
ছবি: দৈনিক জনকন্ঠ।
টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার বিভিন্ন বাজারে যাত্রীদের জন্য নির্মিত ছাউনিগুলো এখন যাত্রীদের নয়, ব্যবসায়ীদের দখলে চলে গেছে। কোথাও মোবাইল সার্ভিসিং, কোথাও চায়ের দোকান, কোথাও আবার ফল কিংবা ওষুধের দোকান চলছে মাসিক ভাড়া ও মোটা অঙ্কের জামানতের বিনিময়ে। অথচ ছাউনিগুলো তৈরির মূল উদ্দেশ্য ছিল—সাধারণ মানুষ যেন রোদ, বৃষ্টি বা ঝড়ের সময় সাময়িক আশ্রয় নিতে পারে। বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, ছাউনি থাকলেও যাত্রীরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে যানবাহনের অপেক্ষা করছেন।
এমন চিত্র দেখা গেছে উপজেলার বড়চওনা, বেলতলী, কচুয়া, কুতুবপুর বাজার এবং পৌর শহরের কেন্দ্রীয় যাত্রী ছাউনিতে। কোথাও পুরো ছাউনিই বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে, কোথাও আবার যাত্রী বসার জায়গাটুকুও দোকানে পরিণত হয়েছে।
বড়চওনা বাজারের ছাউনিটি তিন কক্ষবিশিষ্ট। এর মাঝের কক্ষ যাত্রী বসার জন্য নির্ধারিত থাকলেও এখন সেখানে চলছে চা-পানের দোকান। পাশের এক কক্ষে মোবাইল সার্ভিসিং ব্যবসা এবং অন্য কক্ষে ফলের দোকান। মোবাইল সার্ভিসিং দোকানে ২ লাখ ৭৫ হাজার এবং ফলের দোকানে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা জামানত নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। দুটি দোকান থেকেই মাসে তিন হাজার টাকা করে ভাড়া নেয়া হয়। যাত্রী বসার নির্ধারিত কক্ষেও এখন ব্যবসা চলছে। নিয়ন্ত্রণ করছে হাট-বাজার ইজারা কমিটি।
কচুয়া যাত্রী ছাউনিতে ওষুধের দোকান করেন জহিরুল ইসলাম তালুকদার, জামানত ৩ লাখ টাকা। আর ভাড়া দেন সাড়ে তিন হাজার টাকা।
যাত্রী ছাউনি এভাবে দখলের ফলে নারী, শিশু ও বৃদ্ধসহ সাধারণ যাত্রীদের রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে বাসের জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে। কেউ কেউ ছায়া বা টিনের নিচে একটু জায়গা পেলে নিজেকে ভাগ্যবান ভাবছেন।
২০১৩-১৪ অর্থবছরে জেলা পরিষদের অর্থায়নে সখীপুর-ঢাকা সড়কে পাঁচটি যাত্রী ছাউনি নির্মাণ করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে ছাউনিগুলো নির্মাণ করা হয়েছিল। ফলে ৫-৬ বছরের মধ্যেই ছাদ চুঁইয়ে পানি পড়া শুরু করে। এখন বেশির ভাগ ছাউনির অবস্থাই জরাজীর্ণ।
বেলতলী বাজারের ছাউনিটি কেউ লিজ নেয়নি। স্থানীয় হযরত আলী নামে এক ব্যক্তি একটি কক্ষে মুদির দোকান চালান এবং অপর কক্ষে যাত্রীদের বসার ব্যবস্থা রেখেছেন। কুতুবপুর বাজারের ছাউনিতে দোকান কক্ষ সচল থাকলেও যাত্রী বসার কক্ষটি সম্পূর্ণ অকার্যকর। কচুয়া বাজারে একটি কক্ষে ওষুধের দোকান চলছে জামানত ও মাসিক ভাড়ার ভিত্তিতে, অপর কক্ষটি আংশিক যাত্রীসেবায় ব্যবহৃত হচ্ছে।
সখীপুর পৌর শহরের থানার পাশে অবস্থিত গুরুত্বপূর্ণ একটি ছাউনির অবস্থাও খুবই করুণ। দুই কক্ষের একটিতে চায়ের দোকান, অন্যটিতে বাসের টিকিট কাউন্টার চালু রয়েছে। ছাউনিটির চারপাশে ছড়ানো ময়লা-আবর্জনা, ডাস্টবিন ও দুর্গন্ধময় পরিবেশে যাত্রীরা দাঁড়াতেও পারেন না।
কলেজছাত্রী শিল্পী রাজর্ষী বলেন, ‘রোদ হোক বা বৃষ্টি, দাঁড়াতে হয় রাস্তায়। ছাউনিতে বসা তো দূরের কথা, দাঁড়ানোর জায়গাও নেই। এটা কি সত্যিই আমাদের জন্য বানানো?’
মোবাইল সার্ভিসিং ব্যবসায়ী সজীব হোসেন বলেন, ‘আমি তিন হাজার টাকা মাসিক ভাড়ায় দোকান নিয়েছি। জামানতও দিয়েছি।’ বড়চওনা ছাউনির লিজগ্রহীতা এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধ ঘোষিত ইউনিটের যুগ্ম আহ্বায়ক আল আমিন বলেন, ‘সব কিছু নিয়ম মেনেই চলছে।’ তবে তিনি জামানত ও ভাড়া গ্রহণের বিষয়টি স্বীকার করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সখীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল রনী বলেন, যাত্রী ছাউনিগুলো জেলা পরিষদের নিয়ন্ত্রণাধীন। তবে জনদুর্ভোগের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জেলা পরিষদ সচিব শামসুন্নাহার স্বপ্না বলেন, ‘জেলা পরিষদ ও সড়ক ও জনপদ বিভাগ যৌথভাবে আলোচনার মাধ্যমে যাত্রী ছাউনিগুলোর সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হবে। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে কিছু ছাউনির লিজ দেয়া হয়েছিল, সেগুলোর মেয়াদ সম্ভবত শেষ হয়েছে। তদন্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
মিরাজ খান