
ছবিঃ সংগৃহীত
দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় ফিরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আমদানি পণ্যের ওপর নতুন ও উচ্চ হারে শুল্ক আরোপ করে বৈশ্বিক বাণিজ্যে একপ্রকার ঝড় তুলে দিয়েছেন। প্রথমে চীনের পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ শুরু হলেও দ্রুতই তা বিশ্বের প্রায় সব দেশের ওপর ছড়িয়ে পড়ে।
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করা প্রায় সব পণ্যের ওপর কমপক্ষে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপিত হয়েছে। আগস্ট মাসের ১ তারিখ থেকে আরও বেশি হারে শুল্ক কার্যকর হতে যাচ্ছে।
"একটা পুরোপুরি দুঃস্বপ্ন"—এভাবেই নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন ইউটাহ-ভিত্তিক ‘ভিলেজ লাইটিং কোম্পানি’র মালিক জারেড হেনড্রিকস। ব্যবসায়িক খরচ মেটাতে তিনি এ বছর নিজের বাড়িকে বন্ধক রেখে ১৫ লাখ ডলারের ঋণ নিয়েছেন।
ট্রাম্পের নতুন শুল্কনীতির ফলে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্যের ওপর গড় শুল্কের হার ২.৫ শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত, যা গত এক শতাব্দীতে দেখা যায়নি।
হেনড্রিকসের মতে, শুল্ক আরোপের কারণে তার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় তৈরি ক্রিসমাস লাইট ও সাজসজ্জা পণ্যের খরচ মারাত্মক বেড়েছে। আগস্টের আগে তার বেশিরভাগ চালান পৌঁছায়নি, ফলে তিনি বড় কোম্পানিগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়েছেন।
“১০০ বিলিয়ন ডলারের শুল্ক আদায় নিয়ে উদযাপন করছে সরকার? এই টাকার বোঝা তো আমাদের মতো ছোট ব্যবসায়ীদের ঘাড়েই চাপছে,” বলেন তিনি।
জেনারেল মোটরস জানিয়েছে, এপ্রিল থেকে জুন মাসের মধ্যে তারা ১ বিলিয়ন ডলারের বেশি শুল্ক দিয়েছে, যদিও মেক্সিকো ও কানাডা থেকে আসা গাড়ির যন্ত্রাংশ কিছুটা ছাড় পেয়েছে। টেসলা অতিরিক্ত ৩০০ মিলিয়ন ডলার খরচ করেছে। খেলনা নির্মাতা হ্যাসব্রো ও ম্যাটেল জানিয়েছে, তারা এ বছর শুল্ক বাবদ কয়েক কোটি ডলার হারাবে এবং এর ফলে বিক্রির পূর্বাভাস কমিয়ে এনেছে। আরটিএক্স (সাবেক রেথিয়ন) বলেছে, শুল্কের কারণে তাদের ক্ষতি হবে প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ডলার।
স্টিল খাতের মতো কিছু ক্ষেত্রে দেশীয় চাহিদা বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে, এবং কিছু শ্রমিক ইউনিয়ন এই শুল্কনীতিকে সমর্থন করছে। তবে অর্থনীতিবিদরা সতর্ক করেছেন, এতে করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রবৃদ্ধি ধীর হতে পারে। লাভ কমে গেলে কোম্পানিগুলো বিনিয়োগ কমাতে বা দাম বাড়াতে বাধ্য হবে—যা বিক্রয়েও প্রভাব ফেলবে।
লস অ্যাঞ্জেলসের ‘ওয়াজা’ নামের একটি দোকান, যারা জাপানি তৈরি রান্নার ছুরি ও ধূপ বিক্রি করে, তারা ইতিমধ্যেই ১০-২০ শতাংশ পর্যন্ত দাম বাড়িয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী সহ-সভাপতি আনরি সেকি বলেন, “এই চুক্তি আমাদের জন্য একেবারেই অন্যায্য মনে হচ্ছে।"
ওহাইও-ভিত্তিক গিটার প্যাডেল প্রস্তুতকারক কোম্পানি ‘আর্থকুয়েকার ডিভাইসেস’–এর প্রধান নির্বাহী জুলি রবিনস বলেন, "আমার দৃষ্টিতে শুল্ক এবং চলমান বাণিজ্যযুদ্ধ আমাদের ব্যবসার জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি।"
গোল্ডম্যান স্যাকস বিশ্লেষকদের মতে, এই শুল্কনীতি ২০২৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ১ শতাংশ কমিয়ে দেবে। ইয়েল ইউনিভার্সিটির বাজেট ল্যাবের অর্থনীতি পরিচালক আর্নি টেডেস্কি বলছেন, “ভালো ও মন্দের মাঝখানে একটা বিশাল ব্যবধান আছে—এটা হয়তো খুব খারাপ নয়, তবে নিশ্চয়ই ভালোও নয়।”
এদিকে, ওয়েলস ফারগোর অর্থনীতিবিদ টিম কুইনলান সতর্ক করেছেন, ভোক্তা ব্যয় কমে যাওয়ায় ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধি নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে।
আগস্টের শুল্ক কার্যকরের পর এর পূর্ণ প্রভাব আগামী মাসগুলোতে দৃশ্যমান হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সূত্রঃ বিবিসি
নোভা