
ছবিঃ ওপেনএআই-এর সিইও স্যাম অল্টম্যান
বিশ্বজুড়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) প্রযুক্তির বিস্তার নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিচ্ছে ঠিকই, কিন্তু এর বিপরীতে তীব্র আশঙ্কাও উত্থাপন করেছেন ওপেনএআই-এর সিইও স্যাম অল্টম্যান। তিনি জানিয়েছেন, এআই ব্যবহারের মাধ্যমে ব্যক্তির পরিচয় ভেঙে ফেলে ভয়ঙ্কর জালিয়াতি ঘটানোর শঙ্কা তৈরি হয়েছে এবং এতে আমরা এক ‘জালিয়াতির মহাসংকটের’ দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে আছি।
ফেডারেল রিজার্ভে একটি আলোচনা সভায় অল্টম্যান বলেন, “এখনো এমন কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠান আছে যারা শুধুমাত্র ভয়েস প্রিন্ট শুনে অর্থ স্থানান্তরের অনুমোদন দিচ্ছে — এটি খুবই বিপজ্জনক। কারণ, এআই ইতোমধ্যেই অধিকাংশ প্রচলিত যাচাইকরণ পদ্ধতিকে পরাজিত করেছে।”
তিনি সতর্ক করেন, এখন শুধু ভয়েসকল নয়, শিগগিরই এমন ভিডিওকল কিংবা ফেসটাইম আসবে, যা বাস্তবতা থেকে আলাদা করা সম্ভব হবে না। অল্টম্যান বলেন, যদিও OpenAI এ ধরনের প্রতারণামূলক প্রযুক্তি তৈরি করছে না, তবে এ ধরনের বাস্তবতাকে মোকাবেলার জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার এখনই সময়।
তিনি জানান, Tools for Humanity এর ‘দ্য অরব’ নামক একটি প্রকল্পের মাধ্যমে ‘মানবিক সনাক্তকরণ’ পদ্ধতি চালুর চেষ্টা চলছে, যাতে প্রযুক্তি এবং বাস্তবের মধ্যে পার্থক্য স্পষ্ট রাখা যায়।
অল্টম্যানের এই সতর্কবার্তা এসেছে এমন এক সময়ে, যখন হোয়াইট হাউস ‘AI Action Plan’ প্রকাশের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই পরিকল্পনার মাধ্যমে কিভাবে যুক্তরাষ্ট্র এআই প্রযুক্তি নিয়ন্ত্রণ করবে এবং বিশ্বে নেতৃত্ব বজায় রাখবে, তার দিকনির্দেশনা দেওয়া হবে।
এই আলোচনায় অংশ নিতে অল্টম্যান ওয়াশিংটন ডিসিতে উপস্থিত হন, যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বড় বড় আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরাও ছিলেন। আলোচনা শেষে জানানো হয়, আগামী বছর ওয়াশিংটন ডিসিতে OpenAI একটি নতুন অফিস চালু করবে। এতে থাকবেন প্রায় ৩০ জন কর্মী এবং এটি নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে যোগাযোগ, প্রযুক্তি প্রদর্শন ও প্রশিক্ষণ দেওয়ার কেন্দ্র হবে।
তবে প্রযুক্তির ঝুঁকির কথা বললেও, অল্টম্যান প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, যেন তারা এমন কঠোর আইন না করে যাতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর বিদেশি প্রতিযোগীদের সঙ্গে টেক্কা দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।
এদিকে AI জালিয়াতির বিষয়টি এখনো কল্পনাজগতের বিষয় নয়। এফবিআই ইতোমধ্যেই ভয়েস ও ভিডিও ক্লোনিং প্রতারণার বিষয়ে সতর্ক করেছে। এমনকি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও’র কণ্ঠস্বর নকল করে বিদেশি মন্ত্রীদের সঙ্গে যোগাযোগের ঘটনাও ঘটেছে সম্প্রতি।
অল্টম্যান আরও জানান, তার সবচেয়ে বড় ভয় হলো — বিশ্ব প্রস্তুত হওয়ার আগেই কোনো শত্রু রাষ্ট্র AI ‘সুপার ইন্টেলিজেন্স’ ব্যবহার করে বিদ্যুৎ গ্রিড বা জৈব অস্ত্র তৈরি করতে পারে।
এআই কর্মসংস্থানের উপর কী প্রভাব ফেলবে তা নিয়ে স্পষ্টভাবে কিছু বলা না গেলেও অল্টম্যান জানান, “কেউ জানে না সামনে কী হবে। এটি অনেক জটিল একটি প্রযুক্তি।” তিনি বলেন, হয়তো ভবিষ্যতের মানুষদের জন্য ‘বাস্তব কাজ’ বলে কিছু থাকবে না, তারা শুধুই সময় কাটানোর জন্য কাজ খুঁজে নেবে।
একইসঙ্গে ওপেনএআই-এর প্রধান অর্থনীতিবিদ রনি চ্যাটারজি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেন, যেখানে ChatGPT-এর ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৫০ কোটিতে পৌঁছেছে বলে জানানো হয়। এর মধ্যে আমেরিকায় ২০% ব্যবহারকারী একে ‘ব্যক্তিগত শিক্ষক’ হিসেবে ব্যবহার করছেন এবং অধিকাংশ ব্যবহারকারী ১৮ থেকে ৩৪ বছর বয়সী।
চ্যাটারজি জানান, আগামী বছর তিনি অর্থনীতিবিদ জেসন ফারম্যান এবং মাইকেল স্ট্রেইনের সঙ্গে মিলে AI প্রযুক্তির কর্মসংস্থানের উপর প্রভাব নিয়ে গভীর গবেষণা চালাবেন, যা পরিচালিত হবে OpenAI-এর নতুন ওয়াশিংটন অফিস থেকেই।
নোভা