
ছবি: সংগৃহীত।
ডায়াবেটিস এক নীরব ঘাতক, যা সময়মতো নিয়ন্ত্রণে না আনলে দেহের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। দীর্ঘ সময় ধরে রক্তে শর্করার মাত্রা অতিরিক্ত থাকলে দেহে কিছু লক্ষণ দেখা দেয়, যেগুলি উপেক্ষা করলে তা মারাত্মক জটিলতায় রূপ নিতে পারে-যেমন হৃদরোগ, কিডনির সমস্যা বা চোখের দৃষ্টিশক্তি হারানোর মতো অবস্থা। তবে শুরুতেই এই সতর্ক সংকেতগুলো চিহ্নিত করতে পারলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আনা অনেক সহজ হয়ে ওঠে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে যেসব লক্ষণ দেখা দিতে পারে, তা হল-
১. অতিরিক্ত পিপাসা:
রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে গেলে শরীর তা প্রস্রাবের মাধ্যমে বের করে দিতে চায়, ফলে দেহে পানিশূন্যতা তৈরি হয়। তখন মস্তিষ্ক বারবার পানি খাওয়ার সংকেত দেয়। এই অবস্থাকে বলে পলিডিপসিয়া। রাতেও ঘন ঘন পানি খেতে ইচ্ছে হওয়া বা পিপাসা না মিটে যাওয়াও এই লক্ষণের অন্তর্গত।
২. ঘন ঘন প্রস্রাব:
রক্তে গ্লুকোজ ১৮০ mg/dL এর বেশি হলে কিডনি তা দূর করতে বেশি প্রস্রাব তৈরি করে, যাকে বলে পলিউরিয়া। দিনে-রাতে বারবার প্রস্রাব হওয়া ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায় এবং শরীরকে আরও দুর্বল করে তোলে।
৩. অতিরিক্ত খিদে লাগা:
রক্তে শর্করার পরিমাণ বেশি থাকলেও তা কোষে পৌঁছাতে পারে না-কারণ ইনসুলিনের অভাব বা ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স। এতে শরীর বারবার খিদের সংকেত পাঠায়, যাকে বলে পলিফেজিয়া। এতে ওজন বাড়ার ঝুঁকিও থাকে।
৪. অকারণে ওজন হ্রাস:
যখন শরীর গ্লুকোজ থেকে শক্তি পেতে ব্যর্থ হয়, তখন চর্বি ও পেশি ভেঙে শক্তি তৈরি করতে শুরু করে। এতে দ্রুত ওজন কমে যায়, বিশেষত টাইপ-১ ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে এটি বেশি দেখা যায়।
৫. ক্লান্তি ও দুর্বলতা:
গ্লুকোজই শরীরের মূল জ্বালানি। কিন্তু এটি যখন কোষে পৌঁছাতে পারে না, তখন শরীর শক্তিহীন হয়ে পড়ে। খাবার ও ঘুম যথেষ্ট হলেও ক্লান্তিভাব কাটে না।
৬. দৃষ্টির ঝাপসা:
রক্তে শর্করার মাত্রা বেশি হলে চোখের লেন্সে তরল পরিবর্তন হয়, ফলে চোখে ঝাপসা দেখার সমস্যা তৈরি হয়। দীর্ঘমেয়াদে চোখের রেটিনায় ক্ষতি হতে পারে, যার ফলে দৃষ্টিশক্তি স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্তও হতে পারে।
৭. ক্ষত শুকাতে দেরি হওয়া ও ঘন ঘন সংক্রমণ:
ডায়াবেটিসে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। ফলে সামান্য কাটা-ছেঁড়া মেরামত হতে দেরি হয়। ত্বক, মূত্রনালী, মুখ ও পায়ে ঘন ঘন সংক্রমণ দেখা দিতে পারে।
৮. হাত-পা ঝিনঝিন বা অবশ লাগা:
দীর্ঘ সময় রক্তে গ্লুকোজ বেড়ে থাকলে তা স্নায়ুকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। শুরুতে আঙুল বা পায়ের পাতা ঝিনঝিন করে, পরে ব্যথা বা অনুভূতি লোপ পাওয়া শুরু হয়। একে বলে ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি। এতে হাঁটাচলা ও পায়ের যত্নে সমস্যা হয়।
যদি এসব লক্ষণ একাধিক দিন ধরে টানা অনুভব করেন, তাহলে অবিলম্বে রক্তের শর্করার মাত্রা পরীক্ষা করা এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। সময়মতো সচেতনতা গ্রহণ করলে ডায়াবেটিসজনিত মারাত্মক জটিলতা এড়ানো সম্ভব।
মিরাজ খান