ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৬ জুলাই ২০২৫, ১১ শ্রাবণ ১৪৩২

স্বপ্নরা ছাই হয়ে উড়ে যায়

জহিরুল হক বিদ্যুৎ

প্রকাশিত: ০১:০১, ২৫ জুলাই ২০২৫

স্বপ্নরা ছাই হয়ে উড়ে যায়

কবিতা

মাইলস্টোন স্কুলের মাঠে তখনো ছড়ানো
কচিকাঁচাদের রঙিন ব্যাগ,
হঠাৎ আকাশ ছিঁড়ে পড়ল মৃত্যুবরণ ঘুম।
বিমানটা কেবল একটা যন্ত্র ছিল,
কিন্তু তার নিচে দাঁড়ানো ছিল একেকটা স্বপ্ন
কেউ পাইলট হবে, ডাক্তার হবে, কবি হবে,
কেউ বা মায়ের হাত ধরে প্রথম এসেছিল স্কুলে।
শুধু একটি দুপুরেই ভেঙে গেল
শত দিনের পাঠচিত্র।
বাবা-মার চোখে রয়ে গেল জমাট বাঁধা প্রশ্ন,
“আমার শিশুটি কোথায়?”
এ শহরের বাতাসে এখন বারবার ফিরে আসে
ছোট ছোট জুতোর শব্দ,
চিৎকারে ভরা নীরবতা,
যা শুধু সন্তানহারা মা-বাবাই বোঝে।
টিফিনবক্সে রাখা ছিল ভালোবাসা,
আজ তা নেই
রয়ে গেছে শুধু পুড়ে যাওয়া চিহ্ন,
ঝলসে যাওয়া নামের ট্যাগ।
একটি ক্লাসরুম আজ অদৃশ্য,
তবু প্রতিদিন চেয়ারগুলো খালি থাকে
মনে হয়, কেউ এখনো এসে বসবে।
মাইলস্টোন আজ শুধু একটি স্কুল নয়,
এক সমাধিক্ষেত্র,
যেখানে শিশুরা স্বপ্ন নয়, ছাই হয়ে উড়ে যায়।


** রেখো অন্তর জুড়ে

আব্দুস সাত্তার সুমন 

আম্মু আমি স্কুলে যাই, তুমি আসবে কখন?
আমার জন্য কি নিয়ে আসবে আর যখন তখন?
আদর করবে কোলে নিয়ে? বুকে টেনে রাখবে?
আর হবে না চঞ্চলতা, নীরবতাই থাকবে।

চিৎকার করে আর্তনাদে, ক্যানভাস জড়সড়ো,
বন্ধ হলো নিশ্বাস ও মা! হতে পারলাম না আর বড়?
একটি ভুলে স্বপ্নগুলো, জীবন চোখের কান্না,
আমাদের মতন এমন কারো, করুণ দশা আর না!

হঠাৎ করে আগুন শিখা, ছারখার করে মন!
ঝোলসে গেল পোড়া দহন, ছোট্ট এই জীবন।
দোষ কি ছিল? আমরা শিশু, কেন এমন হলো?
অল্প সময় এলাম ধরায়? আমায় একটু বলো?

তোমার সাথে আর হবে না! দেখা কোনদিন?
স্মৃতি সব রেখে গেলাম, মায়ায় ভরা ঋণ।
অগ্নিস্নান করল শরীর, জ্বলন্ত সেই ছাদ,
নিষ্পাপ দেহ মুখখানা, পুড়ে গেল অঙ্গ হাত।

সকাল বেলায় গোল টেবিলে, দেখা হবে না নাস্তায়?
ভাইয়া-আপু ডেকে বলে, আর দাঁড়াবো না রাস্তায়।
বিদায় নিলাম আব্বু-আম্মু, ছোট্ট চাঁদের বুড়ি,
যতদিন তোমরা বেঁচে থাকবে, রেখো অন্তর জুড়ি।


** এই শহরের ফুলগুলো 

রুদ্র সাহাদাৎ 

বোবা হয়ে গেছে মুখ বোবা চোখ
চারদিক নৈঃশব্দ্যের কান্না- দীর্ঘশ্বাস 
ভেসে আসে রাত্রির বুক চিরে 
দিনের দরজা ভেঙে চিৎকার দেয় স্বজন 
পুড়ে গেল এই শহরের ফুলগুলো 
নিষ্পাপ রঙিন ফুল..  
হাসপাতালের বারান্দায় এখনও কাঁদে  মা 
কবরের পাশেই শুয়ে আছেন বাবা 
রোদ বৃষ্টি ঝড়-

ক্ষণে ক্ষণে বেহুঁশ হয়ে পড়ে ভাই ও বোন 
বেহুঁশ নিহতের পুরো পরিবার 
টেলিভিশনের পর্দায়  জোড়া জোড়া পুড়া লাশ 
শোকে কাতর সমগ্র বাংলাদেশ


** অন্ধকার নামে 

তুহীন বিশ্বাস 

হঠাৎ পুড়ে গেছে শহরের নিষ্পাপ কলিগুলো 
মানুষ পোড়া গন্ধে কাঁপছে আকাশের তারা,
অঙ্কিত স্বপ্নগুলো ছারখার, শব্দটাও কান্নার 
সারি সারি ঝলসে যাওয়া শরীর নিথর নিস্তব্ধ। 

কচিকাঁচার আসরে নিমিষেই অন্ধকার নামে 
অপেক্ষমাণ কা-ারির ছিন্নভিন্ন দেহ রক্তাক্ত, 
নিখোঁজ সংবাদের তালিকাটা দীর্ঘতর পৃষ্ঠার
ঝরেপড়া ফুলগুলো বীভৎস রূপের প্রতিচ্ছবি। 

শূন্যতার শহরে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে কর্তৃপক্ষ 
দায়ী হয় সিস্টেম, আর মানুষ ছলনার আশ্রয়ে, 
গঠিত হবে তদন্ত কমিশন অনিশ্চিত রিপোর্টের
আমাদের কান্নার জল শুকিয়ে যাবে অপেক্ষায়।

প্যানেল হু

×