
ছবি: জনকণ্ঠ
একটি সেতু দুই জেলার মানুষকে এক বন্ধনে নিয়ে আসছে। আর মাত্র কয়েকদিন। তারপর হরিপুর তিস্তা সেতু খুলে দেয়া হবে। যুগের পর যুগ তিস্তা নদীর দু পারের মানুষ কত দুর্ভোগ আর বঞ্চনার স্বীকার হয়েছে কুড়িগ্রামের উলিপুর, চিলমারী ও গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ, সাদুল্লাপুর উপজেলার তিস্তা পাড়ের কয়েক লাখ মানুষ। চরম কষ্ট থেকে মুক্তি পেতে যাচ্ছে দুই জেলার মানুষ। দীর্ঘদিনের যোগাযোগ ব্যবস্থার সংকটের অবসানে এবার জেগে উঠেছে নতুন সম্ভাবনা। আগামী ২৫ আগষ্ট স্বপ্নের দ্বার খুলছে দুই জেলার বাসিন্দাদের।
তিস্তা নদীর উপর নব-নির্মিত হরিপুর সেতুটির দ্বার উন্মোচনোর পর দুই জেলা বাসীর অর্থনৈতিক ব্যবস্থার উন্নতি ও ব্যবসা-বানিজ্যের প্রসার ঘটবে। কুড়িগ্রামের চিলমারী নৌবন্দর থেকে নদী পথে হরিপুর হয়ে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ যেতে ২-৩ ঘন্টার উত্তাল নদী পার হতে হয়। সেতু পয়েন্ট থেকে বেলকা বাজার হয়ে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা সদর, পাঁচপীর বাজার এবং পাঁচপীর বাজার থেকে ধর্মপুর হয়ে গাইবান্ধা সদর উপজেলার হাটলক্ষীপুর বাজার থেকে সাদুল্লাপুর উপজেলা শহর হয়ে ধাপেরহাট গিয়ে রংপুর-ঢাকা মহাসড়কে সংযোগ। বগুড়া বা ঢাকাগামী চলাচলরত মানুষদের সেতু হওয়াতে সেই পথের দুরত্ব,সময়, শ্রম ও অর্থ সবকিছু কমে আসায় বেজায় খুশি নদী তীরবর্তী বসবাস করা মানুষগুলো।
জানা গেছে, দেশে এলজিইডির ইতিহাসে এটিই সর্ববৃহৎ প্রকল্প। সৌদি সরকারের অর্থায়নে এবং চায়না স্টেট কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের তত্ত্বাবধানে নির্মিত হয়েছে সেতুটি । কুড়িগ্রামের চিলমারী ও গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের মধ্যবর্তী তিস্তা নদীর উপর নির্মিত হরিপুর তিস্তা সেতুর দৈর্ঘ্য ১ হাজার ৪৯০ মিটার (প্রায় দেড় কিলোমিটার) ও প্রস্থ ৯.৬ মিটার। মূল সেতু,কালর্ভাট নির্মাণ ও সংযোগ সড়কে এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৭শ৩০ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে শুধু মূল সেতুতে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৩৬৩ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। সেতুটির মোট পিলার রয়েছে ৩১টি। সেতুটির দুই দিকে ৩.১৫ কিলোমিটার নদী শাসনের কাজ প্রায় শেষের দিকে। বর্তমানে সেতুটির উভয় পাশে ৫৭.৩ কিলোমিটার সংযোগ সড়কের কাজ চলমান।
সরেজমিনে দেখা যায়,সেতুটির অভাবে প্রতিনিয়ত চিলমারী তিস্তা পাড়ে বসবাসরত শিশু ও গর্ভবতী নারীদের চিকিৎসার জন্য বিরমন্বনায় পড়তে হতো। হরিপুর থেকে চিলমারী শহর দুরে হওয়াতে সহজে শহরে চিকিৎসা নিতে পারতেন না নারীরা। বিশেষ করে গর্ভাবস্থায় প্রসব বেদনার সময় অনেক কষ্ট করতে হতো। শুকনো মৌসুমে বাঁশের পালকি করে গর্ভবতী নারীদের পরিবহন করা কষ্টসাধ্য ও ঝুঁকি ছিলো। আশ-পাশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না থাকাতে চরের শিশুদের ওপারে সুন্দরগঞ্জে পড়তে যেতে হতো।
চাকুরীজিবী কৃষ্ণ কমল বর্মণ বলেন,’ আমাকে প্রতি সপ্তাহে গাইবান্ধা থেকে চিলমারী যেতে হতো বাড়িতে। যাত্রী না হওয়া পর্যন্Í বসে থাকতে হতো অনেক্ষণ আবার কম যাত্রী হলে ভাড়াও দিতে হতো বাড়তি। সেতু হওয়াতে আমার খুব উপকার হবে।’
কুড়িগ্রামের চিলমারী হরিপুর এলাকার বাসিন্দা আমেনা বেগম বলেন,’ বর্ষাকালে নৌকায় করে নদী পার হতে সেই ঝুঁকি নিতে হয়। প্রতি বছর কম-বেশি নৌকা ডুবির ঘটনা ঘটে। ব্রিজটা হওয়াতে আমাদের যাতায়াতে খুবই উপকার হবে।’
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের স্থানীয় ব্যবসায়ী সাইফুল ব্যাপারী বলেন, আমাকে প্রতি হাটে চিলমারী বন্দরে যাওয়া লাগে মালামাল করতে। কৃষি পণ্য নিয়ে আসতে খুবই দূর্ভোগ পোহাতে হতো । আল্লাই দিলে এ সমস্যা আর থাকবে না সেতুটি চালু হলে।’
তিস্তা সেতু বাস্তবায়ন আন্দোলনের নেতা আ.ব.ম. শরিয়তুল্লাহ মাষ্টার বলেন,’২০০০ সাল থেকে তিস্তা সেতু বাস্তবায়ন আন্দোলন শুরু হয়। ২০১২ সালে এসে তিস্তা সেতু নির্মাণ আলোর মুখ দেখতে শুরু করে। এরপর সাবেক তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম প্রামাণিকের সহযোগিতায় ২০১৪ সালে এর নির্মাণ কাজের সূচনা হয়।
এলজিইডি সুন্দরগঞ্জ উপজেলার প্রকৌশলী তপন কুমার চক্রবর্তী জানান,আগামী ২৫ আগষ্ট নতুন করে হরিপুর সেতুটির উদ্বোধনের দিনক্ষণ নির্ধারণ করা হয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে সেদিন জনসাধারণের জন্য খুলে দেয়া হবে এই সেতু।
২০২৪ সালে সেতু ও সংযোগ সড়কের নির্মাণকাজ সম্পন্নের কথা ছিল। পরে নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে তা হয়নি। পরে মন্ত্রণালয় থেকে ০২ আগষ্ট তারিখ নির্ধারণ করা হলেও সর্বশেষ আবারো সেটি পিছিয়ে ২৫ আগষ্ট নির্ধারণ করা হয়েছে।
শিহাব