
ছবি: সংগৃহীত
রাশিয়ার জাতীয় বিমানসংস্থা এরোফ্লটের ডিজিটাল নাশকতার দায় যারা নিয়েছে, তারা অতীতেও বেশ কিছু বড় ধরনের সাইবার হামলা চালানোর দাবি করেছে—এমনই জানিয়েছে সংবাদ সংস্থা রয়টার্স।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কোর সরকার উৎখাতের শপথ নেওয়া দীর্ঘদিনের হ্যাকটিভিস্ট গোষ্ঠী ‘বেলারুশিয়ান সাইবার পার্টিজানস’ অপেক্ষাকৃত কম পরিচিত আরেক দল ‘সাইলেন্ট ক্রো’–এর সঙ্গে মিলিত হয়ে সোমবারের (২৮ জুলাই) ঘটনায় দায় স্বীকার করেছে। ওই অনুপ্রবেশে ডজন ডজন ফ্লাইট বাতিল হয় এবং রাশিয়াজুড়ে ভ্রমণে বিঘ্ন ঘটে।
২০২০ সালে লুকাশেঙ্কোর পুনর্নির্বাচনের পর ব্যাপক বিক্ষোভের পটভূমিতে আত্মপ্রকাশ করে সাইবার পার্টিজানস। এরপর থেকে তারা বেলারুশের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম ওয়েবসাইট বিকৃতি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্য বারবার চুরি এবং ২০২২ সালে বেলারুশিয়ান রেলওয়ের ওপর হামলার দায় স্বীকার করেছে—যা মালামাল পরিবহনে প্রভাব ফেলেছিল বলে তাদের দাবি। গত বছর তারা সার কারখানা ‘গ্রদনো আজট’-এ ধারাবাহিক হামলারও দাবি করে, যেখানে প্ল্যান্টের বয়লার পরিচালনায় হস্তক্ষেপ করার কথা বলা হয়েছিল।
রয়টার্স জানায়, এসব দাবির সবকটি স্বাধীনভাবে যাচাই করা তাদের পক্ষে সম্ভব হয়নি বা এদের প্রকৃত প্রভাব মাপা যায়নি। তবে অতীতে হ্যাকারদের চুরি করা তথ্য বেলিংক্যাটের মতো ওপেন–সোর্স অনুসন্ধানী দলগুলো মিলিয়ে দেখে নিশ্চিত করেছে।
সোমবার রয়টার্সকে সাইবার পার্টিজানসের মুখপাত্র ইউলিয়ানা শেমেতোভেত্স বলেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্র থেকে কাজ করেন এবং দলে প্রায় ৩০ জন মূল সদস্য আছেন—যাদের বেশিরভাগই বেলারুশের বাইরে।
‘সাইলেন্ট ক্রো’ তুলনামূলকভাবে আড়ালে থাকা একটি গোষ্ঠী। তারা এ বছর রাশিয়ার একটি রিয়েল-এস্টেট ডেটাবেস, রাষ্ট্রীয় টেলিকম কোম্পানি, একটি বড় বীমা প্রতিষ্ঠান, মস্কো সিটি সরকারের আইটি বিভাগ এবং দক্ষিণ কোরীয় গাড়ি নির্মাতা কিয়ার (KIA) রাশিয়া কার্যালয়ে হামলার দায় নেওয়ার দাবি করেছে।
রুশ সাইবার নিরাপত্তা সংস্থা Bi.Zone তাদের উন্মুক্ত ডাটাবেজের এক নথিতে জানিয়েছে, সাইলেন্ট ক্রোকে তারা ২০২২ সালের মাঝামাঝি থেকে সক্রিয় একটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত গোষ্ঠী হিসেবে ট্র্যাক করছে; গোষ্ঠীটির ইউক্রেনপন্থী একাধিক হ্যাকার নেটওয়ার্কের সঙ্গে সম্ভাব্য যোগসূত্র থাকতে পারে। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার আগ্রাসনের পর থেকেই ইউক্রেন ও রাশিয়া যুদ্ধে লিপ্ত।
সাইলেন্ট ক্রোর সঙ্গে তাৎক্ষণিকভাবে যোগাযোগ করতে পারেনি বলে জানিয়েছে গণমাধ্যম রয়টার্স। Bi.Zone–ও মন্তব্যের অনুরোধে সাড়া দেয়নি।
বেলারুশিয়ান সাইবার পার্টিজানসের সদস্যদের মধ্যেও ইউক্রেনপন্থী যোগাযোগ থাকতে পারে। জুনে রুশ অ্যান্টিভাইরাস প্রতিষ্ঠান ক্যাসপারস্কির গবেষকেরা জানান, তারা সন্দেহভাজন এক সদস্যকে ‘আইটি আর্মি অব ইউক্রেন’–নামের টেলিগ্রাম গ্রুপে সক্রিয় অবস্থায় শনাক্ত করেছেন; কিয়েভ সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় থাকা এই গ্রুপে বহু ইউক্রেনপন্থী হ্যাকার যুক্ত।
তবে শেমেতোভেত্স রয়টার্সকে বলেন, এরোফ্লটে হামলার ক্ষেত্রে সাইবার পার্টিজানস কোনো রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বা গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করেনি।
ইউক্রেনীয় হ্যাকার মহলের পরিচিত মুখ আন্দ্রিই বারানোভিচও বলেন, স্বাধীন গোষ্ঠীগুলো অনেক সময় চুরি করা তথ্য ইউক্রেনের গোয়েন্দা সংস্থাকে দিয়ে থাকে বটে, তবে তার জানামতে, এরোফ্লটে হামলায় কোনো রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা ছিল না।
সূত্র: রয়টার্স।
রাকিব