ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ৩১ জুলাই ২০২৫, ১৬ শ্রাবণ ১৪৩২

কলাপাড়ার স্বাস্থ্যসেবায় ফের ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই, পদায়ন হলেন ৫ চিকিৎসক

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, পটুয়াখালী

প্রকাশিত: ১৮:০৮, ৩০ জুলাই ২০২৫

কলাপাড়ার স্বাস্থ্যসেবায় ফের ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই, পদায়ন হলেন ৫ চিকিৎসক

ছবি: দৈনিক জনকন্ঠ।

সাগরপারের জনপদ পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় পাঁচ জন মেডিকেল অফিসার পদায়ন করায় ভেঙে পড়া চিকিৎসা সেবায় অনেকটা প্রাণ ফিরেছে। মেডিকেল অফিসার বিহীন ৫০ শয্যার এই হাসপাতাল নির্ভর তিন লক্ষাধিক মানুষের চিকিৎসা সেবায় চলছিল মহাসংকটকাল। এছাড়া দীর্ঘ এক যুগের অনিয়ম, দালাল দৌরাত্ম্যের কারণে চিকিৎসা সেবার ছিল বেহাল দশা।

চিকিৎসা সেবার বেহাল দশার জন্য স্থানীয় মানুষ এক যুগকালীন চাকরিরত এক চিকিৎসক নিয়ন্ত্রিত সিন্ডিকেটকে দায়ী করে আসছিলেন। সম্প্রতি তাকে বদলি করায় জনমনে স্বস্তি ফিরেছে। এনিয়ে কলাপাড়ার ছাত্র জনতার সচেতন একটি অংশ আন্দোলন করে আসছিলেন। ওই সিন্ডিকেটের কারণে এখানে পদায়ন হওয়া নতুন চিকিৎসকরা পর্যন্ত স্বাচ্ছন্দ্যে কলাপাড়া হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা দিতে পারতেন না। বাধ্য হয়ে স্বেচ্ছায় বদলি হয়ে অন্যত্র চলে যেতেন। অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছে যে হাসপাতালটি মেডিকেল অফিসারবিহীন হয়ে যায়। 

ফলে বহির্বিভাগে আসা দৈনিক ৩০০-৩৫০ রোগীর চিকিৎসা সেবা বন্ধের উপক্রম হয়ে পড়েন। জরুরি  চিকিৎসা সেবাও সংকটে পড়ে। ১২ টি ইউনিয়ন ও দুটি পৌরসভার তিন লক্ষাধিক মানুষের জন্য তিনজন চিকিৎসক কর্মরত ছিলেন। আবাসিক মেডিকেল অফিসারসহ কোন মেডিকেল অফিসার ছিলেন না। সম্প্রতি আলোচিত বিতর্কিত পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ জুনাইদ খান লেলিনকে ছাত্র জনতার দাবির প্রেক্ষিতে বদলি করা হয়। 

যোগদান করেন ডাঃ শংকর প্রসাদ অধিকারী। তিনি যোগদান করার সময় দুই জন জুনিয়র কনসালটেন্ট ডাঃ কামরুন্নাহার মিলি ও ডাঃ শরীফ শায়লা ইসলামকে কর্মরত পেয়েছেন। এভাবে দুইজন জুনিয়র কনসালটেন্ট নিয়ে জোড়াতালি দিয়ে চলছিল চিকিৎসা সেবা। বাস্তবে কোন মেডিকেল অফিসার কর্মরত ছিলেন না। ডাক্তারসহ ২৪৬টি পদের মধ্যে ১০৪টি পদ শূন্য ছিল। ফলে পায়রা বন্দর ও, পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ একাধিক মেগা প্রকল্প ও পর্যটন এরিয়া ও পার্শ্ববর্তী রাঙ্গাবালী-তালতলীর একাংশের রোগীদের চিকিৎসা সেবার অবলম্বন ৫০ শয্যার কলাপাড়া ও ২০ শয্যার কুয়াকাটা হাসপাতালের চিকিৎসা কার্যক্রম ভেঙে পড়ে। 

এখানকার চিকিৎসা সেবার দুরবস্থা কাটিয়ে উঠতে গত ১৫ জুলাই থেকে ২৭ জুলাই পর্যন্ত চারজন মেডিকেল অফিসার পদায়ন করা হয়। এরা হলেন, ডাঃ ববি মালাকার, ডাঃ মোঃ মাহমুদুল হাসান, ডাঃ মোঃ আব্দুল মালেক মিয়া ও ডাঃ মোঃ আতাউর রহমান। এছাড়া ডাঃ মোঃ আমানত হোসেন যোগদান করার প্রক্রিয়ায় রয়েছেন। ফলে কলাপাড়ার ভেঙে পড়া স্বাস্থ্যসেবায় গতি ফিরেছে। শৃঙ্খলা ফিরতে শুরু করেছে। রোগীরাও স্বস্তিবোধ করছেন। মঙ্গলবার রাতে হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে রোগীরা আগের চেয়ে স্বস্তিবোধ করছেন। সাগরে ট্রলার ডুবিতে অসুস্থ অবস্থায় ভর্তি থাকা রোগী মোঃ হারুন জানান, হাসপাতালে আসার পরে ডাক্তার নার্স তাদের সাধ্যমতো চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন। হাসপাতাল থেকে কিছু কিছু প্রয়োজনীয় ওষুধও সরবরাহ করা হচ্ছে। 

চিকিৎসা সেবার মানোন্নয়নে আন্দোলনরত ছাত্র সংগঠক আল ইমরান জানান, আরো প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক পদায়ন করতে হবে। এছাড়া যারা ডেপুটেশনে যে-সকল চিকিৎসক অন্যত্র রয়েছেন তাদেরকে ফেরত আনা প্রয়োজন। হাসপাতালের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী যারা যুগের পর যুগ এখানে চাকরি করে যারা হাসপাতালকে নিজেদের বাড়িঘর মনে করছেন তাঁদের অন্যত্র বদলি করা প্রয়োজন। রোগীর সঙ্গে কোনো ধরনের খারাপ আচরণ বন্ধ করতে হবে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম বৃদ্ধি করতে হবে। ভর্তি থাকা রোগিদের খাবারের মান উন্নত করা। সর্বোপরি অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা নিরীক্ষা বন্ধ করতে হবে। তাইলেও রোগীরা স্বস্তিবোধ করবেন। এমনটাই দাবি তাঁদের। তাঁদের বক্তব্য, কে আসল, কে গেল বিষয় এটি নয়। সরকারের স্বাস্থ্যসেবা রোগী বান্ধব এটাই তাঁদের প্রত্যাশা।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ শংকর প্রসাদ অধিকারী জানান, জরুরি ভিত্তিতে কমপক্ষে ৬জন মেডিকেল অফিসার পদায়ন করা হয়েছে। আরো চিকিৎসক যোগদান করবেন বলে তিনি জানান। এখানকার স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে তিনি সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন বলে জানান।

মিরাজ খান

×