ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০১ আগস্ট ২০২৫, ১৭ শ্রাবণ ১৪৩২

এশিয়ার বাণিজ্য মানচিত্র বদলে দেবে থাইল্যান্ডের ল্যান্ড ব্রিজ?

প্রকাশিত: ১২:০১, ৩১ জুলাই ২০২৫

এশিয়ার বাণিজ্য মানচিত্র বদলে দেবে থাইল্যান্ডের ল্যান্ড ব্রিজ?

ছবি: সংগৃহীত

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সবচেয়ে কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ জলপথ মালাক্কা প্রণালীকে বাইপাস করার লক্ষ্যে থাইল্যান্ড একটি বিশাল মেগা প্রকল্প হাতে নিয়েছে, যার নাম ল্যান্ড ব্রিজ প্রকল্প। প্রকল্পটি সফল হলে বিশ্ব বাণিজ্য, ভূ-রাজনীতি এবং পরিবেশে বড় প্রভাব ফেলতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

মালাক্কা প্রণালীর গুরুত্ব

মালাক্কা প্রণালী মালয় উপদ্বীপ ও সুমাত্রা দ্বীপের মাঝখানে অবস্থিত একটি সংকীর্ণ জলপথ। এটি ভারত মহাসাগর ও প্রশান্ত মহাসাগরের মধ্যে সংযোগস্থল এবং বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে ব্যস্ততম সমুদ্রপথগুলোর একটি। প্রতি বছর প্রায় ৯০,০০০ জাহাজ এই প্রণালী অতিক্রম করে, যা বৈশ্বিক বাণিজ্যের প্রায় ৩০% পণ্য পরিবহন করে, যার আর্থিক মূল্য প্রায় ৩ থেকে ৪ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই অঞ্চলে চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া সহ বিশ্বের শীর্ষ অর্থনীতির দেশগুলো অবস্থিত, ফলে মালাক্কা প্রণালী বিশ্ব বাণিজ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থান।

 

থাইল্যান্ডের বিকল্প পরিকল্পনা: 'থাই ক্যানাল' থেকে 'ল্যান্ড ব্রিজ'

মালাক্কা প্রণালীতে অতিরিক্ত চাপ ও বিপদের ঝুঁকি কমাতে থাইল্যান্ড কয়েক দশক ধরে ‘থাই ক্যানাল’ নির্মাণের কথা ভাবছিল। এটি একটি নৌ-খাল হতো, যা আন্দামান সাগর ও থাইল্যান্ড উপসাগরকে সংযুক্ত করত। তবে পরিবেশগত ঝুঁকি, বিপুল ব্যয় এবং দেশ বিভক্ত হওয়ার সম্ভাবনা ইত্যাদি কারণে ২০২০ সালে এ প্রকল্প স্থগিত করা হয়। তার পরিবর্তে বর্তমানে 'ল্যান্ড ব্রিজ' মেগা প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে, যা ক্যানালের বিকল্প হিসেবে কাজ করবে।

 

ল্যান্ড ব্রিজ প্রকল্পে কী থাকবে?

ল্যান্ড ব্রিজ প্রকল্পে রয়েছে:

দক্ষিণ থাইল্যান্ডের চুমফোন ও রানং প্রদেশে দুটি নতুন গভীর সমুদ্র বন্দর। দুটি বন্দর সংযোগকারী ৯০ কিমি দীর্ঘ হাইওয়ে, রেললাইন এবং পাইপলাইন নেটওয়ার্ক। দ্রুত পণ্য পরিবহন ব্যবস্থা, যা মালাক্কা প্রণালী এড়িয়ে জাহাজ থেকে মাল সরাসরি পূর্ব-পশ্চিমে স্থানান্তর করবে।

 

খরচ ও সম্ভাব্য লাভ

প্রকল্পের প্রস্তাবিত ব্যয়: ২৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। প্রত্যক্ষ কর্মসংস্থান সৃষ্টি: প্রায় ২.৮ লাখ মানুষ

জাহাজগুলোর জন্য সময় ও খরচ সাশ্রয়:
– সময় বাঁচবে প্রায় ৩ দিন
– দূরত্ব কমবে ১,২০০ কিমি পর্যন্ত
– একটি বড় ট্যাংকারের ট্রিপে বাঁচতে পারে ৩.৫ লাখ ডলার

 

ভূরাজনৈতিক প্রভাব

চীন এই প্রকল্পে আগ্রহী এবং সম্ভাব্য বিনিয়োগকারী দেশ হিসেবে ইতিমধ্যেই আলোচনায় রয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে থাইল্যান্ড একটি আন্তর্জাতিক লজিস্টিক হাবে পরিণত হতে পারে। তবে এতে মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরের বাণিজ্যিক আগ্রহে প্রভাব পড়তে পারে। ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের দিক থেকেও কিছু কৌশলগত উদ্বেগের সৃষ্টি হতে পারে।

 

প্রকল্পের অগ্রগতি ও সময়সীমা

২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে থাই পার্লামেন্ট প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়। বর্তমানে (২০২5 সালে) বিনিয়োগ আকর্ষণে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক রোড শো ও সেমিনার চালু আছে, নিলাম শুরু হবে ২০২৬ সালে। আংশিক কার্যক্রম চালু হবে ২০৩০ সাল নাগাদ, আর সম্পূর্ণ কাজ শেষ হবে ২০৩৯ সালের মধ্যে। যদিও থাই ক্যানাল প্রকল্প বিভিন্ন কারণে থমকে গেছে, ‘ল্যান্ড ব্রিজ’ প্রকল্প থাইল্যান্ডকে একটি নতুন গ্লোবাল শিপিং করিডরে পরিণত করতে পারে। তবে এর বাস্তবায়ন নির্ভর করছে বিনিয়োগ, পরিবেশগত মূল্যায়ন এবং আন্তর্জাতিক সমর্থনের ওপর।

আঁখি

×