
ঢাকার দুইটি নতুন মেট্রোরেল প্রকল্প এমআরটি লাইন-১ ও লাইন-৫ নিয়ে বাজেট উদ্বেগ ক্রমেই বাড়ছে। বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) জানিয়েছে, প্রাপ্ত দরপত্র অনুযায়ী প্রকল্প দুটির সম্ভাব্য নির্মাণ ব্যয় ২ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে, যা সরকার ঘোষিত প্রাথমিক অনুমানের দ্বিগুণ।
এর মানে প্রতি কিলোমিটার নির্মাণে খরচ হবে ৩ হাজার কোটি টাকারও বেশি, যেখানে উত্তরা-কামালাপুর মেট্রোরেলের প্রতি কিমিতে খরচ হয়েছে আনুমানিক ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা।
ছবি: সংগৃহীত
খরচে শীর্ষে বাংলাদেশ
ভারত, থাইল্যান্ড, তুরস্ক, ভিয়েতনাম এমনকি অস্ট্রেলিয়ার মতো উন্নত বা মধ্য আয়ের দেশগুলোতেও মেট্রোরেল নির্মাণে কিমিপ্রতি খরচ অনেক কম। যেমন ভারতের পাটনায় ৮ কিমি মেট্রোর খরচ ৪৫০ কোটি টাকা প্রতি কিমিতে, আর থাইল্যান্ডের ব্যাংককে এটি ৭৪০ কোটি। সেখানে বাংলাদেশে একই দূরত্বে খরচ হচ্ছে চার থেকে ছয় গুণ বেশি।
এছাড়া পরামর্শকের খরচেও বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে। যেখানে ব্যাঙ্গালুরু মেট্রোতে পরামর্শ ফি ছিল ২০৯ কোটি টাকা, সেখানে এমআরটি লাইন-১ এ তা ১,৩৭৪ কোটি টাকা।
এমআরটি লাইন-১ ও ৫: খরচের চিত্র
প্রকল্প অনুযায়ী, এমআরটি লাইন-১ এর আন্ডারগ্রাউন্ড অংশের তিনটি দরপত্রেই ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৩১ হাজার কোটি টাকা প্রতি কিমিতে ২,৩৭৪ কোটি টাকা। পুরো প্রকল্পের ব্যয় জমি অধিগ্রহণ, বেতন, কর ইত্যাদি যুক্ত করে গিয়ে দাঁড়াতে পারে ৯৪ হাজার কোটি টাকার বেশি।
অন্যদিকে এমআরটি লাইন-৫ এর ৫.৫ কিমি আন্ডারগ্রাউন্ড অংশে জাপানি কোম্পানি তাইসেই কর্পোরেশন প্রস্তাব করেছে ১৫ হাজার ৫২৭ কোটি টাকা প্রতি কিমিতে প্রায় ২,৮২৮ কোটি টাকা। অথচ ২০১৯ সালের প্রাথমিক বাজেট ছিল মাত্র ৩ হাজার ৯৬৮ কোটি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন হারে খরচ বাড়লে প্রকল্পের মোট ব্যয় এক লাখ কোটি ছাড়িয়ে যাবে।
মূল সমস্যা: প্রতিযোগিতাহীন দরপত্র
বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রকল্প ব্যয়ের প্রধান কারণ হচ্ছে একচেটিয়া জাপানি নিয়ন্ত্রণ। অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠান জাইকা এমন শর্ত দিয়েছে যাতে কেবল জাপানি কোম্পানিগুলোই দরপত্রে অংশ নিতে পারে। ফলে প্রতিযোগিতা নেই, দর কমানোর সুযোগও নেই।
ডিএমটিসিএল জানিয়েছে, feasibility study থেকে শুরু করে বাস্তবায়ন পর্যন্ত জাপানি কোম্পানিগুলোর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। এমনকি দরপত্রের টেকনিক্যাল শর্তগুলোও এমনভাবে বানানো যে অন্য দেশগুলোর প্রযুক্তি সেগুলোর সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারে না।
এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে জানান, প্রাক-যোগ্যতা পেলেও শেষ পর্যন্ত মাত্র দুটি জাপানি কোম্পানি দরপত্র জমা দেয়। ফলে তারা নিজেদের ইচ্ছেমতো দাম নির্ধারণ করতে পারছে।
ছবি: সংগৃহীত
"হোয়াইট এলিফ্যান্ট" হতে পারে প্রকল্প
বুয়েটের অধ্যাপক ড. শামসুল হকের মতে, প্রতি কিমিতে ৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয় বিশ্ব রেকর্ড হতে পারে। তার ভাষায়, এটি স্পষ্টভাবে ওভারভ্যালুড প্রকল্প। এতে সরকারকে দীর্ঘ সময় ধরে বড় অঙ্কের ভর্তুকি দিতে হবে, যা অর্থনীতির ওপর চরম চাপ সৃষ্টি করবে।
তিনি বলেন, জাপানি প্রযুক্তি ও পরামর্শকদের একচেটিয়া ভূমিকা এবং মেরামত পর্যন্ত তাদের উপর নির্ভরতা ভবিষ্যতেও খরচ বাড়াবে। ভাড়াও যদি সেই অনুযায়ী নির্ধারিত হয়, তবে সাধারণ মানুষের ওপর মারাত্মক বোঝা চাপবে।
Jahan