
ইউনেস্কোর 'প্রিক্স ভার্সাই' পুরস্কারের জন্য প্রতিযোগিতা করছে চীনের ইয়েনতাই, ফ্রান্সের মার্সেই ও রিইউনিয়ন দ্বীপ, জাপানের ওসাকা, যুক্তরাষ্ট্রের পোর্টল্যান্ড ও সান ফ্রান্সিসকোর বিমানবন্দর টার্মিনালগুলো।
বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর ও স্থাপত্যশৈলীতে অনন্য বিমানবন্দর টার্মিনাল নির্বাচন করতে প্রতি বছরই আয়োজন করা হয় ‘Prix Versailles’ পুরস্কার। ইউনেস্কোর তত্ত্বাবধানে দেয়া এই সম্মাননা মূলত সৌন্দর্য, সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধা এবং স্থায়িত্বের দৃষ্টিকোণ থেকে নির্মিত ভবনগুলোকে দেওয়া হয়।
২০২৫ সালের মধ্যভাগে এই পুরস্কারের জন্য মনোনয়নপ্রাপ্ত বিমানবন্দর টার্মিনালের তালিকা প্রকাশ হয়েছে। চূড়ান্তভাবে ৬টি বিমানবন্দর টার্মিনাল মনোনীত হয়েছে, যার মধ্যে তিনটি টার্মিনাল বছরের শেষদিকে পুরস্কার লাভ করবে।
মনোনয়নপ্রাপ্ত বিমানবন্দর টার্মিনালসমূহ:
১. ইয়েনতাই পেংলাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, টার্মিনাল ২ (চীন)
শানডং প্রদেশের ইয়েনতাই শহরের এই বিমানবন্দরটি নতুন করে টার্মিনাল ২ চালু করেছে ২০২৩ সালে। ১,৬৭,০০০ বর্গমিটারের স্থাপনাটি প্রকৃতি-বান্ধব নকশায় তৈরি। কুনইউ পর্বতমালার অনুপ্রেরণায় ছাদের গঠন ও প্রাকৃতিক আলো প্রবাহের ব্যবস্থায় ‘E’ আকৃতির ডিজাইন করা হয়েছে। এয়ারপোর্টে রয়েছে রেল সংযোগ, আধুনিক লাউঞ্জ, এবং অপারেশনাল ফ্লেক্সিবিলিটি।
২. মার্সেই প্রোভঁস এয়ারপোর্ট, টার্মিনাল ১ (ফ্রান্স)
২০২৪ সালে নতুনভাবে নির্মিত এই টার্মিনালটি প্রায় ২০,০০০ বর্গমিটার জুড়ে বিস্তৃত। মার্সেইয়ের ঐতিহ্যবাহী নৌকাঘরের কাঠের উপাদান ব্যবহার করে ভবনটিকে হৃদয়াকৃতি ডিজাইনে গড়া হয়েছে। ৭০% পুনর্ব্যবহৃত স্টিল ও কাঠ দিয়ে তৈরি হওয়ায় পরিবেশগত প্রভাব খুবই কম।
৩. রোলাঁন্ড গারোস বিমানবন্দর, আগমন টার্মিনাল (রিইউনিয়ন দ্বীপ, ফ্রান্স)
ভারী শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই আরামদায়ক পরিবেশ তৈরিতে বিশেষায়িত ১৩,০০০ বর্গমিটারের এই টার্মিনালটি ৯১% স্থানীয় কর্মী দ্বারা নির্মিত। প্রাকৃতিক আলো, গাছপালা ও স্বয়ংক্রিয় লুভারের মাধ্যমে এটি একটি টেকসই স্থাপনা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
৪. কানসাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, টার্মিনাল ১ (জাপান)
ওসাকার কৃত্রিম দ্বীপে অবস্থিত কানসাই বিমানবন্দরের টার্মিনাল ১ সম্প্রতি ২৫% সম্প্রসারিত হয়েছে। এক্সপো ২০২৫-এর আগে নতুন সাজে আবির্ভূত এ টার্মিনালে রয়েছে ঐতিহ্যবাহী জাপানি উপাদানের অভ্যন্তরীণ নকশা ও আধুনিক কিউ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম।
৫. পোর্টল্যান্ড আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, মেইন টার্মিনাল (যুক্তরাষ্ট্র)
‘বনের মাঝে হাঁটার’ ভাবনাকে কেন্দ্র করে নির্মিত এই টার্মিনালে ব্যবহৃত সব উপকরণ এসেছে স্থানীয় উৎস থেকে, ৫০০ কিলোমিটারের মধ্যে। কাঠ ও প্রাকৃতিক আলো ব্যবহারের মাধ্যমে ভেতরের পরিবেশকে প্রাকৃতিক করা হয়েছে। স্থাপনায় আধুনিকতা, দক্ষতা ও পরিবেশবান্ধব দিক গুরুত্ব পেয়েছে।
৬. সান ফ্রান্সিসকো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, টার্মিনাল ১ (যুক্তরাষ্ট্র)
এই টার্মিনালটি স্থায়িত্ব ও অন্তর্ভুক্তিমূলক দৃষ্টিভঙ্গির অনন্য নিদর্শন। হাভি মিল্কের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে নকশা করা হয়েছে ভবনটি। প্রাকৃতিক আলো প্রবাহ, শক্তি ব্যবহার ৫৯% হ্রাস ও ২৫টি নতুন বোর্ডিং গেটসহ রয়েছে সান ফ্রান্সিসকো সংস্কৃতিকে তুলে ধরার ‘SFO মিউজিয়াম’।
চূড়ান্ত বিজয়ী ঘোষণা ডিসেম্বর ২০২৫-এ
এই ৬টি টার্মিনালের মধ্য থেকে স্থাপত্য-সৌন্দর্য, স্থানীয় সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধা এবং পরিবেশগত টেকসইতার ভিত্তিতে তিনটি টার্মিনালকে ‘বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর বিমানবন্দর টার্মিনাল’ হিসেবে পুরস্কার দেওয়া হবে ২০২৫ সালের ডিসেম্বরে।
এই পুরস্কার শুধু ভবনের নান্দনিকতা নয়, বরং তা সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের পরিচয়, পরিবেশ এবং মানুষের সঙ্গে যুক্ত থাকার গল্পও তুলে ধরে।
রিফাত