ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ৩০ জুলাই ২০২৫, ১৪ শ্রাবণ ১৪৩২

ইসরাইলকে বাঁচাতে গিয়ে বিরাট ক্ষতি যুক্তরাষ্ট্রের

প্রকাশিত: ১৬:১৬, ২৯ জুলাই ২০২৫

ইসরাইলকে বাঁচাতে গিয়ে বিরাট ক্ষতি যুক্তরাষ্ট্রের

ছবি: সংগৃহীত

গত জুন মাসে ইরানে আগ বাড়িয়ে হামলা চালিয়ে বেশ নাকানি চুবানি খেয়েছিল দখলদার ইসরাইল। সেবার পাল্টা প্রতিশোধে ইসরাইলের আকাশে রীতিমতো অত্যাধুনিক সব মিজাইলের ফোয়ারা ছুটিয়েছিল ইরান। যুদ্ধে ইরানের সামনে একা হয়ে যাওয়ায় ইসরাইলকে বাঁচাতে ছুটে এসেছিল যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু যুদ্ধে যোগ দিয়ে তাদের মুখেও চুনকালি লেগেছে।

শেষ পর্যন্ত মাত্র ১২ দিনেই ইসরাইলের নাকের পানি চোখের পানি একাকার হয়ে যাওয়ায় ধরি-ঘরি করে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেন মার্টিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সে যুদ্ধে পেরিয়ে গেছে এক মাস। এর মধ্যেই সামনে আসতে শুরু করেছে একটির পর একটি চাঞ্চল্যকর তথ্য।

১২ দিনের যুদ্ধে ইরান এতটাই আগ্রাসী ছিল যে তাদের ছোড়া মিজাইলের দাপট সহ্য করতে পারেনি ইসরাইলের অত্যাধুনিক আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। ইরানের মিজাইলের হাত থেকে ইসরাইলকে রক্ষা করতে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন থার্ড মিজাইল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মোতায়ন করতে বাধ্য হয় যুক্তরাষ্ট্র। তবে সেই স্বল্পস্থায়ী সংঘাতই যুক্তরাষ্ট্রকে এক ভয়াবহ পরিস্থিতির সামনে এনে দাঁড় করায়।

তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন থার্ড মিজাইল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ইসরাইলকে ইরানের মিজাইল বৃষ্টি থেকে পুরোপুরি রক্ষা করতে পারেনি। এর উপর, ইরানের মিজাইল ঠেকাতে নিজেদের ভাণ্ডারে থাকা প্রায় এক-চতুর্থাংশ থার্ড ব্যবহার করে ফেলে যুক্তরাষ্ট্র। এত কিছুর পরেও ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রের লাগাতার হামলা সামাল দেওয়া যায়নি। দখলদারদের ভূখণ্ডে ইরানি মিসাইল বারবার তাণ্ডব চালিয়েছে। যার ফলে থার্ডের কার্যকারিতা নিয়েও গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন বলছে, মাত্র ১২ দিনের যুদ্ধে যে পরিমাণ থার্ড ব্যবহার করা হয়েছে, তা যুক্তরাষ্ট্রের বার্ষিক উৎপাদনের চেয়েও বহুগুণ বেশি। এ অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্র বেশ বেকায়দায় পড়ে। কারণ যুদ্ধ যদি আর কিছুদিন দীর্ঘায়িত হতো, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের থার্ড মজুদ পুরোপুরি শেষ হয়ে যেত। আর এই কারণেই ইসরাইলকে পর্যাপ্ত পরিমাণে থার্ড সরবরাহ করতে পারেনি যুক্তরাষ্ট্র। এর ফলেই দখলদার ইসরাইল ভূখণ্ডে বারবার ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংসযজ্ঞ চালায়।

সিএনএন আরও জানায়, তেহরানে ব্যালিস্টিক মিসাইল হামলা প্রতিহত করতে মার্কিন বাহিনী ১০০ থেকে ১৫০টি থার্ড ব্যবহার করে। যুক্তরাষ্ট্রের হাতে সাতটি থার্ড সিস্টেম রয়েছে, যার মধ্যে দুটি ইসরাইলে মোতায়ন করে রেখেছে তারা। এত অল্প সময়ে এত বিপুল সংখ্যক থার্ড ফুরিয়ে যাওয়ায়, মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা নেটওয়ার্কের বড় একটি ফাঁক প্রকাশ পায়।

সাবেক মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা ও ক্ষেপণাস্ত্র বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইসরাইলকে বাঁচাতে এত পরিমাণ থার্ড ব্যয় হওয়ায় আমেরিকার বৈশ্বিক নিরাপত্তা অবস্থান নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে। পেন্টাগনের ২০২৩ সালের বাজেট অনুমান অনুযায়ী, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র মাত্র ১১টি নতুন থার্ড ভাণ্ডারে যুক্ত করতে পেরেছে। আর এই অর্থবছরে আরও মাত্র ১২টি থার্ড ভাণ্ডারে যুক্ত হওয়ার কথা রয়েছে।

এ থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়, যুদ্ধে ইসরাইলের পক্ষ নিয়ে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। উল্টো নিজেদের প্রতিরক্ষার অন্যতম হাতিয়ার থার্ডের বেশিরভাগই খরচ করে ফেলেছে যুক্তরাষ্ট্র। এই পরিস্থিতিতে নতুন কোনো যুদ্ধ বাধলে যুক্তরাষ্ট্র নিজেই থার্ডের অভাবে নিরাপত্তা সংকটে পড়তে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
 

শেখ ফরিদ 

আরো পড়ুন  

×