ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ৩১ জুলাই ২০২৫, ১৬ শ্রাবণ ১৪৩২

এই ৭টি লক্ষণ জানিয়ে দিবে আপনার শরীরে নীরবে বাসা বাঁধছে ডায়াবেটিস

প্রকাশিত: ১৯:২০, ৩০ জুলাই ২০২৫

এই ৭টি লক্ষণ জানিয়ে দিবে আপনার শরীরে নীরবে বাসা বাঁধছে ডায়াবেটিস

বর্তমানে ডায়াবেটিসকে বলা হয় অন্যতম সাধারণ জীবনধারা-নির্ভর রোগ। গোটা বিশ্বেই এই রোগের হার দ্রুতগতিতে বাড়ছে। ডায়াবেটিস যত দ্রুত শনাক্ত করা যায়, নিয়ন্ত্রণ বা চিকিৎসার পথ ততটাই কার্যকর হতে পারে। কারণ, এই রোগ দীর্ঘমেয়াদে জীবনের গুণগত মানে বড় প্রভাব ফেলে।

ডায়াবেটিস কী এবং কেন এটি ‘নীরব ঘাতক’?
ডায়াবেটিস এমন একটি দীর্ঘস্থায়ী স্বাস্থ্য সমস্যা, যা শরীরে চিনি (গ্লুকোজ) প্রক্রিয়াকরণের স্বাভাবিক পদ্ধতিকে বাধাগ্রস্ত করে। গ্লুকোজই শরীরের প্রধান শক্তির উৎস। তবে টাইপ ২ ডায়াবেটিস ধীরে ধীরে শরীরে বাসা বাঁধে, অনেক সময় এর লক্ষণ এতটাই সূক্ষ্ম হয় যে বহু মানুষ শুরুতে তা বুঝতেই পারেন না, কিংবা সাধারণ সমস্যা মনে করে উপেক্ষা করেন।

তবে এই প্রাথমিক লক্ষণগুলো নজরে এলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আনা সহজ হয়। এমনকি জীবনযাত্রায় কিছু পরিবর্তনের মাধ্যমেও অনেক সময় এই রোগকে প্রতিহত করা সম্ভব। নিচে এমনই সাতটি লক্ষণ তুলে ধরা হলো, যেগুলো অগ্রাহ্য করলে হতে পারে বড় বিপর্যয়।

১. পানি খাওয়ার পরও তীব্র পিপাসা অনুভব করা
যদি দেখেন নিয়মিত পানি খাওয়ার পরও অস্বাভাবিকভাবে পিপাসা পাচ্ছে, তবে সেটি হতে পারে ডায়াবেটিসের প্রাথমিক লক্ষণ। উচ্চ রক্তে শর্করা শরীরের কোষ থেকে তরল টেনে নেয়, ফলে দেহে পানিশূন্যতা দেখা দেয়। তাই শরীর বারবার পানি চায়, বিশেষত রাতে, আর তার সঙ্গে শুকনো বা আঠালো মুখের অনুভূতি দেখা দেয়।

২. ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া
সম্প্রতি কি লক্ষ্য করেছেন, দিনে বা রাতে আগের চেয়ে অনেক বেশি বার বাথরুমে যেতে হচ্ছে? এটি ডায়াবেটিসের আরেকটি প্রাথমিক লক্ষণ। রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেশি হলে কিডনি অতিরিক্ত গ্লুকোজ ইউরিনের মাধ্যমে শরীর থেকে বের করে দেয়। ফলে ঘন ঘন প্রস্রাব হয়।

৩. অস্বাভাবিক ও হঠাৎ ওজন কমে যাওয়া
আপনি যদি ডায়েট বা ব্যায়ামের পরিবর্তন না করেও ওজন হারাতে থাকেন, তাহলে তা হতে পারে বিপদের সঙ্কেত। যখন শরীর কোষে গ্লুকোজ পৌঁছাতে পারে না, তখন শক্তির উৎস হিসেবে পেশি ও চর্বি ভাঙতে শুরু করে। ফলে হঠাৎ ওজন কমে যায়। এটি মূলত টাইপ ১ ডায়াবেটিসে বেশি দেখা গেলেও টাইপ ২-তেও দেখা দিতে পারে।

