ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০১ আগস্ট ২০২৫, ১৭ শ্রাবণ ১৪৩২

চারঘাটের নন্দনগাছী-বানেশ্বর সড়কে ভাঙন: জনদুর্ভোগ চরমে, দ্রুত সমাধানের দাবি

ইব্রাহীম হোসেন সম্রাট, কন্ট্রিবিউিটিং রিপোর্টার, রাজশাহী

প্রকাশিত: ২০:০৫, ৩১ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ২০:০৫, ৩১ জুলাই ২০২৫

চারঘাটের নন্দনগাছী-বানেশ্বর সড়কে ভাঙন: জনদুর্ভোগ চরমে, দ্রুত সমাধানের দাবি

রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার নন্দনগাছী থেকে বানেশ্বরের সংযোগকারী একমাত্র সড়কটি ভারী বৃষ্টির কারণে ভেঙে পড়েছে, যা এলাকার ৮-১০টি গ্রামের প্রায় কয়েক লাখ মানুষের জন্য চরম দুর্ভোগ সৃষ্টি করেছে। এই সড়কটি শুধু নন্দনগাছী ও বানেশ্বরের মধ্যে যোগাযোগের মাধ্যমই নয়, বরং রাজশাহী শহরের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের একটি গুরুত্বপূর্ণ পথ। গত এক সপ্তাহ ধরে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে সৃষ্ট এই ভাঙনের ফলে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী, পথচারী এবং স্থানীয় বাসিন্দারা চরম ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন। সড়কটি মেরামতের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো তাৎক্ষণিক উদ্যোগ না থাকায় এলাকাবাসীর মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে।

জানা গেছে, গত এক সপ্তাহ ধরে রাজশাহী অঞ্চলে ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে নন্দনগাছী-বানেশ্বর সড়কের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশে ভাঙন দেখা দিয়েছে। স্থানীয় সূত্র তথ্য অনুযায়ী, এই অঞ্চলে গত সপ্তাহে প্রায় ২০০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে, যা সড়কের কাঠামোর উপর ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করেছে। এই সড়কের নিমপাড়া ইউনিয়নের কাছে একটি কালভার্টের উভয় পাশ ভেঙে যাওয়ায় যানবাহন চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে, স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী, রোগী পরিবহনকারী অ্যাম্বুলেন্স এবং পণ্যবাহী যানবাহন বিকল্প পথে ঘুরে যেতে বাধ্য হচ্ছে, যা সময় ও খরচ উভয়ই বাড়িয়ে দিচ্ছে।

এই ভাঙনের ফলে প্রায় ৮-১০টি গ্রামের বাসিন্দারা, যারা এই সড়কের উপর নির্ভরশীল, চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন। বিকল্প পথ হিসেবে পুঠিয়া হয়ে ঘুরে যাওয়ার রাস্তাটি দীর্ঘ এবং সময়সাপেক্ষ, যা সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রাকে ব্যাপকভাবে ব্যাহত করছে।
উদাহরণস্বরূপ, নন্দনগাছী থেকে বানেশ্বর যেতে সাধারণত ৩০ মিনিট সময় লাগলেও, বিকল্প পথে এখন প্রায় ১ ঘণ্টারও বেশি সময় লাগছে।

স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে এই পরিস্থিতি নিয়ে তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। মিনি ট্রাকচালক রবিউল ইসলাম বলেন, "এই রাস্তা দিয়ে মালবাহী ট্রাক নিয়ে রাজশাহী থেকে নন্দনগাছী বাজারে যাওয়ার সময় দেখি রাস্তাটি ভেঙে গেছে। এখন বিকল্প পথে যেতে গিয়ে সময় ও জ্বালানি খরচ দুটোই বেড়ে গেছে। এমন গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার এই দশা হওয়ায় আমাদের ব্যবসা ও জীবিকা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।"

