
বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক নেতৃত্বের আঁতুড়ঘর ডাকসু (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ)। এখানে যারা ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচিত হন তারাই আগামী দিনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ‘দ্বিতীয় সংসদ’ হিসেবে খ্যাত (ডাকসু), যা মিনি সংসদ’ হিসেবে পরিচিত গোটা বাংলাদেশে।
তারুণ্যের কাক্সিক্ষত ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগমী ৯ সেপ্টেম্বর। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচন ১১ সেপ্টেম্বর। ১৫ সেপ্টেম্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। জুলাই-আগস্টের বিপ্লবোত্তর নতুন বাংলাদেশের প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ছাত্র সংসদ নির্বাচন এ দেশের তরুণদের মাঝে নতুন করে গণতান্ত্রিক চর্চাকে আরও শানিত করবে নিঃসন্দেহে। ভিন্ন মতাদর্শসহ সবার সরব উপস্থিতি ক্যাম্পাসগুলোকে করবে প্রাণবন্ত। পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের জায়গাটি হবে আরও নির্ভরশীল, ভিন্ন মতের অনিন্দ সৌন্দর্যে আলোকিত হবে তারুণ্যের ক্যাম্পাস, জ্ঞানচর্চার প্রাণকেন্দ্রে থাকবে না কোন মারামারি, হানাহানি, গোলাগুলি, খুনাখুনি কিংবা পেশিশক্তির মহড়া। হবে শুধু জ্ঞানচর্চা আর জ্ঞানচর্চা, এমনটিই আশা দেশবাসীর।
ডাকসু ১৯২৩ সালে প্রতিষ্ঠিত। দেশের বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ডাকসু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। সর্বশেষ ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৯ সালে। ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত ডাকসু নির্বাচনে প্রার্থীর সর্বোচ্চ বয়স ছিল ৩০ বছর। তবে এবার প্রার্থীর সর্বোচ্চ বয়সসীমা তুলে দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ভোটার ও প্রার্থী হতে হলে শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ণকালীন শিক্ষার্থী হতে হবে। নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না সন্ধ্যাকালীন কোর্সের শিক্ষার্থীরা। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৭১ সালের ১২ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরুর পর ৭২ সালে প্রথম জাকসু নির্বাচন হয়। এরপর আরও আটবার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সর্বশেষ নির্বাচন হয়েছিল ১৯৯২ সালে। এবার ৩৩ বছর পর জাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে অচল থাকা রাকসুর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ১৫ সেপ্টেম্বর। রাকসু প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৬২ সালে। এরপর মোট ১৪টি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সর্বশেষ রাকসু নির্বাচন হয় ১৯৮৯ সালে।
আসন্ন ডাকসু, জাকসু ও রাকসু নির্বাচনকে সামনে রেখে ছাত্রদল, ইসলামী ছাত্রশিবির, ছাত্র অধিকার পরিষদ, গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ, ছাত্র ইউনিয়ন, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, ক্যাম্পাসে বেশ তৎপর, তবে চোখে পড়ার মতো কার্যক্রম চালাচ্ছে ছাত্রশিবির। তারা উল্লেখিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সব শিক্ষার্থীর জন্য ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্পে ছাত্রীদের জন্য মহিলা চিকিৎসকদের মাধ্যমে সেবা দান, ফ্রি ওষুধ বিতরণ, প্রতিটি হলে নিরাপদ পানি সরবরাহে ফিল্টার স্থাপন করেছে। এমনকি তারা গত রমজানে প্রতিদিন সহস্রাধিক শিক্ষার্থীর মাঝে ইফতার বিতরণ করেছে। ঈদুল ফিতরে ছাত্র-শিক্ষক কর্মচারীদের মেজবানি খাইয়েছে, যার ইতিবাচক প্রভাব ছাত্রদের মাঝে দৃশ্যমান। প্রত্যাশিত কল্যাণকামী উদ্যোগ দেশের সব ছাত্র সংগঠন নিলে সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণ সম্ভব হবে, ফ্যাসিবাদের কবর রচিত হবে চিরকালের জন্য। প্রশান্তির ফল্গুধারায় ভরে উঠুক আমাদের ক্যাম্পাসগুলো।
প্যানেল/মো.