
রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী আবাসিক ও বাণিজ্যিক এলাকা মোহাম্মদপুরে প্রায় ১৮ লাখ লোকের বসবাস। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি ও বেসরকারি অফিস, বাজার, হাসপাতাল, র্যাব-২ এর দপ্তরসহ নানা কারণে এই এলাকা ঘনবসতিপূর্ণ। অথচ এখানকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি যথেষ্ট উদ্বেগজনক। মোহাম্মদপুর ও আদাবরে কিশোর গ্যাং, মাদক ও চাঁদাবাজির মতো অপরাধ বাড়ার কারণে মারাত্মক বিরূপ প্রভাব পড়ছে স্থানীয় তরুণ শিক্ষার্থীদের ওপর। এতে কিশোর বয়সীদের বিপথগামী হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। কিছুদিন আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হতে দেখা যায় ছিনতাইয়ের ঘটনা। সকালে অফিসগামী এক তরুণের কাছ থেকে ব্যাগ, জামা-কাপড় এবং পায়ের জুতাটা পর্যন্ত কেড়ে নেয়। ব্যস্ততম বাসস্ট্যান্ড, গলিপথ, এমনকি রাস্তায় চলন্ত যানবাহন থেকেও মোবাইল ও ব্যাগ ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা এখন প্রায় নিয়মিত। যখন-তখন সাধারণ মানুষকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হেঁটে যাচ্ছে কিশোর গ্যাং। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পদক্ষেপও আশানুরূপ নয়। ইতোমধ্যে স্থানীয় প্রায় ৭০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রী এবং শিক্ষকরা রাস্তায় মানববন্ধন করেছে। মোহাম্মদপুর কেন্দ্রীয় কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক এইচএম ওয়ালিউল্লাহ বলেছেন, ‘শিক্ষক সমাজ আজ ঐক্যবদ্ধ। মোহাম্মদপুর-আদাবরের সব অন্যায় দূর হবে। আমরা শিক্ষার আলো দিয়ে সমাজ আলোকিত করব।’
ঢাকা মহানগর পুলিশ-ডিএমপির অপরাধ তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত তিন মাসে ৪৫টি ছিনতাইয়ের মামলা হয়েছে মোহাম্মদপুর থানায়। ছয় মাসে ডাকাতি ও ডাকাতির চেষ্টায় মামলা হয়েছে ২৩টি। একই সময়ে (জানুয়ারি-জুন) চাঁদাবাজির মামলা হয়েছে ১৯টি। ৯ মাসে হত্যা মামলা হয়েছে ১৭টি। সাড়ে ৭০০ অপরাধীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানান র্যাব-২ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ খালিদুল হক হাওলাদার। মোহাম্মদপুরে কিশোর গ্যাংয়ের উপস্থিতি নতুন নয়, তবে সাম্প্রতিক সময়ে এদের দৌরাত্ম্য বেড়েছে আশঙ্কাজনক হারে। দেশের বৈষম্য নিরসনে মাত্র ১১ মাস আগে অনেক শিক্ষার্থী রাস্তায় রক্ত ঝরিয়েছে। অথচ ঢাকার প্রাচীন এ জনপদে এমন অরাজকতা সমাজের জন্য এক অশুভ সংকেত।
এই পরিস্থিতিতে শুধু প্রশাসনের ওপর নির্ভর করলেই চলবে না। স্থানীয় বাসিন্দাদেরও সচেতন হওয়া প্রয়োজন। বিশেষ করে কিশোরদের জন্য খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক চর্চা ও জীবনমুখী শিক্ষা কার্যক্রমের সুযোগ করে দিতে হবে। আশপাশে মাদক কারবারিদের উপস্থিতি প্রায় সর্বজনবিদিত। এক্ষেত্রে প্রশাসনকে কঠোর হতে হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার, নিয়মিত টহল, গোয়েন্দা নজরদারি ও কমিউনিটি পুলিশিংয়ের মাধ্যমে এলাকাবাসীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করা জরুরি। যদি পুলিশের কারও দায়িত্বে অবহেলা প্রমাণ পাওয়া যায় তবে তাদেরও আইনের আওতায় আনতে হবে। অপরাধীদের দ্রুত শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে হবে এবং তা যেন হয় দৃষ্টান্তমূলক। অপরাধ দমনে যত দেরি হবে, সামাজিক অবক্ষয় হবে ততই গভীর। দেশজুড়ে এই অশুভ ছায়া ছড়িয়ে পড়লে নিয়ন্ত্রণ অনেক কঠিন হবে। কাজেই পরিস্থিতির উন্নয়নে ধারাবাহিকভাবে সভা-সেমিনার, কর্মশালার মাধ্যমে মাদক, সন্ত্রাস ও গ্যাং কালচারের বিরুদ্ধে সামাজিক সচেতনতা তৈরি করতে হবে। এতে প্রশাসন, জনসাধারণ ও জনপ্রতিনিধিসহ সর্বস্তরের মানুষের সমন্বিত উদ্যোগ একান্ত প্রয়োজন।
প্যানেল/মো.