ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৯ জুলাই ২০২৫, ১৪ শ্রাবণ ১৪৩২

গাজায় কেউ ক্ষুধায় মারা যাচ্ছে না, এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা: নেতানিয়াহু

প্রকাশিত: ০৭:৪৯, ২৯ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ০৭:৫০, ২৯ জুলাই ২০২৫

গাজায় কেউ ক্ষুধায় মারা যাচ্ছে না, এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা: নেতানিয়াহু

ছবিঃ রয়টার্স

গাজায় চলমান মানবিক সংকট নিয়ে সরব হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, “ওখানে বাস্তব ক্ষুধা চলছে,” যদিও ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এ দাবি প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, গাজায় কোনো ক্ষুধা নেই।

স্কটল্যান্ডে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমারের সঙ্গে এক বৈঠকে ট্রাম্প বলেন, “আমি জানি না নেতানিয়াহু কী বলছেন, কিন্তু ওই শিশুদের দেখলে বোঝা যায়—ওরা খুবই ক্ষুধার্ত। এটা আসলেই ক্ষুধা।”

তিনি আরও বলেন, “ওখানে কেউই খুব একটা ভালো কিছু করেনি। সবকিছুই জগাখিচুড়ি। আমি ইসরায়েলকে বলেছি, হয়তো ওদের অন্যভাবে কিছু করতে হবে।”

ট্রাম্পের মন্তব্য আসে এমন এক সময়, যখন জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা প্রধান টম ফ্লেচার বলেন, গাজায় খাদ্য সংকট রোধে "অত্যন্ত বড় পরিমাণে খাদ্য সহায়তা" প্রয়োজন। তিনি জানান, যদিও ইসরায়েল সম্প্রতি কিছু সহায়তা প্রবেশ করতে দিয়েছে, তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় “সমুদ্রের ফোঁটার মতো।”

রবিবার ইসরায়েল সামরিক বাহিনী ১০ ঘণ্টার “স্থানীয় কৌশলগত বিরতি” ঘোষণা করে, যাতে সহায়তা কনভয় গাজায় প্রবেশ করতে পারে। ওই দিন জর্ডান ও সংযুক্ত আরব আমিরাত মিলে ২৮টি খাদ্য প্যাকেট বিমান থেকে গাজায় ফেলে দেয়। ইসরায়েলের দাবি, ওই দিন ১২০টি লরি সহায়তা গাজায় প্রবেশ করে।

কিন্তু জাতিসংঘ প্রধান ফ্লেচার বলছেন, তারা এর চেয়ে অনেক কম সংখ্যক লরি সংগ্রহ করতে পেরেছেন, এবং অধিকাংশ লরি "ক্ষুধার্ত জনগণের হাতে লুটপাট হয়।" তিনি বলেন, “আমাদের চালকদের জন্য এটা ভয়াবহ ঝুঁকিপূর্ণ।”

তিনি সতর্ক করে বলেন, এই বিরতি যদি এক সপ্তাহের বেশি না চলে, তবে তা একেবারেই অপ্রতুল। “একটা দীর্ঘ মেয়াদি মানবিক সহায়তা দরকার — কয়েক সপ্তাহ, এমনকি কয়েক মাস। শেষ পর্যন্ত আমাদের একটা যুদ্ধবিরতির দরকার।”

এদিকে গাজার হামাস-শাসিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, রবিবার malnutrition বা অপুষ্টিতে আরও ১৪ জন মারা গেছেন। অক্টোবর ২০২৩ থেকে শুরু হওয়া যুদ্ধে এখন পর্যন্ত অপুষ্টিতে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৪৭ জনে, যার মধ্যে ৮৮ জনই শিশু।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) বলেছে, গাজায় malnutrition বা অপুষ্টিজনিত মৃত্যু জুলাই মাসে ভয়াবহভাবে বেড়েছে। ২০২৫ সালে এখন পর্যন্ত ৭৪ জন এমন মৃত্যুর শিকার হয়েছেন, যার মধ্যে ৬৩ জনই জুলাই মাসে মারা গেছেন।

এদিকে, নেতানিয়াহু বলেন, “গাজায় কেউ ক্ষুধায় মারা যাচ্ছে না। এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমরা নিয়মিতই মানবিক সহায়তা প্রবেশ করতে দিচ্ছি। না হলে গাজায় কেউ থাকত না।” তিনি জাতিসংঘকে অভিযুক্ত করে বলেন, তারা ইচ্ছাকৃতভাবে সহায়তা বিতরণে ব্যর্থ হচ্ছে। “মিথ্যা বলা বন্ধ করুন, অজুহাত দেয়া বন্ধ করুন।”

হামাস দাবি করেছে, তারা কোনো সহায়তা চুরি করেনি। নিউইয়র্ক টাইমস এবং রয়টার্স এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি সামরিক কর্মকর্তারা স্বীকার করেছেন যে হামাসের পক্ষে পরিকল্পিতভাবে সহায়তা চুরি করার কোনো প্রমাণ তারা পাননি।

স্থানীয় হাসপাতাল সূত্র জানায়, সোমবার রাতে ইসরায়েলি হামলায় ৩০ জনের বেশি নিহত হয়েছেন, যাদের অনেকেই খাদ্য সহায়তার জন্য অপেক্ষা করছিলেন।

৭ অক্টোবর ২০২৩ সালে হামাসের হামলায় ইসরায়েলে ১২০০ জন নিহত এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করে নেওয়ার পর থেকে গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান চলছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, এরপর থেকে এখন পর্যন্ত সেখানে নিহতের সংখ্যা ৫৯,৮২১ জনে পৌঁছেছে।

সূত্রঃ বিবিসি 

নোভা

×