
ছবি: সংগৃহীত
গাজা উপত্যকার জনগণ বর্তমানে ইতিহাসের এক নজিরবিহীন ভয়াবহ মানবিক সংকটের মুখোমুখি। ইসরাইলের দখলদার বাহিনী দীর্ঘদিন ধরে গাজায় কঠোর অবরোধ আরোপ করে রেখেছে, যার ফলে সেখানকার মানুষ চরম খাদ্য ও চিকিৎসা সংকটে ভুগছে। অপুষ্টির কারণে প্রতিদিন শিশুদের মৃত্যু ঘটছে, বেড়ে চলেছে জরুরি চিকিৎসা সহায়তা প্রয়োজন এমন নারী ও শিশুর সংখ্যা।
এই অবর্ণনীয় দুঃখ-দুর্দশা সহ্য করতে না পেরে মানবতা আর ঈমানের এক অনন্য নিদর্শন স্থাপন করেছেন কয়েকজন মিশরীয় নাগরিক। তারা প্লাস্টিকের বোতলে চাল, ডাল ও শুকনো খাবার ভরে ভূমধ্যসাগরে ছুড়ে দিয়েছেন, এই বিশ্বাসে যে এগুলো একদিন গাজার উপকূলে পৌঁছাবে।
অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, সম্প্রতি এর মধ্যে একটি বোতল গাজার এক মৎসজীবীর হাতে পৌঁছায়। আনন্দে কেঁদে ফেলেন ওই ব্যক্তি। টিআরটি ওয়ার্ল্ডের প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায়, বোতলটি হাতে নিয়ে তিনি আবেগভরা কণ্ঠে বলেন, “আল্লাহু আকবার। মিশরের ভাইয়েরা আমাদের জন্য চাল-ডাল পাঠিয়েছেন। আজ আমরা অন্তত ডাল খেতে পারব।”
বোতলের ভেতরে একটি নোটও ছিল, যাতে লেখা ছিল:
“মিশর দীর্ঘজীবী হোক। আল্লাহর ইচ্ছায় মিশর, আরব বিশ্ব ও ইসলামিক উম্মাহ দীর্ঘজীবী হোক।”
গত ২৩ জুলাই এক মিশরীয় ব্যক্তি গাজার উদ্দেশে সাগরে বোতল ছুঁড়ে দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “গাজার ভাইয়েরা, আমাদের ক্ষমা করুন। আমরা এর চেয়ে বেশি কিছু করতে পারছি না।”
এই উদ্যোগকে ইসরাইলি অবরোধের বিরুদ্ধে এক মরিয়া, কিন্তু আন্তরিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখা হচ্ছে। কঠোর অবরোধের কারণে শত শত ত্রাণবাহী ট্রাক গাজার সীমান্তে আটকে রয়েছে, লাখো মানুষ অনাহারের দ্বারপ্রান্তে।
এই প্রচারণা জাপানে বসবাসরত এক মিশরীয় শিক্ষাবিদ ও প্রকৌশলীর প্রস্তাবে শুরু হয়। সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক প্রশংসিত হওয়া এই উদ্যোগ এখন লিবিয়া, টিউনিসিয়া, আলজেরিয়া ও মরক্কোর মানুষদেরও অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে।
জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (WFP) সতর্ক করেছে, গাজার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মানুষ প্রতিদিন অভুক্ত থাকছেন। এই পরিস্থিতিতে সমুদ্রপথে বোতলে খাবার পাঠানোই যেন হয়ে উঠেছে মানবিকতার শেষ ভরসা।
ছামিয়া