ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ৩০ জুলাই ২০২৫, ১৪ শ্রাবণ ১৪৩২

তিস্তা নদীর তিন রূপ! মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নই একমাত্র সমাধান

মন্জুরুল আহসান শামীম, কাউনিয়া, রংপুর

প্রকাশিত: ১৬:৫৮, ২৯ জুলাই ২০২৫

তিস্তা নদীর তিন রূপ! মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নই একমাত্র সমাধান

ছবি: দৈনিক জনকন্ঠ।

উত্তর জনপদের জীবন সীমারেখা নামে পরিচিত তিস্তা নদী। ভারতের গজলডোবার তিস্তা নদীর উজানে বাঁধ নির্মাণ করায় এবং পানির ন্যায্য হিস্যা না দেওয়ায় ধীরে ধীরে তিস্তা নদী পানি শূন্য হয়ে কংকালসারে পরিণত হয়। ফলে তিস্তা নদী বর্ষা মৌসুমে পানি পেয়ে ভরা যৌবন ফিরে পায় আর শুকনো মৌসুমে থাকে হাঁটু পানি আর শুধুই ধু-ধু বালুচর।

ভারতের গজল ডোবার দো-মোহনী থেকে শুরু করে বাংলাদেশের নীলফামারী জেলার সীমান্ত দিয়ে নদী মাতৃক দেশ বাংলাদেশে প্রবেশ করে এ দেশের অন্যতম প্রধান নদী তিস্তা। দেশের উত্তরের জেলা নীলফামারী, রংপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার ভেতর দিয়ে এঁকে-বেঁকে তিস্তা নদীর বিসর্জন হয়েছে ব্রক্ষ্মপুত্র নদের বুকে। তিস্তার এই প্রবাহ ধারা বাংলাদেশে রয়েছে ১১৫ কিলোমিটার। বিশাল এ তিস্তার সন্তানও রয়েছে অনেক।

তার মধ্যে করতোয়া, মরাসতী, ছোট তিস্তা, বুড়ি তিস্তা অন্যতম। কিন্তু বর্ষায় তিস্তায় পানি প্রবাহ কম, নদী ভাঙন, ফসলহানি এসব থেকে পরিত্রাণ পেতে রংপুর বিভাগের ৫ জেলার কোটি মানুষের একটাই দাবি তাদের বাঁচাতে তিস্তা নদী খনন ও পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়। তারা বলছেন, বিষয়টিতে সরকারের নজর দেওয়া জরুরি। চর নিজপাড়া গ্রামের জহির রায়হান বলেন, তিস্তা নদী প্রতি বছর শত শত বাড়িঘর গিলে খায়, বন্যায় মানুষের ভোগান্তি চিরদিনের।

চর নাজিরদহ গ্রামের আবুল হোসেন বলেন, তিস্তা'র তিন রূপ। শীত মৌসুমে হাঁটুজল, শীত শেষে শুধু বালু আর বালু, বর্ষা মৌসুমে ভরা নদী উপচে হয় বন্যা। এ নিয়েই বাচি আছি হামরা ৩০টি চরাঞ্চলের লাখো মানুষেরা। কত মন্ত্রী নেতারা কথা দিলো নদী খোরা হইবে, বাঁধ হইবে, হামরাও আন্দোলন করনো, কামের কাম কিছুই হইলো না, যেই নদী আর সেই নদী এলাও হামাক কাঁদায় বারো মাস। এ অবস্থা থেকে মুক্তির জন্য বাংলাদেশ সরকার ২০০৭ সালের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ-ভারত তিস্তা পানি চুক্তিতে বসে সিদ্ধান্ত হয় তিস্তার পানি ৩৬ শতাংশ পাবে বাংলাদেশ আর ৩৯ শতাংশ পাবে ভারত আর বাকি ২০ শতাংশ পানি নদী সংরক্ষণের জন্য রাখা হবে। কিন্তু পরবর্তীতে ভারত গজল ডোবায় বাঁধ নির্মাণ করে পানি প্রবাহ আটকে দেয়।

ফলে তিস্তার তলদেশে অজস্র পাথর, নুড়ি, বালু আর পলি পড়ে ভরাট হয়ে যায় তিস্তার বুক তাই বর্ষা মৌসুমে তিস্তার পানি আছড়ে পড়ে নদীর দুই ধারে। সে কারণে প্রতি বছর ২০ হাজার মানুষ হয় গৃহহারা, গাছপালা, আবাদি জমি হারিয়ে অনেকে হয়ে যায় পথের ভিখারি। এছাড়াও বর্ষা মৌসুমে ভারত অতিরিক্ত পানি ছেড়ে দেওয়ায় নদীর দু'পারের মানুষের জমি, ঘরবাড়ি ডুবে সর্বস্বান্ত করে দেয় নদী আর খরা মৌসুমে পানি অভাবে ইরি বোরোসহ অন্যান্য ফসলের চাষাবাদ করতে পারে না নদী তীরের মানুষরা। একসময় সারিসারি নৌকা মালবোঝাই করে পাল তুলে দেশের বিভিন্ন জায়গা যেতো, বর্তমানে সেগুলো এখন কল্প কাহিনীর মতো। নৌ যোগাযোগ বন্ধ হয়ে পড়ায় কর্মহীন হয়ে পড়েছে শতাধিক মানুষ। এছাড়াও সরকারের নদী শাসনের পরিকল্পিত পরিকল্পনার অভাবে নদীর মাঝ খান উঁচু হয়ে পানি দু'পারে প্লাবিত হয়।

ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ সরকার ও চীন সরকারের মধ্যে একটি দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে যেখানে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে তিস্তা মহা পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কথা রয়েছে ইতোমধ্যেই সে বিষয়ে কাজ শুরু করে দিয়েছে চীন সরকারের প্রতিনিধি দল, চুক্তিমূল্যের মধ্যে নদী শাসন, সেচ প্রকল্প এবং স্যাটেলাইট শহর  সহ অনেক কিছু নির্মাণ করবে চীন সরকার, আগামী ২৬ সালের জানুয়ারি মাসের পরেই কাজ শুরুর কথা জানিয়েছে প্রতিনিধি দল, তিস্তা নদীর পাড়ের বাসিন্দারা দাবি করছেন তিস্তা মহা পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে তাদের জীবন মান উন্নত হবে। 

স্থানীয়রা জানান খরা, বন্যা ও ভাঙনে দিশেহারা তিস্তা অববাহিকার বাসিন্দারা। প্রতিবছর নদীটির অববাহিকায় এক লাখ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হলেও তা নিরসনে এতদিন কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ সংকট সমাধানের একমাত্র পথ তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন। এটি বাস্তবায়িত হলে বছরে ১১ হাজার ২৪০ কোটি টাকার সম্পদ রক্ষা পাওয়ার পাশাপাশি তিস্তা পাড়ের মানুষের জীবনমান বদলে যাবে।

মিরাজ খান

আরো পড়ুন  

×