
রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কবি নজরুল সরকারি কলেজের একমাত্র ছাত্রাবাসে নিরাপত্তা ব্যবস্থার নাজুক চিত্র আবারও ফুটে উঠেছে। নিরাপত্তাকর্মী ও সিসি ক্যামেরার অভাবে অরক্ষিত শহীদ শামসুল আলম ছাত্রাবাসের একটি কক্ষের জানালা ভেঙে দুঃসাহসিক চুরির ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ছাত্রাবাসের ৩০৬ নম্বর কক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের ল্যাপটপ, মূল্যবান ইলেকট্রনিক ডিভাইস ও পোশাকসহ সর্বস্ব লুট করে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় আবাসিক শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক ও ক্ষোভ বিরাজ করছে।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের সম্রাট জানান, “মঙ্গলবার ব্যক্তিগত কাজে আমি ও আমার রুমমেট বাইরে ছিলাম। সন্ধ্যায় ছাত্রাবাসে ফিরে দেখি আমাদের কক্ষের জানালার গ্রিল ভাঙা এবং ভেতরের সবকিছু এলোমেলো। চোরেরা আমার ল্যাপটপ, অন্যান্য ইলেকট্রনিক গ্যাজেট ও প্রয়োজনীয় জামাকাপড় নিয়ে গেছে। আমাদের ছাত্রাবাসে প্রায়ই বহিরাগতদের অবাধ আনাগোনা দেখা যায়। এখানে যদি একজন নিরাপত্তাকর্মী থাকতেন, তাহলে হয়তো এমন সর্বনাশ হতো না।”
তার কথায় ফুটে ওঠে একরাশ হতাশা আর নিরাপত্তাহীনতার ভয়।
এই ঘটনা শুধু একটি কক্ষের চুরির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই, বরং এটি পুরো ছাত্রাবাসের অরক্ষিত অবস্থার প্রতিচ্ছবি। রসায়ন বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আল মামুন বলেন, “আমাদের হলটি একটি ঐতিহ্যবাহী ভবন হওয়ায় প্রায়ই দর্শনার্থী ও বহিরাগতদের আনাগোনা দেখা যায়। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, এর মূল ফটক বা করিডরের কোথাও একটিও সিসি ক্যামেরা নেই। ক্যামেরা থাকলে অপরাধীদের সহজেই শনাক্ত করা যেত।”
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, কলেজ প্রশাসনের উদাসীনতার কারণেই ছাত্রাবাসটি অপরাধীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেন। ছাত্রাবাসে নিরাপত্তাকর্মী না থাকার কারণ হিসেবে তিনি বলেন,
“পূর্বে একজন নিরাপত্তাকর্মী থাকলেও বর্তমানে পদটি শূন্য রয়েছে। কলেজের সীমিত বাজেট থেকে ছাত্রাবাসের জন্য আলাদাভাবে সবকিছু ব্যবস্থা করা বেশ কঠিন। তবে আমি শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে দেখছি এবং দ্রুত একজন নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার আশ্বাস দিচ্ছি।”
সিসি ক্যামেরা স্থাপনের বিষয়ে তিনি আরও বলেন, “শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সিসি ক্যামেরার প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। আমরা পুরো ছাত্রাবাসের নিরাপত্তা জোরদার করার লক্ষ্যে একটি সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ করব এবং যত দ্রুত সম্ভব সিসি ক্যামেরা স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হবে।”
কর্তৃপক্ষের আশ্বাসের পরও আতঙ্ক কাটছে না শিক্ষার্থীদের। তাদের দাবি, শুধু আশ্বাস নয়, দ্রুততম সময়ে ছাত্রাবাসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দৃশ্যমান পদক্ষেপ গ্রহণ করা হোক। ঐতিহ্যবাহী এই ছাত্রাবাসে শিক্ষার্থীরা যেন পড়াশোনার নিরাপদ ও সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরে পায়, সেদিকে কর্তৃপক্ষের জরুরি দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন।
Mily