ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৯ জুলাই ২০২৫, ১৪ শ্রাবণ ১৪৩২

বাকেরগঞ্জে ঝুঁকিপূর্ণ ২০ ভবনে চলছে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কার্যক্রম

নিজস্ব সংবাদদাতা, বাকেরগঞ্জ, বরিশাল

প্রকাশিত: ১৩:৫৭, ২৯ জুলাই ২০২৫

বাকেরগঞ্জে ঝুঁকিপূর্ণ ২০ ভবনে চলছে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কার্যক্রম

ছবি: জনকণ্ঠ

বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলায় মাধ্যমিক ও নিম্ন মাধ্যমিক ৮৪টি বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে ২০টি বিদ্যালয়ের ভবন ঝুঁকিপূর্ণ ও জরাজীর্ণ। আর এসব ভবনেই চলছে শিক্ষার্থীদের পাঠদান।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ১২টি বিদ্যালয়ের ভবন ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় থাকলেও ওই তালিকার বাইরেও আরও ৮টি বিদ্যালয়ের ভবন ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।

এসব ভবনের অধিকাংশই নির্মিত হয়েছে দুই থেকে তিন দশক আগে। সময়ের পরিক্রমায় ভবনগুলোর ছাদে ফাটল দেখা দিয়েছে, দেয়ালের পলেস্তারা খসে পড়ছে প্রতিনিয়ত। কোথাও আবার টিনের চাল ছিদ্র হয়ে বৃষ্টির পানি শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করছে।

জানা গেছে, এসব ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে প্রতিদিন পাঠদান করছেন শিক্ষকরা, আর জীবন ঝুঁকি নিয়ে শ্রেণিকক্ষে বসে পাঠ নিচ্ছে হাজার হাজার শিক্ষার্থী। বর্ষা মৌসুমে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে। বৃষ্টির সময় ছাদ থেকে পানি পড়ে শ্রেণিকক্ষ ভিজে যায়, অনেক সময় বই-খাতাও নষ্ট হয়। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে দেখা দিয়েছে চরম উদ্বেগ ও আতঙ্ক।

সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোর মধ্যে রয়েছে ১৪ নম্বর নিয়ামতি ইউনিয়নের কাফিলা রামনগর মাধ্যমিক বিদ্যালয়। এটি উপজেলার অন্যতম প্রাচীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ১৯৪৭ সালে স্থানীয় শিক্ষানুরাগী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ মহিউদ্দিন মিয়া ১ একর ৯০ শতাংশ জমির উপর বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৮৫ সালে এটি এমপিওভুক্ত হয়। ১৯৯০ সালে সরকারিভাবে দুটি পাঠদান কক্ষ ও একটি অফিস কক্ষের একতলা ভবন নির্মিত হলেও সেটি এখন চরমভাবে জরাজীর্ণ।

শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা প্রায় এক যুগ ধরে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই ভবনে ক্লাস নিচ্ছেন। ভবনটির ছাদে ফাটল, দেয়ালে চির ধরেছে, পলেস্তারা খসে পড়ছে। বৃষ্টিতে ছাদ চুইয়ে পানি শ্রেণিকক্ষে পড়ে এবং মাঝে মধ্যে ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ে শিক্ষার্থীদের মাথার উপর, ফলে ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটেই চলছে। যেকোনো সময় ভবনটি ধসে পড়ে বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে।

শিক্ষার্থী সংখ্যা বাড়ায় বিদ্যালয়টির নিজস্ব অর্থায়নে ২০০৪ সালে ১২০ ফুট দৈর্ঘ্যের ৫ কক্ষবিশিষ্ট একটি সেমিপাকা টিনসেট ভবন নির্মাণ করা হয়। বর্তমানে ওই সেমিপাকা ভবনটিও ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। তবে অন্য শ্রেণিকক্ষ না থাকায় বাধ্য হয়েই শিক্ষার্থীরা ওই ভবনে ক্লাস করছেন।

বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক মো. জহিরুল ইসলাম জনকণ্ঠ-কে জানান, বৃষ্টি নামলেই শ্রেণিকক্ষে পানি ঢুকে পড়ে। শিক্ষার্থীদের নিরাপদ ও মানসম্মত শিক্ষা পরিবেশ নিশ্চিত করতে একটি নতুন ভবন নির্মাণ জরুরি হয়ে পড়েছে।

এছাড়াও ঝুঁকিতে রয়েছে বোয়ালিয়া জেএম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভবন। ১৯৫৯ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হলেও এখন পর্যন্ত সেখানে কোনো পাকা ভবন নির্মাণ হয়নি। ২০০৭ সালে দুটি টিনসেট সেমিপাকা ভবন নির্মিত হলেও সেগুলোও এখন জরাজীর্ণ। চার শতাধিক শিক্ষার্থীর জন্য শ্রেণিকক্ষে পড়াশোনার সময় ছাতা মাথায় দিতে হয়। ভবনের দরজা-জানালা ভেঙে গেছে, দেয়ালে চির ধরেছে, প্লাস্টার খসে পড়ছে।

এ বিষয়ে বাকেরগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম জনকণ্ঠ-কে বলেন, “ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোর ব্যাপারে আমরা অবগত আছি। ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পুনঃনির্মাণ ও সংস্কারের জন্য আবেদন করা হয়েছে। আশা করছি দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”

মুমু ২

×