
ছবিঃ সংগৃহীত
অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস নীরবে শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ক্ষতি করতে পারে এবং সময়মতো ব্যবস্থা না নিলে এটি গুরুতর জটিলতায় পরিণত হতে পারে। যখন রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়মিতভাবে অনেক বেশি থাকে, তখন শরীর বিভিন্ন উপসর্গের মাধ্যমে সতর্ক সংকেত দিতে শুরু করে। এগুলো আমাদের জানায় যে শরীরে ইনসুলিনের ঘাটতি, ইনসুলিন প্রতিরোধ বা উভয়ের কারণেই গ্লুকোজ ঠিকমতো কাজে লাগছে না। এসব লক্ষণ চিনে নিতে পারলে সময়মতো পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হয়, যা হৃদরোগ, কিডনি সমস্যা ও চোখের ক্ষতির মতো জটিলতা এড়াতে সাহায্য করে।
অনিয়ন্ত্রিত রক্তে চিনি বা গ্লুকোজের ইঙ্গিত হতে পারে এমন ৮টি প্রধান লক্ষণ:
১. অতিরিক্ত তৃষ্ণা অনুভব করা
এটি অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসের প্রাথমিক লক্ষণগুলোর একটি, যাকে বলে পলিডিপসিয়া। রক্তে চিনি বেড়ে গেলে শরীর অতিরিক্ত গ্লুকোজ প্রস্রাবের মাধ্যমে বের করে দেওয়ার চেষ্টা করে। এতে শরীর পানিশূন্য হয়ে পড়ে, ফলে মস্তিষ্ক বেশি পানি চাওয়ার সংকেত পাঠায়। আপনি অনেক পানি খেলেও তৃষ্ণা মেটে না, বিশেষ করে রাতে।
২. ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া
যখন রক্তে গ্লুকোজ ১৮০ মিগ্রা/ডেসিলিটারের বেশি হয়, তখন কিডনি তা শরীর থেকে বের করে দেওয়ার জন্য অতিরিক্ত প্রস্রাব তৈরি করে। এটিকে বলে পলিউরিয়া। এতে দিনের বেলা এবং রাতে বারবার প্রস্রাবের প্রয়োজন হয়, ঘুমে বিঘ্ন ঘটে এবং শরীরে ক্লান্তি তৈরি হয়। দীর্ঘমেয়াদে এটি পানিশূন্যতা ও ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্যহীনতা ঘটাতে পারে।
৩. অতিরিক্ত ক্ষুধা লাগা
যদিও রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বেশি, তবুও ইনসুলিনের অভাব বা ইনসুলিন প্রতিরোধের কারণে কোষগুলো যথেষ্ট গ্লুকোজ গ্রহণ করতে পারে না। ফলে মস্তিষ্ক বারবার খাওয়ার সংকেত দেয়, যাকে বলা হয় পলিফেজিয়া। আপনি অনেক খেয়েও ক্ষুধা মেটে না। যদি এটি অনিয়ন্ত্রিত থাকে, তাহলে ওজন বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
৪. ওজন হ্রাস (কারণ ছাড়াই)
যখন গ্লুকোজ কোষে ঢুকতে পারে না, তখন শরীর শক্তির জন্য চর্বি ও পেশি ভাঙতে শুরু করে। এতে খাদ্যাভ্যাস একই থাকলেও ওজন কমে যেতে পারে। এটি টাইপ ১ ডায়াবেটিসে বেশি দেখা যায়, তবে খারাপভাবে নিয়ন্ত্রিত টাইপ ২ ডায়াবেটিসেও হতে পারে।
৫. অতিরিক্ত ক্লান্তি বা দুর্বলতা
গ্লুকোজ শরীরের প্রধান জ্বালানি। কিন্তু এটি কোষে না পৌঁছালে শরীর শক্তি হারায় এবং সব সময় ক্লান্তি লাগে। পর্যাপ্ত ঘুম বা খাবার সত্ত্বেও অবসাদ কাটে না। এটি অনেক সময় ডায়াবেটিসের প্রাথমিক উপসর্গ হিসেবেও দেখা দেয়।
৬. ঝাপসা দেখা বা দৃষ্টিশক্তির সমস্যা
উচ্চ রক্তে চিনি চোখের টিস্যু থেকে তরল টেনে নেয়, যা চোখের লেন্সে প্রভাব ফেলে। ফলে লেন্স ফুলে গিয়ে আকার বদলে যায়, এবং ঝাপসা বা বিকৃত দৃষ্টি দেখা দেয়। দীর্ঘমেয়াদে এটি রেটিনার ক্ষতি করে, যার ফলে ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি এবং দৃষ্টিশক্তি হ্রাস পেতে পারে।
৭. ক্ষত শুকাতে দেরি হওয়া ও ঘন ঘন সংক্রমণ হওয়া
উচ্চ রক্তে চিনি রক্ত সঞ্চালনকে প্রভাবিত করে এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করে দেয়। ফলে শরীর নিজে থেকে ক্ষত সারাতে পারে না, এবং সহজে ইনফেকশন হয়—বিশেষত ত্বক, মাড়ি, প্রস্রাবের পথ এবং পায়ে। এই কারণে ডায়াবেটিস রোগীদের মাঝে পায়ে ঘা ও ত্বকের সমস্যার আশঙ্কা বেশি।
৮. হাতে-পায়ে ঝিনঝিন, জ্বালা বা অবশ ভাব
এটি ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথির লক্ষণ, যা দীর্ঘমেয়াদে উচ্চ রক্তে চিনি থাকার ফলে স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হলে হয়। সাধারণত পায়ের আঙুল বা হাতের আঙুলে হালকা ঝিনঝিন, পুড়ে যাওয়ার মতো অনুভূতি বা অবশভাব দিয়ে শুরু হয়, পরে ব্যথা বা অনুভূতি হারানোর মতো সমস্যায় পরিণত হতে পারে। এতে চলাফেরা ব্যাহত হয় এবং পায়ের আঘাত টের না পাওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।
আবির