
ছবি: জনকণ্ঠ
২৪-এর গণঅভ্যুত্থান থেকে জন্ম নেওয়া এনসিপি "দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা" সফলভাবে শেষ করে দেশের রাজনীতিতে নতুন বার্তা নিয়ে এসেছে। জনতাকে সঙ্গে নিয়ে গড়েছে এক নতুন ইতিহাস, যা হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আরেকটি মাইলফলক।
এই পদযাত্রায় এনসিপি ছুটে গেছে দেশের ৬৪টি জেলায়। দেখা করেছে শহীদ পরিবার ও আহত যোদ্ধাদের সাথে। শহীদদের কবরস্থানে গিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে, জিয়ারত করেছে, তাঁদের স্মৃতির প্রতি গভীর ভালোবাসা ও সম্মান জানিয়েছে।
এনসিপি বুঝিয়ে দিয়েছে—একটি রাজনৈতিক দলের সাফল্য কেবল নির্বাচনে অংশগ্রহণে সীমাবদ্ধ নয়, বরং সেটি নির্ধারিত হয় মানুষের সাথে সংযোগ গড়ে তোলার মধ্য দিয়ে।
এনসিপি সেই বিশ্বাসকে ধারণ করেই মানুষের কাছে ছুটে গিয়েছে। জনগণের দুয়ারে গিয়ে তাঁদের কথা শুনেছে। মূলত এই পদযাত্রা ছিল মানুষের হৃদয়ে পৌঁছানোর এক ঐতিহাসিক প্রয়াস।
এনসিপি প্রতিটি জেলায় যখন গিয়েছে, তখন চেষ্টা করেছে সরাসরি মানুষের দুয়ারে পৌঁছে যেতে। প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে শহর, সমুদ্র থেকে পাহাড়, টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া—সবখানে সবার সঙ্গে সংযোগ গড়তে। কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র, শিক্ষক, চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী, আলেম, ওলামা—সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের সাথে কথা বলতে। এনসিপি এই পদযাত্রায় জনতার কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে শুনেছে তাঁদের আশা-আকাঙ্ক্ষা, কষ্ট আর স্বপ্নের গল্প।
তবে এনসিপির এ পথচলায় ছিল নানা বাধা। পদযাত্রায় গোপালগঞ্জ, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকায় হামলার শিকার হন নেতাকর্মীরা। কোথাও শারীরিক আক্রমণ, কোথাও মঞ্চ ভাঙচুর—তবুও এনসিপি নেতাকর্মীরা বিচলিত হননি। তারা মৃত্যুর মুখ থেকেও ফিরে এসেছেন, কিন্তু থেমে যাননি। ঝড়-বৃষ্টি, বৈরী আবহাওয়া, ক্লান্তি—সব বাধা উপেক্ষা করে তাঁরা এগিয়ে গেছেন।
এই যাত্রায় দেখা গেছে মানুষের অভাবনীয় ভালোবাসা। কেউ পানির বোতল এগিয়ে দিয়েছেন, কেউবা চোখের জল আর মুখের হাসিতে বরণ করে নিয়েছেন। কেউ কৃষক গাছের পাকা কাঁঠাল দিয়ে আপ্যায়ন করেছেন, আবার বৃদ্ধা শহীদের মা চোখের জল মুছতে মুছতে বলেছেন—“তোমরা এসেছো, এখনো আশার আলো দেখি।” আহত যোদ্ধারা তাঁদের প্রত্যাশার কথা তুলে ধরেছেন। শেখ হাসিনার বিচার, জুলাই ঘোষণাপত্র ও প্রয়োজনীয় সংস্কারগুলোর পূর্ণ বাস্তবায়ন দেখতে চান। এসব মুহূর্ত ছিল পদযাত্রার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি, যা ক্লান্ত-শ্রান্ত নেতাকর্মীদের পথচলায় শক্তির যোগান দিয়েছে।
এই পদযাত্রার জনস্রোত প্রমাণ করেছে—মানুষ পরিবর্তন চায়। মানুষ এমন একটি রাজনৈতিক শক্তিকে দেখতে চায়—যারা কেবল শ্লোগানে নয়, কাজেও তাদের পাশে থাকবে। মানুষ বিকল্প চায়—সেই বিকল্প হয়ে উঠেছে এনসিপি।
"দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা" কেবল একটি রাজনৈতিক কর্মসূচি ছিল না; এটি ছিল ভবিষ্যতের বাংলাদেশের জন্য একটি রূপরেখা, একটি সংকল্প, একটি অঙ্গীকার। এনসিপি এসেছে এই দেশের মানুষের ভাগ্য বদলাতে। এনসিপি থাকবে—এই দেশের মানুষের জন্য, এই দেশের ভবিষ্যতের জন্য।
লেখক
মাহাবুব আলম
যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)
মুমু ২