ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৯ জুলাই ২০২৫, ১৪ শ্রাবণ ১৪৩২

আপনার ফুসফুস প্রতিদিন ধ্বংস হচ্ছে এই ১টি অভ্যাসে – এখনই জেনে নিন!

প্রকাশিত: ০৬:৪০, ২৯ জুলাই ২০২৫

আপনার ফুসফুস প্রতিদিন ধ্বংস হচ্ছে এই ১টি অভ্যাসে – এখনই জেনে নিন!

ছবি: সংগৃহীত

ফুসফুস আমাদের শরীরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ, যা শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে অক্সিজেন গ্রহণ ও কার্বন ডাই অক্সাইড ত্যাগের মাধ্যমে আমাদের বাঁচিয়ে রাখে। অথচ আমাদের দৈনন্দিন জীবনের এমন একটি অভ্যাস আছে, যা অজান্তেই এই গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গটিকে প্রতিদিন ধ্বংস করে চলেছে। চিকিৎসকরা বলছেন, এই অভ্যাসটি এতটাই ব্যাপক এবং এর ক্ষতিকর প্রভাব এতটাই সুদূরপ্রসারী যে, অনেকেই এর ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কে সচেতন নন। আর সেই অভ্যাসটি হলো: বায়ু দূষণ উপেক্ষা করা এবং দূষিত পরিবেশে শ্বাস নেওয়া।

আমরা প্রায়শই বায়ু দূষণকে একটি বড় সমস্যা হিসেবে দেখি বটে, কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে এর প্রভাবকে ততটা গুরুত্ব দিই না। অথচ, কলকারখানা, গাড়ির ধোঁয়া, নির্মাণ কাজ, ফসলের খড় পোড়ানো এবং এমনকি ঘরের ভেতরে তৈরি হওয়া ধোঁয়া ও রাসায়নিক পদার্থ আমাদের ফুসফুসের জন্য 'নীরব ঘাতক' হয়ে উঠছে।

বায়ু দূষণ কেন ফুসফুসের জন্য এত বিপজ্জনক?
১. সূক্ষ্ম কণার প্রবেশ: বায়ু দূষণে থাকা ক্ষতিকারক সূক্ষ্ম কণা (PM2.5) এতটাই ছোট যে, সেগুলো সহজেই ফুসফুসের গভীরে প্রবেশ করতে পারে এবং এমনকি রক্তপ্রবাহেও মিশে যেতে পারে। এই কণাগুলো ফুসফুসের কোষ ও টিস্যুর ক্ষতি করে।

২. প্রদাহ সৃষ্টি: দূষিত কণাগুলো ফুসফুসে প্রবেশ করার পর প্রদাহ সৃষ্টি করে। দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ ফুসফুসের কার্যকারিতা নষ্ট করে এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা বাড়ায়।

৩. ফুসফুসের রোগ বৃদ্ধি: বায়ু দূষণ ফুসফুসের বিভিন্ন গুরুতর রোগের ঝুঁকি বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়, যেমন:
* অ্যাজমা (হাঁপানি): যাদের অ্যাজমা আছে, দূষিত বায়ু তাদের অ্যাজমার আক্রমণ বাড়ায় এবং নতুন করে অ্যাজমা হওয়ার ঝুঁকিও তৈরি করে।
* ক্রনিক অবস্ট্রাক্টিভ পালমোনারি ডিজিজ (COPD): ধূমপানের পাশাপাশি বায়ু দূষণ COPD এর অন্যতম প্রধান কারণ। এটি ফুসফুসের কার্যক্ষমতা ধীরে ধীরে নষ্ট করে।
* ফুসফুসের ক্যান্সার: বায়ু দূষণকে ফুসফুসের ক্যান্সারের একটি প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, যা ধূমপানের মতোই বিপজ্জনক হতে পারে।
* ব্রঙ্কাইটিস ও নিউমোনিয়া: দূষিত বায়ু ফুসফুসের সংক্রমণ এবং প্রদাহের ঝুঁকি বাড়ায়।

৪. হৃদপিণ্ডের ওপর প্রভাব: ফুসফুসের ক্ষতি ছাড়াও, বায়ু দূষণের কণাগুলো রক্তপ্রবাহে প্রবেশ করে হৃদপিণ্ডের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এটি হৃদরোগ, হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

৫. শিশুদের ফুসফুসের বিকাশ ব্যাহত: শিশুদের ফুসফুস বিকাশের পর্যায়ে থাকায় তারা বায়ু দূষণের প্রতি বেশি সংবেদনশীল। দূষিত বায়ু শিশুদের ফুসফুসের সঠিক বিকাশ ব্যাহত করতে পারে এবং তাদের শ্বাসযন্ত্রের দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

আপনার ফুসফুসকে সুরক্ষিত রাখতে কী করবেন?
এই নীরব ঘাতক অভ্যাস থেকে নিজেদের বাঁচাতে এবং ফুসফুসকে সুরক্ষিত রাখতে কিছু সচেতনতামূলক পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি:

বায়ু দূষণ সূচক নিরীক্ষণ: আপনার এলাকার বায়ু দূষণ সূচক (Air Quality Index - AQI) নিয়মিত পরীক্ষা করুন। যখন দূষণের মাত্রা বেশি থাকে, তখন বাইরে বের হওয়া সীমিত করুন।

মাস্ক ব্যবহার: উচ্চ দূষণের মাত্রার এলাকায় বা নির্মাণ কাজের আশেপাশে থাকলে N95 বা KN95 মাস্ক ব্যবহার করুন।

ঘরের বাতাস পরিষ্কার রাখা: ঘরের ভেতরেও বায়ু দূষণ হতে পারে (যেমন রান্নাঘরের ধোঁয়া, মোমবাতি, মশা মারার কয়েল)। বায়ু চলাচল নিশ্চিত করুন এবং প্রয়োজনে এয়ার পিউরিফায়ার ব্যবহার করুন।

ধূমপান পরিহার: নিজে ধূমপান করবেন না এবং ধূমপায়ীদের থেকে দূরে থাকুন। সেকেন্ডহ্যান্ড স্মোক ফুসফুসের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।

গাছ লাগান: গাছপালা বাতাস পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। সম্ভব হলে আপনার আশেপাশে গাছ লাগান এবং ঘরে ইনডোর প্ল্যান্ট রাখুন।

পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার: ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার কমিয়ে গণপরিবহন বা সাইকেল ব্যবহার করুন, যা বায়ু দূষণ কমাতে সহায়ক।

সুষম খাদ্য ও পর্যাপ্ত পানি: অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ ফল ও সবজি এবং পর্যাপ্ত পানি পান শরীরকে দূষণের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।

মনে রাখবেন, আপনার ফুসফুস অমূল্য। বায়ু দূষণকে উপেক্ষা করার অভ্যাস আপনার ফুসফুসকে প্রতিদিন ধ্বংস করছে। আজই সচেতন হোন এবং আপনার ফুসফুসকে সুরক্ষিত রাখতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিন। আপনার ফুসফুসকে ভালোবাসুন, কারণ এটি আপনার জীবনের প্রতিটি শ্বাসের উৎস।

ফারুক

×