
ছবি: সংগৃহীত
পাঁচদিন ধরে চলা সীমান্ত সংঘর্ষে অন্তত ৩৬ জন নিহত হওয়ার পর থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার নেতারা ‘নির্বর্তিত ও শর্তহীন যুদ্ধবিরতির’ ঘোষণা দিয়েছেন। সোমবার (২৮ জুলাই) স্থানীয় সময় মধ্যরাত থেকে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে বলে জানানো হয়েছে।
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম পুত্রজায়ায় দুই দেশের নেতাদের মধ্যে মধ্যস্থতা করেন। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন থাইল্যান্ডের ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী ফুমথম ওয়েচায়াচাই এবং কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন মানেত।
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম বলেন, ‘এটি উত্তেজনা প্রশমনের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রথম পদক্ষেপ।’ তিনি আরও জানান, মঙ্গলবার দুই দেশের সামরিক প্রধানদের মধ্যে আরেকটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
সীমান্ত উত্তেজনার পেছনে কী ছিল?
বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) শুরু হওয়া সংঘর্ষের জন্য একে অপরকে দোষারোপ করেছে দুই দেশ। ঔপনিবেশিক যুগের মানচিত্র নিয়ে মতবিরোধ থেকেই সাম্প্রতিক এই সংঘাত শুরু হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বছরের শুরু থেকেই থাই-কম্বোডিয়া সীমান্তে উত্তেজনা বাড়তে থাকে। মে মাসে এক কম্বোডিয়ান সেনা নিহত হওয়ার পর পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে। ফেব্রুয়ারিতে সীমান্তবর্তী একটি প্রাচীন খেমার মন্দির এলাকায় কম্বোডিয়ান পর্যটকদের থাই পুলিশ জাতীয় সংগীত গাইতে বাধা দিলে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়।
থাইল্যান্ডের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, চলতি বছর এখন পর্যন্ত সীমান্ত অঞ্চল থেকে ১ লাখ ৩৮ হাজারের বেশি থাই নাগরিক সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। অপরদিকে ২০ হাজারেরও বেশি কম্বোডিয়ান আশ্রয় নিয়েছেন অন্যত্র।
দুই নেতার বক্তব্য
কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন মানেত বলেন, ‘আজকের বৈঠকটি অত্যন্ত ইতিবাচক ও ফলপ্রসূ। আমরা আশাবাদী, এই যুদ্ধবিরতি আরও প্রাণহানি ও বাস্তুচ্যুতি রোধ করবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার যে সমাধান ঘোষণা করেছেন, তা আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে সহায়ক হবে।’
থাই প্রধানমন্ত্রী ফুমথম ওয়েচায়াচাই বলেন, ‘যুদ্ধবিরতি সফলভাবে বাস্তবায়িত হবে—এই বিশ্বাস নিয়েই থাইল্যান্ড এতে সম্মত হয়েছে।’
বৈঠক শেষে মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া একটি যৌথ বিবৃতিতে জানিয়েছে, তিন দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রীদেরকে যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষণ, যাচাই ও রিপোর্টিংয়ের জন্য একটি বিস্তারিত ব্যবস্থা গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আগামী ৪ আগস্ট কাম্বোডিয়ায় ‘জেনারেল বর্ডার কমিটি’-র একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে বলেও জানানো হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের ভূমিকা
বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের কূটনীতিকরাও উপস্থিত ছিলেন। কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন মানেত জানান, যুক্তরাষ্ট্র বৈঠকের সহ-আয়োজক ছিল এবং চীনও এতে অংশ নেয়।
চীন যেমন থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক অংশীদার, তেমনি কম্বোডিয়ার ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক মিত্রও।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও সোমবার এক বিবৃতিতে বলেন, ‘কুয়ালালামপুরে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে হওয়া যুদ্ধবিরতির ঘোষণাকে যুক্তরাষ্ট্র স্বাগত জানায়।’
একইসঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শনিবার ফোনে দুই দেশের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে সতর্ক করেন যে, সংঘর্ষ চলতে থাকলে যুক্তরাষ্ট্র কোনো বাণিজ্য চুক্তিতে যাবে না। তিনি জানান, ‘যুদ্ধ না থামালে কোনো চুক্তি নয়।’
১ আগস্ট থেকে দুই দেশের পণ্যের ওপর ৩৬ শতাংশ মার্কিন শুল্ক আরোপের সম্ভাবনা রয়েছে, যা দুই দেশের ওপরই চাপ তৈরি করেছে।
বৈঠক শেষে উভয় দেশের প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার, ট্রাম্প এবং চীনকে ধন্যবাদ জানান যুদ্ধবিরতির ক্ষেত্রে সহায়তার জন্য।
সূত্র: আল জাজিরা।
রাকিব