
ছবি: সংগৃহীত
একটি আন্তর্জাতিক গবেষণায় আবিষ্কৃত হয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (AI) জন্য এক নতুন ধরনের স্মৃতি আর্কিটেকচার— ‘কার্ভড নিউরাল নেটওয়ার্ক’। গবেষকদের দাবি, জ্যামিতির ধারণা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তৈরি এই প্রযুক্তি স্মৃতি স্মরণে এনেছে বিস্ফোরণাত্মক গতি—যা অনেকটা মানুষের হঠাৎ কিছু মনে পড়ে যাওয়ার ‘লাইটবাল্ব মুহূর্ত’-এর মতো।
এই অভিনব ধারণা নিয়ে গবেষণা করেছেন স্পেনের বাস্ক অ্যাপ্লায়েড ম্যাথমেটিকস সেন্টার (BCAM), জাপানের কিয়োটো বিশ্ববিদ্যালয়, যুক্তরাজ্যের সাসেক্স বিশ্ববিদ্যালয় এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠান আরায়া ইনকের বিজ্ঞানীরা। সম্প্রতি এ সংক্রান্ত গবেষণা নিবন্ধটি প্রকাশিত হয়েছে Nature Communications জার্নালে।
ডেটা বাড়িয়ে নয়, জায়গা বাঁকিয়ে স্মৃতি শক্তিশালী! আজকের প্রচলিত AI মডেলগুলো সাধারণত সরল পথ ধরে চিন্তা করে, যেখানে এক উপাদান অন্য একটির সাথে একরৈখিকভাবে যুক্ত থাকে। কিন্তু BCAM-এর গবেষক মিগুয়েল আগুইলেরা বলছেন, “মানব মস্তিষ্ক কাজ করে বহুমুখী ও সমন্বিত সংকেতের মাধ্যমে, যেখানে একাধিক উপাদান একই সময়ে একে অপরকে প্রভাবিত করে।”
এই জটিলতা অনুকরণ করতেই গবেষকরা AI-তে বক্র জ্যামিতি (curved geometry) যুক্ত করেছেন। এর ফলে তৈরি হয়েছে এমন স্মৃতি কাঠামো, যা অনেক বেশি মানবসদৃশ এবং কার্যকর, অথচ কম্পিউটেশনের ওপর কোনো বাড়তি চাপ না দিয়েই।
‘কার্ভড নিউরাল নেটওয়ার্ক’-এর তিনটি বৈশিষ্ট্য— ১. বিস্ফোরণাত্মক স্মৃতি স্মরণ (Explosive Memory Recall): এক ধরণের 'সুইচ অন' মুহূর্তে AI দ্রুত কোনো স্মৃতি বা তথ্য মনে করতে পারে। ২. স্বয়ংক্রিয় ফোকাস বদলানো (Self-Tuning Intelligence): তথ্য মনে করার সময় AI নিজেই মনোযোগ সামঞ্জস্য করে নেয়, যা প্রতিক্রিয়ার গতি বাড়ায়। ৩. কম ভুল, বেশি নির্ভুলতা (Fewer Mistakes): একটি মাত্র নিয়ন্ত্রণ প্যারামিটার ব্যবহার করে স্মৃতি শক্তি ও নির্ভুলতার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা যায়।
গবেষক পাবলো এ মোরালেস (Araya Inc.) বলেন, “এই বৈশিষ্ট্যগুলো আলাদাভাবে প্রোগ্রাম করা হয়নি, বরং বক্র জ্যামিতির গঠন থেকেই স্বাভাবিকভাবে তৈরি হয়েছে।”
পরিণতি: ব্যাখ্যাযোগ্য, অভিযোজ্য ও দ্রুতগতির AI বর্তমানের ‘ব্ল্যাক বক্স’ ধরনের AI মডেল অনেক শক্তিশালী হলেও বোঝা কঠিন। কিন্তু নতুন এই মডেলগুলো স্মৃতি প্রক্রিয়াকে আরও স্বচ্ছ ও মানব-সদৃশ করতে পারে। সাসেক্স বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ফের্নান্দো রোসাস বলেন, “এই কাজ দেখিয়েছে কীভাবে পদার্থবিদ্যা ও জ্যামিতি আমাদের প্রাকৃতিক এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উন্নয়নে দিশা দিতে পারে।”
গবেষণার অন্যতম সদস্য, কিয়োটো বিশ্ববিদ্যালয়ের হিদেয়াকি শিমাজাকি বলেন, “একটি সহজ ধারণা—‘জায়গা বাঁকালে কী হয়’—থেকে শুরু হয়ে আমরা একটি গভীর ও সৃজনশীল গবেষণা যাত্রা করেছি। এই আবিষ্কার ভবিষ্যতের AI-এর পথ প্রশস্ত করবে, নিঃসন্দেহে।”
আসিফ