
স্মার্টফোনের স্ক্রিনে বুঁদ হয়ে থাকা তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ছাপা পত্রিকার প্রতি আগ্রহ যখন প্রায় বিলীয়মান, ঠিক তখনই এক ব্যতিক্রমী ও প্রশংসনীয় উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, কবি নজরুল সরকারি কলেজ শাখা। শিক্ষার্থীদের মধ্যে পাঠাভ্যাস বৃদ্ধি, বিশ্লেষণধর্মী চিন্তার বিকাশ এবং সমসাময়িক বিশ্বের সঙ্গে তাদের সংযোগ স্থাপনের লক্ষ্যে কলেজ ক্যাম্পাসে একটি ‘পত্রিকা কর্নার’ স্থাপন করা হয়েছে।
কবি নজরুল সরকারি কলেজ শাখার যুগ্ম আহবায়ক (দপ্তর সম্পাদক) মো: জামাল খানের ব্যক্তিগত উদ্যোগে কলেজ মুক্তমঞ্চে এই কর্নারটি স্থাপন করা হয়। সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য উন্মুক্ত এই কর্নারে বাংলা, ইংরেজি দৈনিকের পাশাপাশি চাকরির বিজ্ঞাপন সংক্রান্ত বিভিন্ন পত্রিকা নিয়মিত সরবরাহ করা হচ্ছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ক্লাসের ফাঁকে বা অবসরে শিক্ষার্থীরা মুক্তমঞ্চের পত্রিকা কর্নারে ভিড় করছেন। দলবেঁধে পত্রিকা পাঠের এমন দৃশ্য এখন কলেজ ক্যাম্পাসের এক নতুন পরিচয়ে পরিণত হয়েছে। একাডেমিক পড়াশোনার বাইরেও জাতীয় ও আন্তর্জাতিক খবরাখবর জানার এই সুযোগকে স্বাগত জানিয়েছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
গণিত বিভাগের স্নাতক (২১-২২) বর্ষের শিক্ষার্থী আশরাফুল ইসলাম বলেন, "একজন নিয়মিত পাঠক হিসেবে আমি সবসময়ই পত্রিকা পাঠে আগ্রহী। কিন্তু লাইব্রেরি বিকেল ৩টায় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সন্ধ্যার পর পত্রিকা পড়ার কোনো সুযোগ ছিল না। আমাদের মতো যারা রাত পর্যন্ত উন্মুক্ত রিডিং রুমে পড়াশোনা করি, তাদের জন্য জামাল খান ভাইয়ের এই উদ্যোগ এক নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে। বিশেষ করে চাকরির প্রস্তুতি ও বিতর্ক চর্চার জন্য এটি যুগান্তকারী এক পদক্ষেপ।"
আশরাফুল ইসলাম আরও জানান, জামাল খানের উদ্যোগে তাদের বিতর্ক ক্লাবের কক্ষেও নিয়মিত পত্রিকা সরবরাহ করা হচ্ছে, যা বিতার্কিকদের তথ্যসমৃদ্ধ ও যুক্তিশীল হতে দারুণভাবে সাহায্য করছে। একই শিক্ষাবর্ষের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মো: আহসানুর সাগর বলেন, "প্রযুক্তির এই যুগে তরুণদের মধ্যে যখন প্রিন্ট মিডিয়ার প্রতি অনীহা বাড়ছে, তখন এমন একটি পত্রিকা কর্নার স্থাপন সত্যিই সময়োপযোগী ও প্রশংসনীয়।"
ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের নতুন বর্ষের (২৩-২৪) শিক্ষার্থী মো: রিদয় বলেন, "এই কর্নারের কারণে আমাদের মধ্যে পত্রিকা পড়ার মানসিকতা তৈরি হচ্ছে। স্মার্টফোন ছেড়ে ছাপা কাগজের খবরে চোখ রাখার এই অভ্যাসটি ক্যাম্পাসে ইতিবাচক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।"
এই উদ্যোগের পেছনের লক্ষ্য সম্পর্কে জানতে চাইলে মো: জামাল খান বলেন, "আমি বিশ্বাস করি, জ্ঞান ও চিন্তার পরিধি বাড়াতে পত্রিকা পাঠের বিকল্প নেই। আমাদের মূল উদ্দেশ্য হলো শিক্ষার্থীদের শুধুমাত্র পাঠ্যপুস্তকে সীমাবদ্ধ না রেখে তাদের বিশ্লেষণ ক্ষমতা বাড়ানো এবং বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে সচেতন করে তোলা।"
তিনি আরও বলেন, "এটি শুধু একটি কর্নার নয়, এটি একটি চিন্তার জায়গা, যেখানে শিক্ষার্থীরা মুক্তমনে ভাবতে শিখবে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সবসময়ই একটি শিক্ষিত ও দেশপ্রেমিক প্রজন্ম গড়ার লক্ষ্যে কাজ করে। এই উদ্যোগ আমাদের সেই প্রতিশ্রুতিরই একটি ছোট প্রয়াস। আমরা বিশ্বাস করি, কলম, জ্ঞান ও চিন্তাই পরিবর্তনের মূল হাতিয়ার।"
আঁখি