
ছবি: প্রতীকী
বর্তমান যুগে আমাদের অনেক কাজই মোবাইল ফোন এবং ইন্টারনেটের মাধ্যমে হয়ে থাকে। কিন্তু এই ডিজিটাল সুবিধার পাশাপাশি একটি বড় ঝুঁকিও রয়েছে—তা হলো প্রাইভেসি বা ব্যক্তিগত গোপনীয়তার নিরাপত্তা। অনেক অ্যাপ ও ওয়েবসাইট আমাদের তথ্য সংগ্রহ করে, কখনও অনুমতি ছাড়াই। তাই আমাদের উচিত এমন কিছু ফ্রি অ্যাপ ব্যবহার করা, যা আমাদের তথ্য সুরক্ষায় সাহায্য করতে পারে। নিচে এমন পাঁচটি অ্যাপ নিয়ে আলোচনা করা হলো, যেগুলো আপনার ব্যক্তিগত তথ্য রক্ষা করতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
প্রথমে বলা যায় Signal Private Messenger-এর কথা। এটি একটি মেসেজিং অ্যাপ, যা খুবই নিরাপদ। আপনি যখন কারও সঙ্গে কথা বলেন, মেসেজ পাঠান বা কল করেন, তখন এটি ‘end-to-end encryption’ ব্যবহার করে। অর্থাৎ, আপনি আর যাকে মেসেজ পাঠাচ্ছেন, শুধুমাত্র আপনাদের দুইজনই সেটি পড়তে পারেন। মাঝখানে কেউ এটি দেখতে বা শুনতে পারে না—এমনকি Signal অ্যাপ কর্তৃপক্ষও না। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি, কোনো বিজ্ঞাপন নেই এবং ওপেন সোর্স হওয়ায় নিরাপত্তার মান যাচাই করা সহজ।
দ্বিতীয় অ্যাপটি হলো Proton Mail। এটি একটি ইমেইল সার্ভিস, যা মূলত সুইজারল্যান্ডে তৈরি এবং পরিচালিত হয়। Proton Mail ব্যবহার করলে আপনার ইমেইলগুলো এনক্রিপ্ট হয়ে যায়। এর মানে, আপনি যাকে মেইল পাঠাচ্ছেন, শুধুমাত্র সেই ব্যক্তি সেটি খুলতে ও পড়তে পারবে। এমনকি হ্যাকার কিংবা মেইল সার্ভারেও কেউ মেইলটি খুলতে পারবে না। ব্যক্তিগত বা সংবেদনশীল তথ্য আদান-প্রদানের জন্য এটি খুবই উপযোগী একটি অ্যাপ।
তৃতীয় অ্যাপটি হলো DuckDuckGo Privacy Browser। এটি একটি ওয়েব ব্রাউজার, যেটি আপনার অনলাইন অ্যাক্টিভিটি ট্র্যাক করে না। সাধারণভাবে আমরা যখন গুগলে কিছু সার্চ করি, তখন গুগল আমাদের সার্চ হিস্টোরি, লোকেশন, ও অন্যান্য তথ্য সংগ্রহ করে। কিন্তু DuckDuckGo ব্যবহার করলে এমন কিছুই হয় না। এটি আপনার কোন ওয়েবসাইটে যাচ্ছেন, কী খুঁজছেন—এইসব তথ্য লুকিয়ে রাখে। ফলে আপনার অনলাইন উপস্থিতি অনেকটাই নিরাপদ হয়ে ওঠে।
চতুর্থ অ্যাপটি হলো Tor Browser। এটি একটি বিশেষ ধরনের ওয়েব ব্রাউজার, যা আপনার আইপি ঠিকানা এবং লোকেশন লুকিয়ে রাখে। আপনি যখন Tor ব্যবহার করেন, তখন আপনার ইন্টারনেট ট্র্যাফিক অনেকগুলো ‘নোড’ বা গোপন সার্ভারের মধ্যে দিয়ে যায়। এর ফলে কেউ বুঝতে পারে না, আপনি কোথা থেকে ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন বা আপনি কোন ওয়েবসাইটে যাচ্ছেন। অনেকেই এটি ব্যবহার করেন বিশেষভাবে প্রাইভেসি রক্ষার জন্য। এটি কিছুটা ধীরগতির হলেও নিরাপত্তার দিক থেকে অনেক বেশি শক্তিশালী।
পঞ্চম এবং শেষ অ্যাপটি হলো Bitwarden Password Manager। আমরা অনেক সময় বিভিন্ন ওয়েবসাইটে একই পাসওয়ার্ড ব্যবহার করি, যা নিরাপত্তার জন্য বিপজ্জনক। আবার আলাদা আলাদা পাসওয়ার্ড মনে রাখা অনেক কষ্টকর। Bitwarden এই সমস্যা সমাধান করে। এটি একটি ফ্রি পাসওয়ার্ড ম্যানেজার, যেখানে আপনি সব পাসওয়ার্ড নিরাপদভাবে সংরক্ষণ করতে পারেন। এটি ‘zero-knowledge encryption’ ব্যবহার করে, অর্থাৎ আপনার পাসওয়ার্ডের তথ্য শুধু আপনার কাছেই থাকবে। এমনকি Bitwarden কোম্পানিও জানে না আপনি কী সংরক্ষণ করেছেন।
এই পাঁচটি অ্যাপ সম্পূর্ণ ফ্রি এবং ওপেন সোর্স ভিত্তিক, যার ফলে আপনি চাইলে এর নিরাপত্তা যাচাইও করতে পারবেন। এগুলোর কোনোটি বিজ্ঞাপন দেখায় না, আবার কোনোটি আপনার তথ্য বিক্রি করেও না। বর্তমান সময়ে, যখন তথ্য চুরি ও সাইবার আক্রমণ নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে, তখন এই অ্যাপগুলো হতে পারে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য রক্ষার প্রথম লাইন অব ডিফেন্স।
আপনি যতই প্রযুক্তি ব্যবহার করুন, নিরাপত্তার ব্যাপারে সচেতন না হলে বড় ক্ষতির মুখোমুখি হতে পারেন। তাই, এখনই সময় আপনার স্মার্টফোন বা কম্পিউটারে এই ফ্রি অ্যাপগুলো ইনস্টল করে, নিজের প্রাইভেসি রক্ষা করার পদক্ষেপ নেওয়ার। প্রযুক্তির সুবিধা গ্রহণ করুন, তবে নিজের গোপনীয়তার সুরক্ষায় এক ধাপ এগিয়ে থাকুন।
এম.কে.