
মায়ানমারের সামরিক শাসক জান্তা (State Administration Council) বৃহস্পতিবার ঘোষণা করেছে, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর থাকা জরুরি অবস্থা (state of emergency) বাতিল করা হয়েছে। মেয়াদ শেষে তারা ডিসেম্বরেই নতুন নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি শুরু করেছে।
নির্বাচনের রূপরেখা ও কমিশন গঠন
সরকারি তথ্য অনুযায়ী একটি ১১ সদস্য বিশিষ্ট কমিশন গঠন করা হয়েছে, যার নেতৃত্ব সামরিক শাসনের প্রধান সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইং নিজেই করছেন। উনি নির্বাচনের সময় পর্যন্ত সামরিক বাহিনীর প্রধান হিসেবেই দায়িত্ব পালন করবেন, পাশাপাশি আংশিকভাবে রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্বেও থাকবেন।
ক্ষেত্রবিশেষে জরুরি ঘোষণা পুনর্বহাল
যদিও জাতীয় জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার করা হয়েছে, মায়ানমারের ১৪ অঞ্চলের মধ্যে ৯০ টি উপজেলায় সীমিত জরুরি অবস্থার পুনর্বহাল করা হয়েছে, যেখানে সংঘাত বা সন্ত্রাসবাদের আশঙ্কা রয়েছে।
নির্বাচনের সময়সীমা ও আইন
জান্তার মুখপাত্র জেনারেল জাও মিন টুন বলেছেন নির্বাচনের আয়োজন করা হবে জরুরি অবস্থা প্রত্যাহারের ৬ মাসের মধ্যে, অর্থাৎ সম্ভাব্য তারিখ ২০২৫ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৬ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত।
নতুন নির্বাচন আইন অনুসারে, ভোট প্রক্রিয়া বিঘ্নিত ও বাধাগ্রস্ত করলে তিন থেকে দশ বছরের কারাদণ্ড কিংবা শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত হতে পারে। ব্যবধানবহুল বা প্রাণহানির ঘটনা ঘটলে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডও হতে পারে।
প্রতিক্রিয়া ও সমালোচনা
বহু বিরোধী দল ইতিমধ্যেই ঘোষণা করেছে তারা ভোটে অংশ নেবে না। জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদনকারীর মতে এই নির্বাচন হবে “প্রতারণামূলক” যা কেবল সামরিক শাসনের বৈধতায় সহায়তা করবে। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, তা কোনো মুক্ত ও সুষ্ঠু ভোট হবে না, বরং শাসকচক্রের ক্ষমতা শক্তিশালী করার পরিকল্পনার অংশ।
কেন্দ্রীয় শক্তির অবস্থান অপরিবর্তিত
নির্বাচনের পরেও মিন অং হ্লাইং (acting president) কিংবা সেনার প্রধান হিসেবে ক্ষমতায় থাকবেন বলে বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন। ফলে ক্ষমতা কাঠামো মূলত অপরিবর্তিত থাকবে চেহারায় পরিবর্তন হলেও রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ থাকবে তার হাতেই।
বিশ্লেষণ: কোনো প্রকৃত গণতন্ত্র সম্ভব নয়?
স্থায়ী গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া নিশ্চিত না হলে নির্বাচনের ব্যবহার শুধুমাত্র একটি নির্মিত বৈধতা সৃষ্টি করা, এমনটাই মনে করেন বিরোধী গোষ্ঠী ও মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা। ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট (NUG) ও বিভিন্ন জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠী ইতিমধ্যেই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যে, তারা ভোটকে ভোট নয় বরং “অবৈধ” প্রচেষ্ট হিসেবে দেখবে এবং তার বিরুদ্ধে তাদের সংগ্রাম অব্যাহত রাখবে।
Jahan