ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ৩১ জুলাই ২০২৫, ১৫ শ্রাবণ ১৪৩২

ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক হ্যাক হচ্ছে কি না বুঝবেন ৩টি লক্ষণে

প্রকাশিত: ১০:৩৯, ৩০ জুলাই ২০২৫

ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক হ্যাক হচ্ছে কি না বুঝবেন ৩টি লক্ষণে

ছ‌বি: প্রতীকী

বর্তমানে ঘরে-বাইরে ইন্টারনেট ছাড়া যেন এক মুহূর্তও চলে না। ঘরের ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক দিয়ে মোবাইল, ল্যাপটপ, স্মার্ট টিভি, এমনকি ফ্রিজ বা সিসিটিভিও চালানো হয়। কিন্তু আপনি জানেন কি, আপনার অজান্তেই অন্য কেউ এই ওয়াইফাই ব্যবহার করতে পারে? অনেক সময় হ্যাকার বা আশপাশের কেউ পাসওয়ার্ড জেনে গিয়ে আপনার নেটওয়ার্ক ব্যবহার করছে, এমনটা হওয়াও অসম্ভব নয়। এতে আপনার নেটওয়ার্ক ধীর হয়ে যেতে পারে, গোপন তথ্য চুরি হওয়ার ঝুঁকি থাকে, এমনকি অপরাধমূলক কাজেও আপনার সংযোগ ব্যবহার হতে পারে। তাই আগে থেকেই কিছু লক্ষণ দেখে বুঝতে হবে, আপনার ওয়াইফাই হ্যাক হয়েছে কিনা। নিচে এমন তিনটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ ব্যাখ্যা করা হলো, যার মাধ্যমে আপনি সহজেই ধরতে পারবেন আপনার নেটওয়ার্ক ঠিক আছে কি না।

প্রথম যে লক্ষণটি চোখে পড়তে পারে, তা হলো ইন্টারনেট স্পিড হঠাৎ করে কমে যাওয়া। আপনি যদি আগের মতোই ফোনে বা ল্যাপটপে ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন, তবুও সবকিছু অনেক ধীরে লোড হচ্ছে, ভিডিও বারবার বাফার করছে বা পেইজ খুলতে অনেক সময় নিচ্ছে – তাহলে বুঝতে হবে কিছু একটা সমস্যা হয়েছে। সাধারণভাবে, বেশি সংখ্যক ডিভাইস একইসাথে একটি নেটওয়ার্ক ব্যবহার করলে ইন্টারনেট ধীর হয়ে যায়। কিন্তু যদি আপনি জানেন আপনার ডিভাইসগুলো আগের মতোই আছে, নতুন কিছু সংযুক্ত হয়নি, তবুও স্পিড কম – তাহলে এটা হতে পারে হ্যাকার বা কোনো অননুমোদিত ব্যবহারকারীর কাজ। তারা হয়তো আপনার পাসওয়ার্ড জেনে গোপনে আপনার ওয়াইফাই নেটওয়ার্কে ঢুকে পড়েছে।

দ্বিতীয় লক্ষণ হলো, অজানা ডিভাইসের উপস্থিতি। আপনি যদি রাউটারের অ্যাডমিন প্যানেলে (যেমন: ১৯২.১৬৮.০.১ বা ১৯২.১৬৮.১.১) গিয়ে লগইন করেন, সেখানে ‘ডিভাইস লিস্ট’ বা ‘কনেক্টেড ডিভাইস’ নামে একটি অপশন থাকে। সেখানে আপনি দেখতে পাবেন কোন কোন ডিভাইস বর্তমানে আপনার নেটওয়ার্কে যুক্ত আছে। যদি সেখানে এমন কোনো ডিভাইসের নাম বা আইপি অ্যাড্রেস দেখেন যা আপনার নয়, তাহলে বুঝে নিন কেউ আপনাকে না জানিয়ে আপনার ওয়াইফাই ব্যবহার করছে। অনেক সময় এই ডিভাইসগুলো অদ্ভুত নামের হয়ে থাকে, যেমন: UNKNOWN, Xiaomi_12ABC, Galaxy_XYZ বা MAC Address এর মতো কিছু দেখা যেতে পারে। আপনি যদি বুঝতে পারেন এটি আপনার পরিবারের বা নিজের কোনো ডিভাইস নয়, তাহলে সাবধান হোন। এটি হতে পারে হ্যাকার বা আশেপাশের কোনো স্মার্ট ব্যবহারকারী, যে কোনোভাবে আপনার নেটওয়ার্কে প্রবেশ করেছে।

তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ হলো, রাউটারের অদ্ভুত আচরণ। রাউটার মাঝে মাঝেই রিস্টার্ট নিচ্ছে, নিজে নিজে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বা লাইটগুলো এলোমেলোভাবে জ্বলছে– এমন আচরণ স্বাভাবিক নয়। কখনো কখনো দেখা যায়, রাউটারের অ্যাডমিন প্যানেলে ঢুকতে সমস্যা হচ্ছে, পাসওয়ার্ড কাজ করছে না, অথবা সেটিংস পরিবর্তন হয়ে গেছে। এসব কিছু ইঙ্গিত দেয় যে কেউ হয়তো আপনার রাউটারের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছে। হ্যাকাররা অনেক সময় দূর থেকে রাউটারে প্রবেশ করে সেটিংস বদলে দেয়, যাতে আপনি বুঝতেই না পারেন কে বা কীভাবে নেটওয়ার্ক ব্যবহার করছে।

এছাড়াও আরও কিছু অতিরিক্ত লক্ষণ লক্ষ্য করা যায়, যেমন: কোনো অ্যাকাউন্টে অজানা লগইনের নোটিফিকেশন আসা, আপনার ইমেইল বা সোশ্যাল মিডিয়া হঠাৎ করে লগআউট হয়ে যাওয়া, কিংবা নতুন কোনো অ্যাপ বা সফটওয়্যার নিজে নিজে ইন্সটল হওয়া। এসবও ইঙ্গিত দেয়, আপনার ইন্টারনেট বা নেটওয়ার্ক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

তাই নিজের নিরাপত্তার জন্য কয়েকটি সহজ পদক্ষেপ মেনে চলা জরুরি। প্রথমত, নিয়মিত পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করুন এবং জটিল পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন যাতে কেউ সহজে অনুমান করতে না পারে। দ্বিতীয়ত, রাউটারের সফটওয়্যার আপডেট রাখুন এবং অপ্রয়োজনীয় রিমোট এক্সেস অপশন বন্ধ রাখুন। তৃতীয়ত, আপনার ওয়াইফাই নেটওয়ার্কে অজানা কোনো ডিভাইস যুক্ত আছে কি না, মাঝে মাঝে দেখে নিন।

স্মার্ট যুগে নিরাপত্তা সচেতনতা থাকা খুবই জরুরি। কারণ একটি হ্যাকড নেটওয়ার্ক শুধু ইন্টারনেটের গতি কমিয়ে দেয় না, আপনার ব্যক্তিগত ও আর্থিক নিরাপত্তার জন্যও হুমকি হতে পারে। তাই এই তিনটি লক্ষণ বুঝে আগে থেকেই সতর্ক থাকুন এবং প্রয়োজনে প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিন।

এম.কে.

আরো পড়ুন  

×