অন্যদিকে, স্থানীয় বাসিন্দা আবু সাঈদ হিরু বলেন, "এই রাস্তাটি ভেঙে যাওয়ায় জরুরি প্রয়োজনে বানেশ্বর বা রাজশাহী যেতে আমাদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। অনেকেই ভাঙনের খবর না জানায় এই পথে এসে ফিরে যাচ্ছেন। বিকল্প পথে ঘুরে যেতে সময় ও টাকা দুটোই নষ্ট হচ্ছে।" তিনি দ্রুত রাস্তাটি মেরামতের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি জোর দাবি জানান।

স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীরাও এই ভাঙনের কারণে বিপাকে পড়েছেন। স্থানীয় এক শিক্ষার্থী, ফারজানা আক্তার, জানান, "আমাদের স্কুলে যেতে এই রাস্তা ব্যবহার করতে হয়। এখন ভাঙা রাস্তা দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে হেঁটে যেতে হচ্ছে, যা খুবই বিপজ্জনক। বৃষ্টির সময় পিচ্ছিল রাস্তায় পড়ে যাওয়ার ভয় থাকে।"

উপজেলা প্রকৌশলী রতন কুমার ফৌজদারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, "ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় একটি কালভার্ট ছিল, যার এক পাশ মেরামতের সময় ভারী বৃষ্টির কারণে অন্য পাশও ভেঙে গেছে। আমরা সাধারণ পথচারীদের জন্য অস্থায়ী পারাপারের ব্যবস্থা করেছি, তবে যানবাহন চলাচল এখনও বন্ধ রয়েছে। আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে মেরামত কাজ সম্পন্ন করে যানবাহন চলাচলের উপযোগী করে তুলব।"

তবে, স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এই সড়কের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য পর্যাপ্ত তহবিল এবং সময়মতো উদ্যোগের অভাব দীর্ঘদিন ধরে একটি সমস্যা। গত বছরও এই সড়কের কিছু অংশে ভাঙন দেখা দিয়েছিল, যা পরে আংশিক মেরামত করা হয়েছিল। এলাকাবাসী অভিযোগ করেছেন যে, দীর্ঘমেয়াদী সমাধানের পরিবর্তে অস্থায়ী মেরামতের কাজ করা হয়, যা ভারী বৃষ্টির সময় টিকে না।

এলাকাবাসী ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ দ্রুত এই সড়ক মেরামতের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছেন। তারা মনে করেন, এই সড়কটি শুধুমাত্র একটি যোগাযোগের মাধ্যম নয়, বরং অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো। স্থানীয় ব্যবসায়ী নুরুল ইসলাম বলেন, "এই সড়কটি আমাদের ব্যবসা ও জীবিকার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দ্রুত মেরামত না হলে আমাদের অর্থনৈতিক ক্ষতি আরও বাড়বে।"

বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়েছেন যে, ভবিষ্যতে এ ধরনের ভাঙন রোধ করতে সড়কের নকশায় উন্নত প্রকৌশল কৌশল ব্যবহার করা উচিত। এছাড়াও, নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ এবং বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের জন্য উন্নত ড্রেনেজ ব্যবস্থা স্থাপন করা প্রয়োজন। স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন বিভাগের কাছে এলাকাবাসীর দাবি, এই সড়কের জন্য দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করা হোক, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ভোগ আর না পোহাতে হয়।

নন্দনগাছী-বানেশ্বর সড়কের ভাঙন শুধু একটি স্থানীয় সমস্যা নয়, এটি রাজশাহী অঞ্চলের অবকাঠামোগত দুর্বলতার একটি প্রতিচ্ছবি। ভারী বৃষ্টির কারণে সৃষ্ট এই ভাঙন এলাকার মানুষের জীবনযাত্রাকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রুত পদক্ষেপ এবং দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা ছাড়া এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়। এলাকাবাসীর প্রত্যাশা, শিগগিরই এই সড়কটি মেরামত করা হবে এবং তাদের দুর্ভোগ লাঘব হবে।

 

রাজু

×