
ছবি: সংগৃহীত
মানবজাতির মঙ্গল অভিযানের পরিকল্পনা যতই বাস্তবের পথে এগোচ্ছে, ততই সামনে আসছে মহাকাশে মানব প্রজনন ও নিরাপদ শিশুজন্মের প্রশ্ন। কারণ, মঙ্গলে যাত্রা করে ফিরে আসতে সময় লাগবে প্রায় ৯ মাস—যা পুরো একটি গর্ভাবস্থার সমান। ফলে গর্ভধারণ থেকে শুরু করে প্রসব পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়াটি মহাশূন্যেই সম্পন্ন হতে পারে।
গবেষণা বলছে, মহাকাশে গর্ভধারণ সম্ভব হলেও প্রসব হবে জটিল
‘সায়েন্স অ্যালার্ট’-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, মাইক্রোগ্র্যাভিটির (অতি নিম্ন মাধ্যাকর্ষণ) কারণে মহাকাশে গর্ভধারণ শারীরিকভাবে কঠিন হলেও একবার ভ্রূণ গর্ভে প্রতিস্থাপিত হলে গর্ভাবস্থার অগ্রগতি সম্ভব। কিন্তু প্রসব এবং নবজাতকের যত্ন নেওয়া হবে একেবারেই জটিল।
বিজ্ঞানী আরুন ভি. হোলডেন তাঁর গবেষণায় জানিয়েছেন, মহাকাশে মাধ্যাকর্ষণ না থাকায় তরল ও মানুষ ভেসে থাকে, ফলে প্রসব ও শিশু দেখভাল হবে অত্যন্ত ঝামেলাপূর্ণ। মাটিতে যেখানে শিশুকে কোল নেওয়া, দুধ খাওয়ানো বা শুইয়ে দেওয়া সহজ, মহাশূন্যে তা হয়ে উঠবে কষ্টকর।
ভ্রূণ নিজেই যেন এক ধরনের মাইক্রোগ্র্যাভিটিতে বেড়ে ওঠে
তবে আশার কথা হচ্ছে, মায়ের গর্ভেই ভ্রূণ এমনিওটিক ফ্লুইডে ভেসে বেড়ায়—যা এক ধরনের ভারহীন পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। এটি অনেকটা মহাকাশে নভোচারীদের অভিজ্ঞতার মতো। এ কারণেই নভোচারীরা প্রশিক্ষণের সময় পানির ট্যাংকে মহাকাশের মত ভারহীনতা অনুশীলন করেন।
তবে আসল হুমকি লুকিয়ে আছে মহাজাগতিক রশ্মিতে
পৃথিবীর বাইরে সবচেয়ে বড় হুমকি হলো মহাজাগতিক রশ্মি (Cosmic Rays)। এই উচ্চ-শক্তির রশ্মিগুলো মূলত ইলেকট্রনবিহীন পারমাণবিক কণার সমষ্টি, যেগুলো প্রায় আলোর গতিতে মহাকাশে ছুটে বেড়ায়। এই কণাগুলো শরীরের কোষে মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে। গর্ভাবস্থার শুরুতেই যখন কোষ বিভাজন এবং টিস্যু গঠন হয়, তখন একটি শক্তিশালী কসমিক রশ্মির আঘাত গর্ভপাত ঘটাতে পারে—যদিও এমন হিট সরাসরি হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম।
পরবর্তী ধাপে ঝুঁকি আরও বাড়ে
প্রথম ত্রৈমাসিক শেষে যখন প্লাসেন্টা পূর্ণাঙ্গভাবে গঠিত হয় এবং গর্ভে শিশু দ্রুত বাড়তে থাকে, তখন কসমিক রশ্মির আঘাত গর্ভাশয়ে পেশিতে সঙ্কোচন ঘটাতে পারে, যার ফলে আগেভাগেই প্রসব শুরু হতে পারে। আর মহাকাশে প্রসবকালীন চিকিৎসা সুবিধা প্রায় নেই বললেই চলে।
মাইক্রোগ্র্যাভিটিতে শিশুর বিকাশ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা
মহাশূন্যে জন্মানো শিশু গড়াবে না, বসবে না, হাঁটতে শিখবে না স্বাভাবিক নিয়মে। কারণ, ওজনহীন পরিবেশে শিশুদের ‘পোস্টারাল রিফ্লেক্স’ বা ভারসাম্য রক্ষা শেখার প্রাকৃতিক সুযোগ থাকে না। ফলে তার মোটর স্কিল, যেমন—মাথা উঁচু করা, হামাগুড়ি দেওয়া বা হাঁটার ক্ষমতা বিকাশে বিলম্ব বা জটিলতা দেখা দিতে পারে।
জন্মের পরও ঝুঁকি থাকে—মস্তিষ্কে স্থায়ী ক্ষতির সম্ভাবনা
শিশুর মস্তিষ্ক জন্মের পরও গঠিত ও পরিপক্ব হতে থাকে। কিন্তু মহাজাগতিক রশ্মির দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবে তার মনোবিকাশ, স্মৃতি, আচরণ এবং স্বাস্থ্য চিরতরে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
মহাশূন্যে জন্ম সম্ভব হলেও ঝুঁকি অনেক বেশি
সবকিছু মিলিয়ে বিজ্ঞানীরা বলছেন, মহাশূন্যে শিশুর জন্ম একেবারে অসম্ভব নয়, তবে বর্তমান প্রযুক্তি ও জ্ঞানের সীমাবদ্ধতায় তা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ও জটিল। এমন ঘটনা ঘটাতে হলে মহাকাশযানে অতিমাত্রায় সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে—যা এখনো অনেকটাই অসম্ভব।
সূত্র: এনডিটিভি।
রাকিব