
ছবিঃ সংগৃহীত
ইসরায়েলি সমাজের ভেতর থেকে প্রথমবারের মতো এমন একটি জোরালো আওয়াজ উঠেছে, যা অনেকের কাছে অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে। দেশটির দুটি শীর্ষস্থানীয় মানবাধিকার সংস্থা—বেতসেলেম এবং ফিজিশিয়ানস ফর হিউম্যান রাইটস – ইসরায়েল—খোলাখুলি বলেছে: “গাজায় ইসরায়েল একটি গণহত্যা চালাচ্ছে।”
এই অভিযোগ শুধু আন্তর্জাতিক মহলের নয়, এবার তা উঠে এসেছে ইসরায়েলেরই ভেতর থেকে। এটি এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত।
সংস্থাগুলোর বক্তব্য অনুযায়ী, গত ২২ মাস ধরে গাজা উপত্যকায় যা ঘটছে—তা কোনোভাবেই সাধারণ যুদ্ধ নয়। বরং, তারা বলছে এটি একটি পরিকল্পিত ধ্বংসযজ্ঞ।
বেতসেলেমের নির্বাহী পরিচালক ইউলি নোভা বলেন
“আমরা এমন এক বাস্তবতা দেখছি যেখানে মানুষকে পরিকল্পিতভাবে বোমায় মারা হচ্ছে, অভুক্ত রাখা হচ্ছে, বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য করা হচ্ছে। গাজার মানুষ আজ কেবল আহত বা নিহত নয়—তাদের মানবিক মর্যাদা, বেঁচে থাকার অধিকার, সবকিছু ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে।”
সংবাদ সম্মেলনে প্রকাশিত দুটি বিস্তারিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজায় মানবিক বিপর্যয় শুধু ‘যুদ্ধের ফল’ নয়—এটি একটি ধারাবাহিক, পরিকল্পিত প্রক্রিয়া, যার উদ্দেশ্য একটি সমাজকে পুরোপুরি ধ্বংস করে দেওয়া।
ফিজিশিয়ানস ফর হিউম্যান রাইটস–ইসরায়েল-এর প্রতিনিধি ডা. গাই শালেভ জানান
“আমরা আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী গণহত্যার যে সংজ্ঞা আছে, বিশেষ করে ১৯৪৮ সালের জাতিসংঘ সনদের ২(গ) অনুচ্ছেদ অনুসারে বলছি—গাজায় জীবনযাপনের শর্তগুলো এমনভাবে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে, যা একটি জাতিগোষ্ঠীকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য যথেষ্ট।”
ইসরায়েলি সরকার অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
সরকারের মুখপাত্র ডেভিড মেনসার বলেন:
“এই অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই। যদি আমাদের উদ্দেশ্য গণহত্যা হতো, তাহলে আমরা গাজায় ১৯ লাখ টনেরও বেশি মানবিক সাহায্য—বিশেষ করে খাদ্য—পাঠাতাম না। এটি একেবারেই যুক্তিহীন অভিযোগ।”
তবে বহু আন্তর্জাতিক সংস্থা ও বিশেষজ্ঞ আগেই এই ধ্বংসযজ্ঞকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। দক্ষিণ আফ্রিকা ইতিমধ্যে এই বিষয়ে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে একটি মামলা আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে দায়ের করেছে। যদিও ইসরায়েল শুরু থেকেই এসব অভিযোগকে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলেই দাবি করে আসছে।
তবে এবার ইসরায়েলের ভেতর থেকেই এমন কণ্ঠস্বর উঠেছে, যা আর সহজে উপেক্ষা করা সম্ভব নয়।
মারিয়া