ে আয়।
আমি ঢুকিয়ে দেবো, বের করতেও সাহায্য করব।”

রায়হান রাজি হয়ে গেল।

রাত ১২:১৫
ঢাকা মেট্রোপলিটন রেকর্ডরুম

নিলয় গেটম্যানকে টাকা দিয়ে বোঝাল,
আর রায়হান ঢুকে গেল ভিতরে।

ঘরটা বিশাল, ধুলোর স্তরে ঢাকা ফাইলের রাজ্য।
দেয়ালে বড় ঘড়ি, আর দূর থেকে আসা কাগজে পোকা কাটার শব্দ
গা ছমছমে পরিবেশ।

রায়হান ফাইলবক্স খুলতে খুলতে অবশেষে পেল:

File Code: TH-89/Case-Letter-Conf.

ভেতরে একটি খাম, আর তার ভিতরে হাতের লেখা অসমাপ্ত এক চিঠি।

চিঠি থেকে উদ্ধৃতি:
*"সায়রা,
তুমি জানো, আমি যত কিছু দেখেছি, ততটাই ভয় পেয়েছি।
তুমি বলেছিলে, যারা মুখোশ পরে, তারা আসলে মুখ লুকাতে চায় না,
তারা লুকিয়ে রাখতে চায় তাদের অতীত।

আজ আমি এক বাড়িতে গেছি তাদের ঘাঁটি, যেটা আমরা ‘ডেভিল হাউজ’ বলি।
তাদের সবকিছুই একটা খেলা।

কিন্তু আমি আর খেলতে পারব না, সায়রা।
তোমাকে এই চিঠি লিখছি কারণ আমি জানি, আজ রাতেই..."

চিঠি এখানেই থেমে গেছে।

রায়হানের হৃদস্পন্দন বেড়ে গেল।

তাসনিম সায়রাকে চিঠি লিখছিল?
তাহলে কি সায়রা তখনই ওদের সঙ্গে যুক্ত ছিল?

নাকি সায়রা-ই তাসনিমকে সাবধান করতে চেয়েছিল?

তার মাথা যেন ঝড়ের ভেতর ঢুকে গেল।
চোখের সামনে একের পর এক ছবি ভেসে উঠছে
ডায়েরির পাতায় সায়রার নাম,
আয়নার ছায়া,
তাসনিমের অসমাপ্ত চিঠি।

হঠাৎ ঘরের বাতি নিভে গেল।

রায়হান স্থির।
মোবাইলের টর্চ জ্বালিয়ে চারপাশে তাকাল।

এক কোণে দাঁড়িয়ে একজন মানুষ অন্ধকারে মুখ দেখা যায় না।
সে ধীরে ধীরে বলল,

“সব জানতে চাও?
তবে চিঠির শেষ লাইন কোথায় গেছে, জানো?”

রায়হান ধমকে উঠল।
“কে তুমি?”

কণ্ঠটা মৃদু হেসে বলল,

“শেষ লাইন এখনো লেখা হয়নি রায়হান।
কারণ লেখাটা তোমার হাতেই হবে।
তোমারও চিঠিটা শেষ করার পালা এসেছে।”

রায়হান ছুটে গেল দরজার দিকে।
কিন্তু দরজা বন্ধ।

ফিরে তাকাল কেউ নেই।

শুধু খামে লেখা নতুন একটি লাইন

"যেখানে চিঠি থেমে যায়, গল্প সেখানে শুরু হয়।"

 

রাজু

×