
ছবি: সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ফের হুমকি দিলেন—চুক্তি না হলে ভারত থেকে আমদানি করা পণ্যে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করবেন তিনি। মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) এক সাংবাদিক সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, ‘তারা (ভারত) ২৫ শতাংশ শুল্ক দেবে।’
সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, ভারত কি ২০-২৫ শতাংশ শুল্ক দেবে? উত্তরে ট্রাম্প বলেন, ‘হ্যাঁ, আমার তাই মনে হয়।’
বন্ধুত্বের আবরণে চাপ
হোয়াইট হাউস ও ইউএস ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দীর্ঘদিন ধরে আলোচনার পরও যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যে কাঙ্ক্ষিত বাণিজ্যচুক্তি সম্পাদিত হয়নি। সোমবার মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি জেমিসন গ্রিয়ার সিএনবিসি-কে জানান, ‘ভারত তাদের বাজারের কিছু অংশ খুলে দিতে চাচ্ছে, আমরা আলোচনায় আগ্রহী। তবে কতটা অগ্রসর হতে তারা প্রস্তুত—সেটি আরও আলোচনা দরকার।’
গত এক বছরে ট্রাম্প বারবার ভারতের উচ্চ শুল্ক নীতির সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, ভারত আমেরিকান পণ্যে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি শুল্ক আরোপ করে, যা অব্যাহত রাখা সম্ভব নয়।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সাক্ষাৎ করার আগে ট্রাম্প বলেন, ‘তারা আমাদের প্রতি ঠিকভাবে আচরণ করছে না।’ তিনি আরও জানান, মোদিকে তিনি সরাসরি বিষয়টি বলেছেন।
ভারতীয় পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রে ২৬ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল চলতি বছরের ২ এপ্রিল। পরে ট্রাম্প সেই ‘পারস্পরিক শুল্ক’ সাময়িকভাবে স্থগিত করেন। তবে নতুন করে তিনি আবারও কড়া অবস্থান নিচ্ছেন।
ট্রাম্প প্রশাসনের মতে, কেবল উচ্চ শুল্ক নয়, বরং ভারতের তথাকথিত ‘নন-ট্যারিফ ব্যারিয়ার’ বা অশুল্ক বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতাও সমস্যা। এর মধ্যে রয়েছে বিদেশি পণ্যে কঠিন মান যাচাইয়ের নিয়ম, ডিজিটাল পরিষেবায় অতিরিক্ত কর, এবং আমদানির ওপর কঠোর বিধিনিষেধ।
বাণিজ্য ঘাটতি ও চুক্তির জটিলতা
মার্কিন বাণিজ্য বিভাগ বলছে, ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র ভারত থেকে ৮৭ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করে, আর রপ্তানি করে ৪২ বিলিয়ন ডলারের পণ্য। প্রধান আমদানিকৃত পণ্যের মধ্যে ছিল ওষুধ, মোবাইলসহ যোগাযোগ যন্ত্রাংশ এবং পোশাক।
ট্রাম্প প্রশাসনের দাবি ছিল, ভারত মার্কিন পণ্যে শুল্ক সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করতে রাজি হয়েছে। কিন্তু ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর বিষয়টি ‘অসময়ের ঘোষণা’ বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি, আলোচনা এখনও চলছে এবং এটি অত্যন্ত জটিল ও সূক্ষ্ম বিষয়।’
বিশ্ব রাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ হলেও ট্রাম্পের এই হুমকি ভবিষ্যতের বাণিজ্য আলোচনায় নতুন চাপ তৈরি করতে পারে। ভারতের উচ্চ শুল্ক নীতির সমালোচনার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতির বাস্তবতাও জড়িত। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্প আবার ক্ষমতায় এলে এই শুল্কবিষয়ক চাপ আরও বাড়তে পারে।
রাকিব