ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ৩০ জুলাই ২০২৫, ১৪ শ্রাবণ ১৪৩২

হাটে হাঁড়ি ভাঙল ইসরাইলি গণমাধ্যম, ইসরাইলি সেনাদের চাকরি ছাড়ার হিড়িক

প্রকাশিত: ১৭:০৮, ২৯ জুলাই ২০২৫

হাটে হাঁড়ি ভাঙল ইসরাইলি গণমাধ্যম, ইসরাইলি সেনাদের চাকরি ছাড়ার হিড়িক

ছবি: সংগৃহীত

নিজেদের নানা রকম কাণ্ডকীর্তি নিয়ে বরাবরই ধোঁয়াশা সৃষ্টি করে রাখতে ভালোবাসে ইসরাইল। আর মধ্যপ্রাচ্য যেন সেই নাটকের প্রধান চারণভূমি—বিশেষ করে গাজা উপত্যকা। দখলদার প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন সরকার নিঃসন্দেহে একের পর এক নিঃসংশতা চালিয়ে যাচ্ছে—তবে শুধু ফিলিস্তিনিদের উপরই নয়, নিজের সেনাদের বিপর্যয় নিয়েও যেন তারা চালাচ্ছে আরেক লুকোচুরি খেলা।

ইসরাইলি সরকার যেখানে সেনা হতাহতের তথ্য নিয়ে সরল-সোজা পরিসংখ্যান দিচ্ছে, সেখানে খোদ ইসরাইলি সংবাদমাধ্যম ইয়েদিয়ত আহরোনোত এক বিস্ফোরক প্রতিবেদন প্রকাশ করে সেই তথ্যে বড়সড় প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।

এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজা যুদ্ধ শুরুর পর কমপক্ষে ৫,৫০০ ইসরাইলি সেনা ও পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন, যার বড় একটি অংশ চিরস্থায়ী শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়ে গেছেন। শুধু তাই নয়—আগামী আড়াই বছরের মধ্যেই আহতের সংখ্যা এক লাখ ছাড়িয়ে যাবে, যার অর্ধেকই মানসিকভাবে অসুস্থ বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

অথচ সরকারি হিসেবে, আনুষ্ঠানিকভাবে ইসরাইল বলছে, আহত ৬,১৪৫ এবং নিহত ৮৯৫। এই বিপুল গরমিল যেন আরও বড় সত্যকে আড়াল করার চেষ্টা।


ইয়েদিয়ত আহরোনোতের দাবি অনুযায়ী, এ পর্যন্ত ১০,০০০-এরও বেশি সেনা মানসিক অসুস্থতায় ভুগছেন, যাদের মধ্যে ৩,৬৭৯ জন ভুগছেন পিটিএসডি (Post-Traumatic Stress Disorder)-তে। শুধু ২০২৪ সালেই প্রায় ৯,০০০ সেনা মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য আবেদন করেছেন। যার মধ্যে উদ্বেগ, হতাশা, তীব্র আতঙ্কের মতো সমস্যা স্পষ্ট।

গত বছর ১,৬০০ জনকে আনুষ্ঠানিকভাবে পিটিএসডি রোগী হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে, যাদের মধ্যে ১,৫১২ জন পুরুষ এবং বাকিরা নারী সদস্য। পিটিএসডি আক্রান্তদের মধ্যে ৬৯৩ জন গাজার অভিযানে অংশগ্রহণ করেছিলেন, যাদের মধ্যে ১৪৪ জন ছিলেন নিয়মিত বাহিনীর, ১৮৪ জন অতিরিক্ত বাহিনীর এবং ৫০০ জন সেনাবাহিনীর বিভিন্ন ইউনিটের।


ইসরাইলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গাজা যুদ্ধের পর ১২,০০০ নিয়মিত ও অতিরিক্ত বাহিনীর সদস্য সেনাবাহিনী ত্যাগ করেছেন। এই প্রবণতা শুধু সামরিক নয়, দেশের অর্থনীতিতেও সরাসরি প্রভাব ফেলছে, কারণ সেনাদের মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হওয়া কর্মক্ষমতা হ্রাস এবং জনবল সংকট তৈরি করছে।


ইসরাইলভিত্তিক দুটি শীর্ষস্থানীয় মানবাধিকার সংস্থা বেতসেলেম (B'Tselem) ও ফিজিশিয়ানস ফর হিউম্যান রাইটস বলছে—গাজায় ইসরাইল গণহত্যা চালাচ্ছে। তাদের দাবি, ইসরাইলকে থামানো তার পশ্চিমা মিত্রদের নৈতিক এবং আইনি দায়িত্ব। কারণ এই যুদ্ধ শুধু ফিলিস্তিনিদের নয়, ইসরাইলি সমাজের মনস্তত্ত্বকেও ভেঙে দিচ্ছে।

শেখ ফরিদ

আরো পড়ুন  

×