ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৯ জুলাই ২০২৫, ১৩ শ্রাবণ ১৪৩২

যুক্তরাষ্ট্রে সরাসরি আঘাত করবে ইরানের খোররামশহর-৫ ক্ষেপণাস্ত্র?

প্রকাশিত: ১৮:১৭, ২৮ জুলাই ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্রে সরাসরি আঘাত করবে ইরানের খোররামশহর-৫ ক্ষেপণাস্ত্র?

ছবি: সংগৃহীত

ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি একসময় ছিল শুধুই আঞ্চলিক প্রতিরক্ষার জন্য। তবে আজ বিশ্ব রাজনীতির মানচিত্রে সবকিছু বদলে যাচ্ছে। সে বাস্তবতার আড়ালে আবডালে জন্ম নিচ্ছে এই নতুন নতুন কাহিনী যা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। সেই রহস্যময় জিনিসের নাম—খোরামশার ফাইভ।

ঘটনা শুরু কয়েকদিন আগে। ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ে একটি ভিডিও, যেখানে একটি বিশাল ক্ষেপণাস্ত্র আকাশে উঠছে। সঙ্গে সঙ্গেই গুঞ্জন শুরু হয়—এটি কি ইরানের প্রথম আন্তর্দেশীয় ব্যালস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র বা আইসিবিএম? যদিও সেই ফুটেজটি ছিল ২০২৩ সালে খোরামশার ফোর-এর। তবুও নতুন করে আলোচনার ঝড় বয়ে যায়। কারণ এইবার আলোচনা শুধু মিডিয়ার বানানো নয়, বরং প্রযুক্তির এক সম্ভাব্য রূপান্তরের ইঙ্গিত।

খোরামশার ফাইভ নামটি এতদিন আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয়নি। কিন্তু সূত্র বলছে এটি হতে পারে ইরানের প্রথম আইসিবিএম, যার পরিসীমা প্রায় ১২,০০০ কিলোমিটার। অর্থাৎ সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ডে পৌঁছাতে সক্ষম। এটি শুধু দূরত্বে নয়, বরং গতিতেও নজর কাড়ে। রিপোর্ট অনুযায়ী, এর গতিবেগ মার্ক সিক্স, অর্থাৎ ঘণ্টায় প্রায় ২০,০০০ কিলোমিটার গতিতে ছুটতে পারে। এ ধরনের গতি শুধু উন্নত দেশগুলোর হাইপারসোনিক অস্ত্র-এই দেখা যায়।

২০১৫ সালে ইরান নিজেই ঘোষণা করেছিল তারা ২০০০ কিলোমিটারের বেশি রেঞ্জের ক্ষেপণাস্ত্র বানাবে না। যুক্তি ছিল, তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আঞ্চলিক হুমকি মোকাবেলায় যথেষ্ট। কিন্তু সময় বদলেছে। ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাড়তে থাকা উত্তেজনা, আঞ্চলিক দ্বন্দ্ব এবং অপ্রোচিত আগ্রাসন—এসব হয়তো ইরানকে তার পুরনো প্রতিশ্রুতি পর্যালোচনা করতে বাধ্য করছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের আইসিবিএম তৈরি করা শুধুমাত্র রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নয়—এটি বিশাল প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জ। ক্ষেপণাস্ত্রকে মহাকাশের বাইরে পাঠানো, তারপর পুনরায় বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করিয়ে নির্ভুলভাবে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করা—সবই মহাকর্ষ, তাপ এবং গতি সম্পর্কিত জটিল গণনার খেলা।

খোরামশার ফাইভ-এ একটি দুই টন ওয়ারহেড থাকার কথা বলা হচ্ছে। যা অনেক দেশের পারমাণবিক বা বাংকার বাস্টার বোমার ক্ষমতার সমতুল্য। তবে এটি আসলে ৫,৫০০ কিলোমিটার নাকি পুরো ১২,০০০ কিলোমিটার রেঞ্জে বহনযোগ্য—তা এখনো স্পষ্ট নয়। কেননা রেঞ্জ বাড়লে পেলোড কমে যায়—এটি ক্ষেপণাস্ত্র বিজ্ঞানের প্রাথমিক সূত্র।

ইরান এরই মধ্যে হাইপারসোনিক ফাত্তাহ ক্ষেপণাস্ত্রের মাধ্যমে দেখিয়ে দিয়েছে যে, তারা তাপ প্রতিরোধী উপাদান ও জটিল গাইডেন্স সিস্টেম তৈরি করতে পারে। তাই খোরামশার ফাইভ-এর ম্যাক্স ১৬ গতি যদিও অনেকের কাছে অবিশ্বাস্য মনে হয়, তা ইরানের প্রযুক্তিগত সক্ষমতার আলোকে অস্বাভাবিক নয়।

এই মুহূর্তে খোরামশার ফাইভ একটি অপছন্ন গুজব। কারণ এটি এখনো সরকারি পর্যায় থেকে ঘোষণা করা হয়নি। তবে ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী আজিজ নাসিরজাদে যখন জুন মাসে বলেছিলেন তারা দুই টনের ওয়ারহেড সফলভাবে হাইপারসোনিক গতিতে পরীক্ষায় ব্যবহার করেছে, তখন অনেকেই এটিকে খোরামশার ফাইভ-এর ছায়া বলে ধরে নিয়েছেন।

ইরানের প্রতিরক্ষা নীতি এখন এক প্রশ্নের সামনে—কৌশলগত প্রতিরক্ষা নাকি বৈশ্বিক প্রতিপত্তি? খোরামশার ফাইভ সেই উত্তরেরই এক ইঙ্গিত বহন করে। ইরান বারবার বলেছে, তাদের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি প্রতিরক্ষামূলক। কিন্তু একবার যদি খোরামশার ফাইভ সত্যি হয়, তাহলে তা শুধু আঞ্চলিক নয়, বৈশ্বিক ব্যালেন্সেও পরিবর্তন আনতে পারে।

×