ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০২ আগস্ট ২০২৫, ১৮ শ্রাবণ ১৪৩২

অতিরিক্ত প্রত্যাশা নয়, দরকার বাস্তবসম্মত আলোচনার: ট্রাম্পকে সতর্ক করলেন পুতিন

প্রকাশিত: ২০:৫৩, ১ আগস্ট ২০২৫; আপডেট: ২০:৫৩, ১ আগস্ট ২০২৫

অতিরিক্ত প্রত্যাশা নয়, দরকার বাস্তবসম্মত আলোচনার: ট্রাম্পকে সতর্ক করলেন পুতিন

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হতাশা প্রকাশ করতেই রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন পাল্টা জবাব দিলেন, বললেন ‘অতিরিক্ত প্রত্যাশা থেকেই হতাশা আসে’। তিনি ট্রাম্পকে যুদ্ধ বন্ধে অযথা উচ্চাকাঙ্ক্ষী আশা না করে শান্তিপূর্ণ আলোচনায় ফিরতে পরামর্শ দিয়েছেন।

শুক্রবার রাশিয়ার ভালাম শহরে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে পুতিন বলেন, “যে কেউ হতাশ হলে, সেটি মূলত অতিরিক্ত প্রত্যাশার ফল। এটাই সাধারণ বাস্তবতা।”

তিনি জোর দিয়ে বলেন, “সমস্যা যদি শান্তিপূর্ণভাবে মেটাতে চাই, তাহলে সেটা খোলাখুলি আলোচনার মাধ্যমেও হতে পারে, আবার পর্দার আড়ালের আলোচনায়ও। কিন্তু কথা বলতে হবে, মুখোমুখি হতে হবে।”

রুশ প্রেসিডেন্টের মতে, ইউক্রেন সংকটের সমাধান কেবল যুদ্ধ নয়, আলোচনাতেই সম্ভব। মস্কো ইতিমধ্যেই ইউক্রেনের সঙ্গে আলোচনার জন্য তিনটি যৌথ কর্মপরিষদ গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে। কিয়েভের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়াও, তার ভাষায়, ‘ইতিবাচক’ ছিল।

পুতিন বলেন, “আলোচনা সব সময়ই জরুরি। যদি ইউক্রেনের নেতৃত্ব মনে করে এখন সময় নয়, তাহলে আমরা অপেক্ষা করব। আমরা প্রস্তুত।”

ইস্তানবুলে ইতোমধ্যে তিন দফা বৈঠকে বসেছে দুই পক্ষ, এবং সে আলোচনা থেকে অনেক মানবিক সমস্যার সমাধানও এসেছে বলে জানান তিনি।

শান্তির পথ আসলে কী?

সংবাদ সম্মেলনে যখন পুতিনকে প্রশ্ন করা হয়, রাশিয়ার যুদ্ধবিরতির শর্ত এখনও অপরিবর্তিত আছে কি না, তখন তিনি বলেন, “এসব আসলে শর্ত নয়, লক্ষ্য। আমরা পরিষ্কারভাবে বলেছি আমাদের উদ্দেশ্য কী। দীর্ঘদিন ধরে সবাই বলছিল, রাশিয়া আসলে কী চায়, বোঝা যাচ্ছে না। গত জুনে আমরা সেটা স্পষ্ট করে দিয়েছি।”

তিনি বলেন, “এই যুদ্ধের পেছনের আসল কারণগুলো দূর করা জরুরি। এটাই মূল বিষয়।”

মানবিক দিকগুলোর কথাও মনে করিয়ে দেন তিনি। বলেন, রুশ ভাষার সুরক্ষা, ইউক্রেনের অর্থোডক্স চার্চের স্বাধীনতা এবং সম্মানজনক পরিবেশ এসব বিষয় নিয়েও আলোচনা হওয়া দরকার।

পুতিন বলেন, “এই সব বিষয়কে ঘিরেই গড়ে উঠতে পারে দীর্ঘস্থায়ী শান্তির ভিত। এমন শান্তি, যার কোনও মেয়াদ নেই, যা টেকসই।”

ইস্তানবুল বৈঠকে ইউক্রেনীয় প্রতিনিধিদলের একজন সদস্য পারস্পরিক নিরাপত্তার বিষয়ে আলোচনা করার প্রস্তাব দেন। ইউরোপীয় নিরাপত্তা কাঠামোর আওতায় বিষয়টি দেখার যে ধারণা ছিল, সেটিকে যৌক্তিক বলেই মেনে নিয়েছেন পুতিন।

ট্রাম্পের চাপে সময় সংকুচিত, শুল্কের হুমকি

তবে ট্রাম্প একেবারে শান্তির ছায়ায় নেই। বরং হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, মস্কো ও কিয়েভ যদি আগামী ৫০ দিনের মধ্যে কোনও চুক্তিতে না পৌঁছায়, তাহলে রাশিয়া ও তার বাণিজ্যিক অংশীদারদের ওপর শতভাগ পর্যন্ত আমদানি শুল্ক বসাবে যুক্তরাষ্ট্র। এই সময়সীমাও তিনি কমিয়ে এনেছেন মাত্র ১০ দিনে। এই চাপে আলোচনার পথ কতটা খোলা থাকে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

‘ওরেশনিক’ ক্ষেপণাস্ত্র: বেলারুশে মোতায়েনের পথে

পুতিন জানান, রাশিয়া তাদের উন্নতমানের ‘ওরেশনিক’ ক্ষেপণাস্ত্রের প্রথম সিরিজ তৈরি করে সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করেছে। এ বছর শেষ হওয়ার আগেই এটি বেলারুশে মোতায়েনের পরিকল্পনা রয়েছে।

তিনি বলেন, “আমাদের বিশেষজ্ঞ দল রুশ ও বেলারুশ সেনারা ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের সম্ভাব্য স্থান বেছে নিয়েছে। এখন সেই জায়গাগুলো প্রস্তুত করার কাজ চলছে। আশা করছি, বছরের শেষেই এটি সম্পন্ন হবে।”

তবে ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের সঙ্গে সঙ্গে ওই এলাকা নিরাপদ রাখার দিকটিও গুরুত্বপূর্ণ বলেই উল্লেখ করেন পুতিন।


পুতিনের বক্তব্যে স্পষ্ট যুদ্ধের সমাধান রণক্ষেত্রে নয়, আলোচনার টেবিলে। ট্রাম্প চাইলেও ১০ দিনের মধ্যে বড় কিছু ঘটবে না, যদি না দুই পক্ষই বাস্তবতাকে সামনে রেখে এগিয়ে আসে। সময়ের হিসাব যতই কড়াকড়ি হোক, শান্তির সূত্র এখনও সংলাপেই খুঁজছেন রুশ প্রেসিডেন্ট। এখন নজর, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেন সেই আলোচনায় ফেরে কি না।

 

 

সূত্র:https://tinyurl.com/mpk6bus4

আফরোজা

×