
ছবি: সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্রে দক্ষিণ কোরিয়ার পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ পর্যন্ত নতুন আমদানি শুল্ক বসানো হতে পারে—এই খবরে ২৪ বছর বয়সী আমৃতা ভাসিন একসঙ্গে ৫০টি কোরিয়ান শিট মাস্ক কিনে ফেলেছেন। “আমি একটা বড় অর্ডার দিয়েছি যাতে কিছু মাসের জন্য স্টক থাকে,” বললেন তিনি।
আগামী ১ আগস্ট থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষিত দেশভিত্তিক শুল্ক কার্যকর হওয়ার কথা। দক্ষিণ কোরিয়া এখনো যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কোনো নতুন বাণিজ্য চুক্তিতে পৌঁছাতে পারেনি, যা কোরিয়ান কসমেটিকস প্রেমীদের মধ্যে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করেছে।
গত এক দশকে কোরিয়ান বিউটি বা ‘কে-বিউটি’ বিশ্বব্যাপী এক বিশাল বাজারে রূপ নিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে ফাউন্ডেশন, সানস্ক্রিন আর ময়েশ্চারাইজারের মিশ্রণ ‘বিবি ক্রিম’ দিয়ে শুরু হয়ে জনপ্রিয়তা পেয়েছে দশ ধাপের স্কিন কেয়ার রুটিন, স্নেইল মিউসিন, হার্টলিফ ও রাইস ওয়াটারের মতো উপাদানসমৃদ্ধ প্রসাধনী।
ইউরোমনিটর জানায়, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ কোরিয়া থেকে ১.৭ বিলিয়ন ডলারের কসমেটিকস আমদানি করেছে—যা আগের বছরের তুলনায় ৫৪ শতাংশ বেশি। এমনকি ফ্রান্সকেও পেছনে ফেলেছে দক্ষিণ কোরিয়া।
শুল্কে চাপ, ক্রেতারাও দ্বিধায় পিটারসন ইনস্টিটিউটের গবেষক মেরি লাভলি বলেন, “কে-বিউটি শুধু প্রসাধন নয়, দক্ষিণ কোরিয়ার একটি ‘সফট পাওয়ার’ও। তবে ২৫ শতাংশ শুল্ক প্রয়োগ হলে সেটা যে প্রভাব ফেলবে না, তা বলা যায় না।”
নিউ ইয়র্কের বিউটি রিটেইলার সেন্টি সেন্টির ম্যানেজার উইনি জং জানান, শুল্ক ঘোষণার পর ক্রেতারা আতঙ্কে হুলস্থুল করলেও পরে সেটা কিছুটা থেমে যায়। তবে এখন পর্যন্ত দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন কোনো শুল্ক চুক্তি হয়নি।
সেন্টি সেন্টির স্টকে বর্তমানে ৯০ শতাংশই জাপান ও কোরিয়ার পণ্য। জং বলেন, “এখন পর্যন্ত বাড়তি শুল্ক ক্রেতার উপর চাপাতে হয়নি, কিন্তু ২৫ শতাংশ হলে তা আর সম্ভব হবে না।”
অনলাইন শপ ও কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের সংকট কন্টেন্ট ক্রিয়েটর জেন চে জানান, শুল্ক নিয়ে বিভ্রান্তির কারণে তিনি কিছু সময়ের জন্য YesStyle-এর মতো সাইট থেকে কেনাকাটা বন্ধ রেখেছিলেন। শুল্ক শুধু নির্দিষ্ট পণ্যে নাকি পুরো প্যাকেজে আরোপ হবে—এই অনিশ্চয়তাই মূল বাধা ছিল।
ওহলোলি নামক কোরিয়ান বিউটি ফোকাসড অনলাইন স্টোরের মালিকেরা জানান, তারা এখনই পুনরায় স্টক রিফিল বন্ধ রেখেছেন। “২৫ শতাংশ শুল্ক আমাদের পক্ষে সহ্য করা সম্ভব না,” বলেন মালিকেরা, যারা ক্যালিফোর্নিয়ায় তাদের গুদাম চালান।
তারা বলেন, তাদের কাছে দুই থেকে চার মাসের পণ্য মজুদ আছে, এরপর সিদ্ধান্ত নিতে হবে কোন পণ্য রাখা হবে, কোনটার দাম বাড়বে, কোনটা বাদ যাবে।
ক্রেতারা বলছেন—প্রিয় পণ্যে ছাড় নয় সৌন্দর্যবিষয়ক নিউজলেটার লেখক র্যাচেল ওয়েইনগার্টেন বলেন, অতিরিক্ত স্টক করে রাখা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। “তেলজাতীয় উপাদান বা সংবেদনশীল প্যাকেজিং নষ্ট হয়ে যেতে পারে সময়ের আগে।”
তবে অনেকের মতো আমৃতা ভাসিনও বলেন, দাম বাড়লেও তিনি কোরিয়ান মাস্ক কেনা বন্ধ করবেন না। “আমি যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে বদলাবো না,” বলেন তিনি।
দক্ষিণ কোরিয়ার জন্য এটি শুধু একটি রপ্তানি সংকট নয়, বরং কে-বিউটির মাধ্যমে গড়ে ওঠা একটি সংস্কৃতি ও আস্থার পরীক্ষাও বটে। এখন দেখার বিষয়, ১ আগস্টের আগেই কোনো সমঝোতায় পৌঁছায় কিনা সিউল ও ওয়াশিংটন।
আসিফ