৪. সবসময় ক্লান্ত ও দুর্বল লাগা
আপনি যদি যথেষ্ট বিশ্রাম নিয়েও সারাদিন ক্লান্ত অনুভব করেন, তবে সেটিও হতে পারে ডায়াবেটিসের অগ্রগামী ইঙ্গিত। শরীর যখন কোষে পর্যাপ্ত গ্লুকোজ পৌঁছাতে পারে না, তখন শক্তি উৎপন্নে বাধা আসে। ফলে আপনি সারাদিনই দুর্বল বা অলস অনুভব করতে পারেন, যেটা কফি বা ঘুমেও কেটে যায় না।

৫. চোখে ঝাপসা দেখা বা দৃষ্টিশক্তি দুর্বল হওয়া
উচ্চ রক্তচিনি চোখের লেন্স থেকে তরল টেনে নিয়ে দৃষ্টিশক্তিকে প্রভাবিত করে। এতে চোখে ফোকাস করতে সমস্যা হয়, ঝাপসা দেখা দেয়। যদি এই অবস্থায় রক্তে গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণ না করা যায়, তবে চোখের রেটিনার ছোট রক্তনালিগুলোর ক্ষতি হতে পারে, যা ভবিষ্যতে স্থায়ী দৃষ্টিশক্তি হারানোর কারণও হতে পারে।

৬. কাটা-ছেঁড়া বা ক্ষত সারতে সময় নেওয়া
ডায়াবেটিস রক্তপ্রবাহ ও রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থাকে দুর্বল করে। ফলে এমনকি ছোট ছোট কাটা-ছেঁড়া বা ঘা-ও সহজে সারতে চায় না। পায়ের বা পায়ের পাতার ক্ষত বিশেষভাবে এই সমস্যার শিকার হয়, এবং সময়মতো ব্যবস্থা না নিলে জটিলতা তৈরি হতে পারে।

৭. হাতে বা পায়ে ঝিনঝিন বা অবশ ভাব
ডায়াবেটিসের একটি গুরুতর ও প্রাথমিক লক্ষণ হলো স্নায়ুর ক্ষতি, যাকে বলা হয় ‘ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি’। সাধারণত এটি শুরু হয় হাতে, আঙুলে, পায়ে বা পায়ের আঙুলে ঝিনঝিন, জ্বালা বা অবশ লাগার অনুভূতি দিয়ে। এটি শরীরের স্নায়ুপ্রান্তগুলোতে উচ্চ রক্তচিনির প্রভাবে সৃষ্টি হয়। যদি সময়মতো শনাক্ত না করা হয়, তবে তা স্থায়ী স্নায়ু ক্ষতির দিকে নিয়ে যেতে পারে।


ডায়াবেটিসকে অনেকেই নীরব ঘাতক বলে থাকেন, কারণ এটি শরীরে নীরবে ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে। তবে শরীর আগেই কিছু সঙ্কেত দেয়, যা সচেতন চোখে সহজেই ধরা সম্ভব। উপরোক্ত লক্ষণগুলোর যে কোনো একটি যদি দীর্ঘদিন ধরে দেখা যায়, তবে দেরি না করে রক্তে শর্করার পরীক্ষা করিয়ে নিন এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। জীবনযাত্রায় ছোট পরিবর্তন সময়মতো আনতে পারলে অনেক বড় সমস্যাকে এড়ানো যায়। মনে রাখবেন, সচেতনতা আর সময়মতো পদক্ষেপই পারে আপনাকে এই নীরব বিপদ থেকে রক্ষা করতে।

 

 


সূত্র:https://tinyurl.com/rs979apx

আফরোজা

×