ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ৩১ জুলাই ২০২৫, ১৬ শ্রাবণ ১৪৩২

চিকুনগুনিয়ায় শঙ্কা

প্রকাশিত: ১৮:০৭, ৩০ জুলাই ২০২৫

চিকুনগুনিয়ায় শঙ্কা

জুলাইয়ের মাঝামাঝি বন্দরনগরী চট্টগ্রামে মশা নিয়ে গবেষণা চালিয়েছিল রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)। ওই গবেষণায় দেখা গেছে, চট্টগ্রামে মশার ঘনত্ব বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত ঝুঁকিপূর্ণ সীমার কয়েক গুণ। ফলে চট্টগ্রামে আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে চিকুনগুনিয়া ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী। নগরীর সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে প্রতিদিনই লেগে থাকছে জ্বরে আক্রান্ত রোগী ও স্বজনের ভিড়। রোগীদের রক্ত পরীক্ষার তথ্য বিশ্লেষণ করে পাওয়া গেছে, চট্টগ্রামে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টারে জ্বর নিয়ে যত রোগী আসছেন, গড়ে তাদের ৭৬ শতাংশ চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত। কোনো কোনো স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে এই হার ৮৯ শতাংশ। উদ্বেগের বিষয়, চিকুনগুনিয়ার রোগী বাড়লেও বন্দরনগরীর প্রধান দুই সরকারি হাসপাতাল চমেক ও চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে এ ভাইরাস পরীক্ষার সুযোগ নেই। জ্বরে আক্রান্ত হয়ে এ দুটি হাসপাতালে রোগীরা গেলেও রক্ত পরীক্ষার জন্য ছুটতে হয় বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। 
চিকিৎসকরা বলছেন, জ্বর নিয়ে আসা বেশির ভাগ রোগীর শরীরে চিকুনগুনিয়া শনাক্ত হচ্ছে। এবারের মতো এত চিকুনগুনিয়া রোগী আগে কখনো দেখা যায়নি। শিশু থেকে বয়স্ক কেউ বাদ নেই। পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। কিন্তু বড় পরিসরে চিকুনগুনিয়ার বিস্তার ঘটলেও সরকারের স্বাস্থ্য প্রশাসন থেকে কোনো বাড়তি উদ্যোগ নেই। মশাবাহিত চিকুনগুনিয়ায় অবর্ণনীয় শারীরিক কষ্ট ভোগ করতে হয় রোগীকে। তবে এতে মৃত্যুর ঘটনা নেই বললেই চলে। এই রোগে মৃত্যুঝুঁকি প্রতি ১০ হাজারে একজন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, চিকুনগুনিয়া ভাইরাস ঠেকানোর কোনো ওষুধ বা টিকা নেই। উপসর্গের মোকাবিলা করাই প্রধান চিকিৎসা। ১১৯ দেশের প্রায় ৫৬০ কোটি মানুষ বর্তমানে মশাবাহিত এ রোগের বিপদে আছে। এডিস ইজিপ্টাই মশার আধিক্যের কারণে ভাইরাসটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার ইঙ্গিত রয়েছে। সময়মতো কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে বড় ধরনের স্বাস্থ্য সংকট হতে পারে। 
বর্তমানে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ায় বন্দরনগরী চট্টগ্রাম ও রাজধানীবাসীর পাশাপাশি কমবেশি প্রায় সারাদেশের মানুষই আক্রান্ত হচ্ছেন। ফলে মানুষের কাছে এখন এডিস মশা যেন এক আতঙ্কের নাম। এডিস মশা পরিষ্কার পানিতে ডিম পাড়ে এবং বংশবিস্তার করে। বিভিন্ন পাত্রে জমে থাকা স্বচ্ছ পানি এডিস মশার প্রজননের উপযুক্ত ক্ষেত্র। যেমন- ডাবের খোসা, প্লাস্টিক বোতল কিংবা পলিথিনে ১ মিলিলিটার পানি জমে থাকলেও তা থেকে মশার লার্ভা জন্ম নিতে পারে। তাই বসতবাড়ির আঙিনায় পুরনো টায়ার, ঢাকনাবিহীন চৌবাচ্চা, ড্রাম, ফুলের টবসহ নানা পাত্রে দীর্ঘদিন পরিষ্কার পানি জমতে দেওয়া যাবে না। সেই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিয়মিত এডিস মশা নিধন কার্যক্রম আরও কার্যকর ও জোরদার করা চাই। ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া উভয়ই এডিস মশা থেকে ছড়ায়। তাই এগুলো থেকে সুরক্ষা পেতে এডিস মশার বংশবিস্তার নিয়ন্ত্রণ জরুরি। এক্ষেত্রে সচেতনতাই সর্বোত্তম পন্থা হতে পারে।

প্যানেল/মো.

×