
ছবি: সংগৃহীত।
প্রস্রাবে রক্ত দেখা গেলে অনেকেই ভয়ে আঁতকে ওঠেন। চিকিৎসাবিজ্ঞানের পরিভাষায় একে বলা হয় ‘হেমাচুরিয়া’। অনেক সময়েই মানুষ একে ক্যানসারের উপসর্গ হিসেবে ধরে নেন, তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন-এমনটি সবসময়ই ক্যানসার নির্দেশ করে না।
শুধু ২৭ শতাংশ ক্ষেত্রেই ক্যানসার ধরা পড়ে
ম্যানিপাল হাসপাতালের ইউরোলজি ও কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট বিশেষজ্ঞ ডা. হরি প্রসাদ এন জানাচ্ছেন, “গবেষণায় দেখা গেছে, প্রস্রাবে রক্ত দেখার পর চিকিৎসা নেওয়া রোগীদের মাত্র ২৭ শতাংশের ক্ষেত্রে পরবর্তীতে ক্যানসার ধরা পড়ে। বাকি ৭৩ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে এটি অনেক কম বিপজ্জনক বা নিরীহ কারণে হয়ে থাকে।”
রক্তস্রাব ছাড়াও প্রস্রাব লালচে হতে পারে এসব কারণে:
১. ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: কিছু ওষুধ প্রস্রাবের রঙ পরিবর্তন করতে পারে। যেমন, ইউরিনারি ইনফেকশনের ওষুধ ‘পাইরিডিয়াম’ বা টিউবারকুলোসিসের ওষুধ ‘রিফ্যাম্পিসিন’ প্রস্রাবকে লাল বা কমলা করে তুলতে পারে-যদিও প্রকৃতপক্ষে রক্ত নেই।
২. খাবার: বিটরুট বা ব্ল্যাকবেরির মতো কিছু খাবারে থাকা ‘বেটানিন’ নামক রঞ্জক পদার্থ প্রস্রাবকে লালচে করে তুলতে পারে, একে বলা হয় ‘বিটুরিয়া’-যা সম্পূর্ণ নিরীহ।
৩. অতিরিক্ত ব্যায়াম: ক্রীড়াবিদদের মধ্যে অতিরিক্ত পরিশ্রমের ফলে অস্থায়ী হেমাচুরিয়া দেখা দিতে পারে। এটি কিডনি বা মূত্রথলির হালকা ট্রমা থেকেই হতে পারে এবং সাধারণত নিজে থেকেই সেরে যায়।
৪. মূত্রনালির সংক্রমণ (UTI): সংক্রমণের ফলে প্রস্রাবে রক্ত দেখা দিতে পারে, সাথে থাকতে পারে জ্বালা বা ঘন ঘন প্রস্রাবের চাপ।
৫. কিডনি বা মূত্রনালিতে পাথর: পাথর ইউরিনারি ট্র্যাক্টকে আঘাত করলে রক্তপাত হতে পারে।
৬. গ্লোমেরুলোনেফ্রাইটিস: বিশেষ করে শিশু ও তরুণদের মধ্যে দেখা যায়। কিডনির ফিল্টার (গ্লোমেরুলি) প্রদাহ হলে প্রস্রাব হয় কোলা রঙের, দেখা দিতে পারে চোখ-মুখ ফোলা ও উচ্চ রক্তচাপ।
৭. প্রোস্টেট গ্রন্থি বড় হওয়া (BPH): বয়স্ক পুরুষদের মধ্যে সাধারণ সমস্যা এটি, যা মাঝে মাঝে প্রস্রাবে রক্ত ঘটাতে পারে।
৮. আঘাত বা অতিরিক্ত চাপজনিত মায়োগ্লোবিনিউরিয়া: পেশিতে চোট লাগলে বা দীর্ঘ সময় অপারেশন টেবিলে অস্বাভাবিক অবস্থানে থাকলে রক্তে মায়োগ্লোবিন নামক একটি পদার্থ মিশে গিয়ে প্রস্রাবকে লাল করে তুলতে পারে।
তাহলে কী করবেন?
ডা. হরি প্রসাদ বলেন, “প্রস্রাবে রক্ত মানেই ক্যানসার নয়, তবে অবহেলা করা একদম ঠিক নয়। বিশেষ করে প্রাথমিক পর্যায়ের ক্যানসার বা চিকিৎসাযোগ্য কোনো রোগ থাকলে সময়মতো ধরা পড়লে তা সহজেই সেরে উঠতে পারে।” তিনি আরও বলেন, “যদি আপনি বা আপনার কোনো প্রিয়জন প্রস্রাবে রক্ত দেখেন, তাহলে ভয় পাবেন না, তবে দেরিও করবেন না। দ্রুত ইউরোলজিস্টের পরামর্শ নিন।”
সতর্কতা ও সচেতনতাই পারে ভয়কে জয় করতে। তাই দেরি না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়াই সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ।
সূত্র: দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া।
মিরাজ খান