ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ৩১ জুলাই ২০২৫, ১৬ শ্রাবণ ১৪৩২

যে ৫টি লক্ষণ বলে দিবে আপনি হাই-ফাংশনিং ডিপ্রেশনে ভুগছেন

প্রকাশিত: ১৮:২৯, ৩০ জুলাই ২০২৫

যে ৫টি লক্ষণ বলে দিবে আপনি হাই-ফাংশনিং ডিপ্রেশনে ভুগছেন

মানসিক সুস্থতা ঠিক ততটাই গুরুত্বপূর্ণ, যতটা শারীরিক সুস্থতা। কিন্তু বাইরের জগতে আপনি যতই হাসিমুখে থাকুন, ভেতরে কোথাও যদি ক্লান্তি, বিষণ্ণতা বা শূন্যতা বাসা বাঁধে তাহলে সেটা ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। কারণ অনেক সময় মানুষ একা একাই লড়ে যান, কারো কিছু বুঝতেই দেন না। দিন কাটে, দায়িত্ব চলে, কথাবার্তা হয় স্বাভাবিক… অথচ মনের গভীরে এক চাপা দুঃখ রয়ে যায়। এটাই হতে পারে ‘হাই-ফাংশনিং ডিপ্রেশন’।

বিখ্যাত মনোবিদ ও নিউ ইয়র্ক টাইমস বেস্টসেলিং লেখক ড. জুলি স্মিথ সম্প্রতি এই বিষণ্ণতার ধরণটি নিয়ে আলোচনায় এনেছেন ৫টি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ। যা খুব স্বাভাবিক ও গোপনে ঘটে চললেও, দীর্ঘ মেয়াদে আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য হতে পারে মারাত্মক ক্ষতির কারণ।

হাই-ফাংশনিং ডিপ্রেশন আসলে কী?
এটি এখনো কোনও ক্লিনিক্যাল রোগ হিসেবে নির্ধারিত না হলেও, বাস্তবে বহু মানুষ এই অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন। বাইরের দুনিয়ায় তারা ঠিকঠাক কাজ করছেন, হাসছেন, কথা বলছেন, পারফর্ম করছেন—তবে তাদের মনের ভেতরে যেন এক ধরণের ক্লান্তি, শূন্যতা আর মন খারাপের অনুভূতি চুপিচুপি জায়গা করে নিচ্ছে।

এই ধরনের বিষণ্ণতার সবচেয়ে জটিল দিক হলো এটি সহজে ধরা পড়ে না। এমনকি ব্যক্তি নিজেও বুঝতে পারেন না ঠিক কী কারণে তিনি আনন্দ পাচ্ছেন না, কেন সব কিছু এত ভারী লাগছে।

ড. স্মিথ বলেন, “ডিপ্রেশন শুরু হয় না যেদিন আপনি বিছানা থেকে উঠতেই পারছেন না। এটা তার অনেক আগেই শুরু হয় যখন আপনি স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করেও ভিতরে ভেতরে ভেঙে পড়ছেন। যদি আমরা তখনই সাহায্য না নিই, তাহলে পরে সামাল দেয়া আরও কঠিন হয়ে যায়।”

হাই-ফাংশনিং ডিপ্রেশনের ৫টি লক্ষণ
ড. স্মিথ জানিয়েছেন, এই ধরনের বিষণ্ণতার কিছু স্পষ্ট লক্ষণ রয়েছে। এগুলো শুরুতে ছোট মনে হলেও, সময়ের সঙ্গে বাড়তে পারে।

১. একা হলেই মন ভেঙে পড়ে
সারাদিন ‘সব ঠিক আছে’ মুখোশ পরে থাকা যায়, কিন্তু রাতের বেলায়, একা সময় কাটাতে গেলে ভিতরের দুর্বলতা বেরিয়ে পড়ে। নিজের যত্ন নেয়ার ইচ্ছেটুকুও হারিয়ে যায়।

২. আড্ডা বা অনুষ্ঠানে যাওয়া মানেই মানসিক যুদ্ধ
বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানো বা পার্টিতে যাওয়া যেখানে মজা হওয়ার কথা, সেখানে আপনাকে মনে হয় আপনি কোনো পরীক্ষা দিতে যাচ্ছেন। প্রতিটি হাসি যেন কষ্ট করে টেনে আনা।

৩. সোশ্যাল মিডিয়া বা সিরিজ দেখে নিজেকে ভুলিয়ে রাখা
যখন আপনি একের পর এক ভিডিও, রিল বা সিরিজ দেখে সময় পার করছেন হয়তো সেটাই আপনার অনুভূতিগুলো থেকে পালানোর উপায়। সঙ্গে আসে চিপস, চকোলেট বা অস্বাস্থ্যকর খাবার।

৪. কাজ করছেন, তবু মনে হয় মনেই নেই
আগে যেসব কাজে আনন্দ পেতেন, এখন তা কেবলই দায়িত্বের মতো লাগে। কাজ করছেন ঠিকই, কিন্তু মনের ভেতরে কোনও জোশ নেই, উচ্ছ্বাস নেই।

৫. বাইরে থেকে সফল, ভিতরে ফাঁকা
সবাই হয়তো ভাবছে আপনি দুর্দান্ত করছেন। কিন্তু আপনার ভেতরের অনুভূতি ঠিক উল্টো প্রতিদিন একরকম শূন্যতা, অর্থহীনতা অনুভব করছেন।

নিজের প্রতি সৎ হোন
যতদিন না আপনি নিজে নিজের অনুভূতিগুলো গুরুত্ব দিয়ে দেখবেন, ততদিন কেউই বুঝবে না আপনি আসলে কেমন আছেন। হাই-ফাংশনিং ডিপ্রেশন তাই অনেক সময় ‘নীরব সংকট’ হয়ে ওঠে।

আপনার হাসির আড়ালে যদি বিষণ্ণতা লুকিয়ে থাকে, দয়া করে সেটা ছোট করে দেখবেন না। মানসিক চাপ, ক্লান্তি, শূন্যতা এসবকে গুরুত্ব দিন। প্রয়োজনে কাউন্সেলিং নিন, মন খুলে কথা বলুন। কারণ সুস্থ থাকতে হলে শুধু শরীর নয়, মনেরও দরকার যত্ন আর ভালোবাসা।

 

 


সূত্র:https://tinyurl.com/5n99pezr

আফরোজা

×