
বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষার্থী বেড়েছে, বই পাল্টেছে, কোচিং সেন্টার গজিয়েছে, কিন্তু শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য ভালো মানুষ তৈরি তা যেন দিন দিন আড়ালে চলে যাচ্ছে। ছাত্রছাত্রী হয়তো জিপিএ-৫ পাচ্ছে, কিন্তু চারিত্রিক মূল্যবোধ, শৃঙ্খলা ও আদর্শিক চর্চায় তারা ক্রমশ দূরে সরে যাচ্ছে। এর অন্যতম কারণ, শিক্ষকের হাতে আর নেই সেই শাসনের ন্যায্য ক্ষমতা। অথচ একটি জাতিকে গড়ে তুলতে হলে আগে শিক্ষককে পূর্ণ মর্যাদা ও কর্তৃত্ব ফিরিয়ে দিতে হবে।
এক সময় শিক্ষক ছিলেন শ্রদ্ধার প্রতীক, তার একটি কথায় নড়েচড়ে বসতো পুরো ক্লাস। আজ সেই শিক্ষককে অপমান করার সাহস রাখে এক শ্রেণির অভিভাবক ও শিক্ষার্থী, যারা শিক্ষা মানে বোর্ডের নম্বর ধরে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আজকের পরিস্থিতি এমন, যেখানে শিক্ষক ‘শাসন’ করলে শাস্তি পান, কিন্তু ছাত্র ‘অশোভন আচরণ’ করলেও তা “ছোট মানুষ বলে” মাফ পেয়ে যায়। একজন বাবা-মা যদি সন্তানের ভালোর জন্য শাসন করতে পারেন, তাহলে একজন শিক্ষকও শিক্ষার্থীর ভবিষ্যতের জন্য কঠোর হতে পারেন, এটাই তো স্বাভাবিক।
কিন্তু আজকের সামাজিক ও আইনি কাঠামোতে শিক্ষক যেন বন্দি হয়ে আছেন সিলেবাস আর চুপচাপ বই পড়ানোর বৃত্তে।এভাবে কি শিক্ষার্থীদের আত্মনিয়ন্ত্রণ, আদর্শ, নীতি ও নৈতিকতা শেখানো সম্ভব? আমরা যদি সত্যিই চাই, স্কুল-কলেজ থেকে শিক্ষিত, দায়িত্ববান, সুশৃঙ্খল নাগরিক বের হোক, তাহলে শিক্ষকের হাতে ফেরত দিতে হবে যথাযথ শাসন ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার অধিকার। তা যেন হয় নির্যাতন নয়, আদর্শিক শাসন যা গড়বে সাহসী ও সৎ প্রজন্ম। শিক্ষকের মর্যাদা শুধু বক্তৃতা দিয়ে নয়, তা নিশ্চিত করতে হবে নীতিমালায়, আচরণে এবং বাস্তবচর্চায়। শিক্ষকের হাতে যদি থাকে কেবল কলম, কিন্তু না থাকে ন্যায্য শাসনের হাতিয়ার, তবে শিক্ষা কখনোই চরিত্র গঠনের শক্তি হয়ে উঠবে না। শিক্ষা সংস্কারে তাই প্রথম ও প্রধান শর্ত শিক্ষকের প্রতি বিশ্বাস, সম্মান ও শাসনের অধিকার ফিরিয়ে দাও।
আল- আমিন মিলু
আহ্বায়ক
গনঅধিকার পরিষদ
সরিষাবাড়ি উপজেলা শাখা
আঁখি